বেঙ্গালুরু এফসি: ৩ (এডগার মেনডেজ, সুরেশ সিং ওয়াংজাম, সুনীল ছেত্রী)
মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট: ০
বেঙ্গালুরু: আইএসএল-এ এত খারাপ সূচনা মোহনবাগানের আগে কখনও হয়েছে বলে মনে পড়ে না। এর আগে আইএসএল-এর ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ মরশুমে তারা প্রথম ৩টি ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট ঘরে তুলেছিল। এবার প্রথম তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট ঘরে এল – ১টি জয়, ১টি ড্র এবং ১টি হার। শনিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসির কাছে ৩-০ গোলে হারল মোহনবাগান। আর এইদিনেই আইএসএলে নজির গড়লেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেওয়া চল্লিশোত্তীর্ণ সুনীল ছেত্রী। শনিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করে আইএসএল-এ সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গেলেন।
দলের আক্রমণভাগ যতটাই মাথাভারী, ঠিক ততটাই অগোছালো সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের রক্ষণভাগ। দলের প্রধান কোচ হোসে মোলিনার রীতিমতো চিন্তার জায়গা দলের রক্ষণব্যবস্থা। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেড দেখিয়ে দিয়েছিল মোহনবাগানের রক্ষণভাগের হাল। আর শনিবার বেঙ্গালুরু এফসি একেবারে বেআব্রু করে দিল এই রক্ষণভাগকে। বাগান সমর্থকদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কাইথকে। আজ তিনি না থাকলে বাগান আরও বেশি গোল খেত।
বেঙ্গালুরুর তিন হিরো – সুনীল ছেত্রী, সুরেশ সিং ওয়াংজাম এবং এডগার মেনডেজ। ছবি Indian Super League ‘X’ থেকে নেওয়া।
৫১ মিনিটের মধ্যে ৩ গোল
গত আইএসএলে ঘরের মাঠে মোহনবাগানের কাছে চার গোলে হেরেছিল নীল-বাহিনী। শনিবার সেই হারের বদলা নিল তারা। গোড়া থেকেই রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলতে থাকে বেঙ্গালুরু এবং তার ফলও মিলে যায় ম্যাচের ৯ মিনিটে। কর্নার থেকে সরাসরি গোল করেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এডগার মেনডেজ।
ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় এগিয়ে থাকার ব্যবধান বাড়ান সুরেশ সিং ওয়াংজাম। ডান দিক ধরে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন মেনডেজ। মোহনবাগানের বক্সের কাছাকাছি পৌঁছে নিচু ক্রস বাড়ান। ছুটতে থাকা সুনীল ছেত্রী তা ধরতে না পারলেও তাঁর পায়ে লেগে বল চলে যায় সুরেশ সিংহ ওয়াংজামের দিকে। সম্পূর্ণ অরক্ষিত সুরেশ জোরালো শটে বিশালকে পরাস্ত করেন। বিরতিতে বেঙ্গালুরু ২-০ গোলে এগিয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ার্ধে ৬ মিনিটে অর্থাৎ ম্যাচের ৫১ মিনিটে মোহনবাগানকে তৃতীয় গোল দিয়ে এগিয়ে থাকার ব্যবধান আরও বাড়ায় বেঙ্গালুরু। সেই রক্ষণের ভুলেই গোল খেয়ে যায় মোহনবাগান। বল পেয়ে মোহনবাগানের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মেনডেজ। তাঁকে বাধা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন দীপেন্দু। কিন্তু মেনডেজের জার্সি ধরে ফেলে ফাউল করে বসেন তিনি। রেফারি পেনাল্টি দিতে কোনো দ্বিধা করেননি। পেনাল্টি শটে বিশালকে পরাস্ত করে আইএসএলে নিজের ৬৪তম গোলটি করেন সুনীল। শেষ পর্যন্ত তিন গোলেই জিতে যায় বেঙ্গালুরু।
সাংবাদিক সম্মেলনে মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা। ছবি Indian Super League ‘X’ থেকে নেওয়া।
লিগ টেবিলে বেঙ্গালুরু শীর্ষস্থানে, মোহনবাগান ৬ নম্বরে
দু’সপ্তাহ আগে ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে হারিয়েছিল বেঙ্গালুরু এফসি। সে দিন এক গোলে জিতেছিল তারা। কিন্তু শনিবার ঘরের মাঠে তারা কলকাতার আর-এক প্রধান এবং খাতায়-কলমে আরও শক্তিশালী দল মোহনবাগান এসজি-কে হারাল ৩-০ গোলে। এর মাঝেই হায়দরাবাদ এফসি-কেও তারা হারিয়েছে তিন গোলে। এবারের আইএসএল-এ শুরুতেই ‘ক্লিন শিট’ রয়েছে বেঙ্গালুরুর – প্রথম ৩টি ম্যাচেই জয়। গতবারে লিগ তালিকায় দশ নম্বরে থাকা দলটি এবার ৩ ম্যাচ থেকে ৯ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষস্থানে চলেগেল।
অন্যদিকে, মরশুমের প্রথম হারের ফলে চার পয়েন্ট নিয়ে ছ নম্বরে নেমে এল গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এফসি। তারা এখন কলকাতার আর-এক প্রধান মহমেডান স্পোর্টিং-এর চেয়েও একধাপ নীচে নেমে রয়েছে।
আইএসএলে মোহনবাগানের পরবর্তী ২টি ম্যাচই কলকাতা ডার্বি। প্রথম ডার্বি ৫ অক্টোবর মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে। পরের ডার্বি অর্থাৎ মোহনবাগানের পঞ্চম ম্যাচ ১৯ অক্টোবর, স্বাভাবিকভাবেই ইস্টবেঙ্গল এফসি-র বিরুদ্ধে। হাতে অনেকটাই সময় পাবেন কোচ হোসে মোলিনা। দেখা যাক, ততদিনে তিনি দলের রক্ষণভাগের দুর্বলতার কিছু দাওয়াই দিতে পারেন কি না।মোহনবাগান যে এদিন সবদিক থেকেই যে বেঙ্গালুরুর চেয়ে পিছিয়ে ছিল, ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে তা স্বীকার করে নেন সবুজ-মেরুন কোচ হোসে মোলিনা।
আরও পড়ুন
আইএসএল: প্রাক্তনী বোরহা হেরেরার হ্যাটট্রিকে হারের হ্যাটট্রিক ইস্টবেঙ্গলের