মোহনবাগান এসজি: ৩ (গ্রেগ স্টুয়ার্ট, মনবীর সিংহ, জেসন কামিংস) পঞ্জাব এফ সি: ৩ (লুকা মাজসেন, ফিলিপ, এজেকিয়েল ভিদাল)
(টাইব্রেকারে মোহনবাগান ৬-৫ গোলে জয়ী)
জামশেদপুর: গোলের বন্যা। একটা-দুটো নয়, ছ’-ছ’টা গোল। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ৩-৩। শেষ পর্যন্ত খেলা গেল টাইব্রেকারে। মোহনবাগান জিতল গোলকিপার বিশাল কায়েথের সৌজন্যে। ৬-৫ গোলের ব্যবধানে তারা হারাল পঞ্জাব এফসিকে। পৌঁছে গেল ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে। মঙ্গলবার কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগান মুখোমুখি হবে বেঙ্গালুরু এফ সি-র।
শুক্রবার জামশেদপুরে কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগান বনাম পঞ্জাব ম্যাচ রীতিমতো নাটকীয়তায় ভরা ছিল। ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটে খেলার ফলাফল ছিল ৩-৩। প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায় পঞ্জাব। তার পর ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। তার পর ম্যাচ ২-২ করে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় পঞ্জাব। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ফল ৩-৩ করে পেনাল্টি শুট-আউটে নিয়ে যায় মোহনবাগান এবং গোলকিপার বিশাল কায়েথের দক্ষতায় জয়ী হয়।
প্রথমার্ধে ১-১
এদিন মোহনবাগানের কোচ খোসে মোলিনা প্রথম একাদশে দিমিত্রি পেত্রাতোস, মনবীর সিংহ এবং জেসন কামিংসকে রাখেননি। সামনে সুহেল ভাটের সঙ্গে রাখা হয়েছিল গ্রেগ স্টুয়ার্টকে। আর ছিলেন দীপেন্দু বিশ্বাস। খেলা দেখে মনে হচ্ছিল মোহনবাগানের লক্ষ্য প্রতি-আক্রমণে গোল করার। কিন্তু সেই কৌশল কাজে লাগেনি। ম্যাচের ১৭ মিনিটের মাথায় গোল করে এগিয়ে যায় পঞ্জাব। লুকা মাজসেনের পাস পেয়ে মোহনবাগানের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন বিনীত রাই। কিন্তু তাঁকে ফাউল করেন আলবার্তো। পেনাল্টি থেকে গোল করে পঞ্জাবকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন লুকা।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে মোহনবাগান। লিস্টন কোলাসো, সাহেল দু’জনেই চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে সফল হয় মোহনবাগান। লিস্টন কোলাসো বাঁ দিক থেকে ঢুকে নিখুঁত পাস বাড়ান গ্রেগ স্টুয়ার্টকে। পঞ্জাবের গোল লক্ষ্য করে স্টুয়ার্ট যে শট নেন তা সুহেলের পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। প্রথমার্ধে খেলার ফল ১-১ থাকে।
প্রথমার্ধে কিন্তু মোহনবাগানের আক্রমণ অনেক বেশি ছিল। ৬৫% বল দখলে ছিল মোহনবাগানের। তারা পঞ্জাবের গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিল ৬টা, তার মধ্যে গোলমুখী ছিল ২টি। আর ৩৫% বল দখলে ছিল পঞ্জাবের। তারা মোহনবাগানের গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিল মাত্র ২টি, তার মধ্যে গোলমুখী ছিল ১টি।
গোল করার পরে গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও সুহেল। ছবি সৌজন্যে ডুরান্ড কমিটি।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৪ গোল
