মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: ৩ (জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস, আলবার্তো রদ্রিগুয়েজ)
কেরল ব্লাস্টার্স: ২ (খেসুস জিমেনেজ, মিলোস দ্রিনচিচ)
কলকাতা: লিগ টেবিলে দশম স্থানে থাকা কেরল ব্লাস্টার্স-এর কাছে প্রায় হারতে হারতে জিতল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ম্যাচের ৮৬ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিল ১-২ গোলে। শেষ পর্যন্ত পরিত্রাতার ভূমিকায় নামলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস জেসন কামিংস, আলবার্তো রদ্রিগুয়েজ। অবশেষে কেরল ব্লাস্টার্সকে ৩-২ গোলে হারিয়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী থাকল লিগ টেবিলের শীর্ষে।
কেরল এ দিন মোহনবাগানকে বেশ চাপে রেখেছিল। তাদের আগ্রাসী ফুটবলের কাছে বেশ পিছিয়েই গিয়েছিল মোহনবাগান। আগ্রাসী ফুটবলই ম্যাচের ৮৬ মিনিট পর্যন্ত মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তাদের ২-১ গোলে এগিয়ে রেখেছিল। প্রথম গোল মোহনবাগানই করে, ম্যাচের ৩৩ মিনিটে। প্রথমার্ধে কেরল আপ্রাণ চেষ্টা করে গোল শোধ করার। কিন্তু পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ ও ৭৭ মিনিটে দু’টি গোল করে এগিয়ে যায় কেরল। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। ম্যাচের শেষ ১০ মিনিটের খেলা তাদের ভাগ্যে বিপর্যয় ডেকে আনল।
আর প্রতিপক্ষের দাপটে পিছিয়ে থেকেও যে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নেওয়া যায় তা প্রমাণ করে দিল মোহনবাগান। ম্যাচের শেষ দশ মিনিটের মধ্যে পর পর দু’টি গোল করে ব্লাস্টার্সের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নিল গত বারের লিগশিল্ডজয়ীরা।
পেত্রাতোস আর কামিংস-এর যুগলবন্দিতে দ্বিতীয় গোল। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
প্রথমার্ধে মোহনবাগান ১-০ এগিয়ে
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে যে গোল করে এগিয়ে যায় সবুজ-মেরুন তার জন্য অনেকটাই দায়ী কেরলের গোলকিপার শচীন সুরেশ। কেরলের বক্সের বাইরে থেকে গোল লক্ষ্য করে আশিস রাই যে জোরালো শট নেন তা শচীন আটকান, কিন্তু সামনেই ছ’গজের বক্সের মধ্যে জেমি ম্যাকলারেন যে সম্পুর্ণ অরক্ষিত আছেন তা দেখেও বল দখলে রাখতে পারেননি। শচীনের কাছ থেকে ছিটকে আসা বল জালে জড়াতে কোনো ভুলচুক করেননি অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার। মোহনবাগান এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৪ গোল
দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটের মাথায় এক ছোট্ট ভুল করেন মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কায়েথ। আর তারই খেসারত দেয় তারা। প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড় কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও লম্বা শটে বল ক্লিয়ার না করে বক্সের বাইরে শুভাশিসের কাছে বল পাঠিয়ে দেন বিশাল। শুভাশিস কোনোরকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু বল চলে যায় কেরলের স্পেনীয় ফুটবলার খেসুস জিমেনেজের কাছে। তাঁর শট মোহনবাগানের জালে জড়িয়ে যায়। ম্যাচের ফল দাঁড়ায় ১-১।
ম্যাচের ৭৭ মিনিটে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় কেরল। আদ্রিয়ান লুনার দূরপাল্লার ফ্রি-কিক বিশালের হাত ফসকে ঢুকে যায় মোহনবাগানের গোলে।
জয়ের পরে মোহনবাগানের উল্লাস। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
এর পর জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকে মোহনবাগান। এবং তার প্রথম ফল পায় ম্যাচের ৮৬ মিনিটে। শুভাশিস বাঁ দিকের উইংয়ে আশিক কুনিয়ানকে বল দিলে তিনি বক্সের মধ্যে থাকা দিমিত্রি পেত্রাতোসের কাছে তা পাঠিয়ে দেন। কেরলের গোল লক্ষ্য করে দিমিত্রি যে শট নেন তা জেসন কামিংসের পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়।
কেরলের সমর্থকরা যখন ভাবছেন অন্তত ১ পয়েন্ট নিয়ে তাঁরা ফিরবেন, ঠিক সেই সময়ে ম্যাচে জয়সূচক গোল করেন মোহনবাগানের আলবার্তো রদ্রিগুয়েজ। অতিরিক্ত সময়ের ৫ মিনিটের মাথায় সোজা কেরলের গোল লক্ষ্য করে যে শট নেন তিনি তা বাঁচানোর সাধ্য ছিল না শচীনের। বাগান শেষ পর্যন্ত জিতে যায় ৩-২ গোলে।
লিগ টেবিলে কে কোথায়
শনিবার বেঙ্গালুরুর শ্রীকান্তিরাবা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে এফসি গোয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে বেঙ্গালুরু এফসি লিগ টেবিলে শীর্ষ স্থান দখল রাখার লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেল। ১১ ম্যাচ থেকে ২৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করে মোহনবাগান শীর্ষে থাকল। আর ১২ ম্যাচ থেকে ২৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করে বেঙ্গালুরু রইল দ্বিতীয় স্থানে। তৃতীয় স্থানে রইল ওড়িশা এফসি। ১২ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১৯ পয়েন্ট। এফসি গোয়া ১১ ম্যাচ থেকে ১৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও ওড়িশার থেকে গোলপার্থক্যে পিছিয়ে থাকার জন্য তারা রইল চতুর্থ স্থানে। আর কেরল দশম স্থানেই থাকল। ১২ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট।