মুম্বই সিটি এফসি: ৩ (লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে, নিকোস কারেলিস ২)
ইস্টবেঙ্গল এফসি: ২ (সহিল পানোয়ার আত্মঘাতী, ডেভিড লাললানসাঙ্গা)
কলকাতা: প্রথমার্ধের দুটি গোলে এগিয়ে যায় মুম্বই এফসি। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফিরে এসে খেলায় যখন সমতা ফেরায় ইস্টবেঙ্গল এফসি, তখন ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষ হতে আর সাত মিনিট বাকি। হারা ম্যাচ ড্র করে মুম্বইয়ের কাছ থেকে এক পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে লাল-হলুদ সমর্থকরা যখন প্রায় নিশ্চিন্ত, ঠিক সেই সময়ে বাজিমাত মুম্বইয়ের। ইস্টবেঙ্গলকে তার ঘরের মাঠে হারানোর রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখল মুম্বই সিটি এফসি।
সোমবার কলকাতার সল্ট লেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত আইসিএল-এর ম্যাচে মুম্বইয়ের কাছে ২-৩ গোলে হেরে লিগ টেবিলে একাদশ স্থানে থাকল ইস্টবেঙ্গল। ১৪ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১৪ পয়েন্ট। আর ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ১৪ ম্যাচ থেকে ২৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে মুম্বই চলে এল পঞ্চম স্থানে।
এ দিন ইস্টবেঙ্গল মরিয়া লড়াই চালায় মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে। এ দিনের ম্যাচে প্রথমার্ধ যদি হয় মুম্বই সিটি এফসি-র, তা হলে দ্বিতীয়ার্ধ অবশ্যই ইস্টবেঙ্গলের। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাই কোণঠাসা থাকলেও মুম্বইকে গোল করা থেকে ঠেকিয়ে রেখেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সেই অর্ধের শেষ দিকে মাত্র চার মিনিটের মধ্যে ব্যবধান দুটি গোল খেয়েও (৩৯ মিনিটে লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে ও ৪৩ মিনিটে নিকোস কারেলিস) হাল ছাড়েনি তারা।
ম্যাচের একটি মুহূর্ত।
প্রথমার্ধে মুম্বইয়ের ২টি গোল
ম্যাচের ৩৯ মিনিটের মাথায় ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ মুম্বইয়ের বক্সের দিকে যে পাস বাড়ান, তা ধরে বক্সে ঢুকে ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন গিলকে পরাস্ত করে লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে দূরের পোস্টের দিকে বল ঠেলে দেন। বল পোস্টে লেগে গোলে ঢুকে যায়। মুম্বই এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
চার মিনিট পরেই আবার গোল। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে গ্রিক ফুটবলার নিকোস কারেলিস শট নেন, যা প্রথমে আটকে দেন গিল। কিন্তু গিলের হাত থেকে বল ছিটকে আসে সেই কারেলিসের কাছে এবং কারেলিসও ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দিতে কোনো ভুল করেননি। প্রথমার্ধে মুম্বই এগিয়ে থাকে ২-০ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৩ গোল
দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল অভাবনীয় লড়াই চালায়। এবং তারই ফলশ্রুতি হিসাবে দুটি গোলও পেয়ে যায় তারা (৬৬ মিনিটে সহিল পানোয়ারের আত্মঘাতী এবং ৮৩ মিনিটে ডেভিড লাললানসাঙ্গা)।
গোল করে উল্লাস লাললানসাঙ্গার।
ইস্টবেঙ্গলের চাপ ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে এবং ৬৬ মিনিটের মাথায় তারা গোল পায়। বাঁ দিক দিয়ে উঠে আসা নাওরেম মহেশের শট মুম্বইয়ের গোলকিপার টিপি রেহনেশের হাত থেকে ছিটকে বল চলে আসে ইস্টবেঙ্গলের পি ভি বিষ্ণুর পায়ে। বিষ্ণুর পাঠানো শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলের জালেই জড়িয়ে দেন মুম্বইয়ের ডিফেন্ডার সহিল পানওয়ার।
এর পর ম্যাচের ৮৩ মিনিটে সমতা ফেরায় লাল-হলুদ। ৮২ মিনিটের মাথায় দুরূহ কোণ থেকে দিয়ামানতাকোস যে গোলমুখী শট নেন তা রেহনেশ কর্নারের বিনিময়ে বিপন্মুক্ত করার করেন। মুম্বইয়ের বক্সের বাইরে কর্নার শট পেয়ে যান লালচুঙনুঙ্গা। তাঁর ভলি বক্সের সামনে গিয়ে পড়লে হেক্টর ইউস্তে তা হেড করে পাঠিয়ে দেন গোলের ডান দিকে থাকা ডেভিড লাললানসাঙ্গার কাছে। লাললানসাঙ্গা নিখুঁত মাপা শটে দূরের পোস্টের দিক দিয়ে বল গোলে পাঠান। ম্যাচে সমতা (২-২) ফেরায় মশাল বাহিনী।
কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মুম্বইয়ের হয়ে এ দিনের ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেন কারেলিস ৮৭ মিনিটে। এই গোল খাওয়ার জন্য স্বচ্ছন্দে দায়ী করা যায় লাল-হলুদ বাহিনীর ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরকে। তাঁরই ভুলে ইস্টবেঙ্গলের এ দিনের লড়াই ইতিবাচক হল না। রক্ষণভাগকে ফাঁকা রেখে দেওয়ার দায় তো এড়াতে পারেন না হিজাজি। ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখনের পাস দিয়ে গোলে বল ঠেলে দেন গ্রিক ফরোয়ার্ড। হতাশা গ্রাস করে মশাল বাহিনীর সমর্থকদের।
ম্যাচের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলেছেন সঞ্জয় হাজরা।