বিরতির পর দলে তিনটি বদল আনেন মোলিনা। রক্ষণভাগে নামান শুভাশিস বসুকে আর আক্রমণে নামান জেসন কামিংস এবং মনবীর সিংকে। ফল মেলে হাতেনাতে। দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটের মধ্যে গোল করে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। সাহালের পাস থেকে বল পেয়ে পঞ্জাবের বক্সে ঢুকে গোলকিপারের ডান দিক দিয়ে সেই বল জালে জড়িয়ে দেন মনবীর।
মিনিটপনেরো মোহনবাগান তাদের এগিয়ে যাওয়া ধরে রাখতে পেরেছিল। ৬৩ মিনিটের মাথায় এবার সমতা ফেরায় পঞ্জাব। এজেকিয়েল ভিদাল ফিলিপকে পাস দেন। মোহনবাগানের বক্সের ঠিক সামনে থেকে জোরালো শটে বিশালকে পরাস্ত করেন ফিলিপ।
মিনিটআষ্টেক কাটতে না কাটতেই ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় পঞ্জাব। এ ক্ষেত্রে পুরোটাই মোহনবাগানের রক্ষণভাগের দোষ ছিল। আগের গোল ভিদালের সাহায্যে করেছিলেন ফিলিপ। এবার ঘটল তার উল্টো। ফিলিপ বল নিয়ে ডান দিক থেকে ঢুকে পাস দেন বাঁ দিকে অরক্ষিত ভিদালকে। ভিদাল বল পেয়ে আশিস রাইকে কাটিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে গোল করেন।
শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান সমতা ফেরায় ম্যাচের ৭৯ মিনিটে। বাঁ দিক থেকে আসা একটি ক্রস দ্বিতীয় পোস্টের কাছে থাকা মনবীর হেড করে নামিয়ে দেন জেসন কামিংসের উদ্দেশে। কামিংস সেই বল বুকে রিসিভ করে বাঁ পায়ের শটে পঞ্জাবের গোলকিপারকে পরাস্ত করেন। ম্যাচের ফল দাঁড়ায় ৩-৩।
জয়ের পরে মোহনবাগান। ছবি সৌজন্যে ডুরান্ড কমিটি।
ফয়সালা পেনাল্টি শুট-আউটে
প্রথমে পঞ্জাবকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন বিনীত রাই। মোহনবাগানের কামিংস মিস করেন। মোহনবাগান পিছিয়ে থাকে ০-১ গোলে।
এর পর ভিদাল পঞ্জাবের হয়ে গোল করেন আর মোহনবাগানের মনবীরও গোল করেন। মোহনবাগান পিছিয়ে থাকে ১-২ গোলে।
তৃতীয় শুট-আউট। পঞ্জাবের হয়ে গোল করেন বাকেঙ্গা। মোহনবাগানের হয়ে গোল করেন কোলাসো। মোহনবাগান পিছিয়ে থাকে ২-৩ গোলে।
এবার ফিলিপ গোল করেন পঞ্জাবের হয়ে আর পেত্রাতোস গোল করেন মোহনবাগানের হয়ে। মোহনবাগান পিছিয়ে থাকে ৩-৪ গোলে।
পঞ্চম কিক। পঞ্জাবের নভসেলেকের শট বাঁচিয়ে দেন বিশাল। কিন্তু মোহনবাগানের গ্রেগ স্টুয়ার্ট পঞ্জাবের গোলে বল জড়িয়ে দেন।
৫টি করে কিকের শেষ ম্যাচের ফল দাঁড়ায় ৪-৪।
আবার শুরু পেনাল্টি শুট-আউট। ষষ্ঠ শটে গোল করেন পঞ্জাবের মেলরয় এবং মোহনবাগানের শুভাশিস। ম্যাচের ফল দাঁড়ায় ৫-৫।
এর পর পঞ্জাবের ধনচন্দ্র মেইতেইর শট আবার বাঁচিয়ে দেন বিশাল, কিন্তু আলবার্তো গোল করেন মোহনবাগানের হয়ে। ফলে মোহনবাগান জিতে যায় ৬-৫ গোলে।
টাইব্রেকারের প্রথম দিকে বারবার ভুল দিকে ঝাঁপাচ্ছিলেন মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল। কিন্তু শেষদিকে দু’টি শট বাঁচিয়ে এদিনের ম্যাচে নায়ক হয়ে গেলেন তিনি।
আরও পড়ুন
ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল যুবভারতীতেই, পুলিশের সবুজ সংকেত