স্পেন: ২ (দানি ওলমো, মিকেল মেরিনো) জার্মানি: ১ (ফ্লোরিয়ান ভির্ৎজ)
খবর অনলাইন ডেস্ক: এবারেও হল না। ইউরোতে শেষবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৯৬-তে। আয়োজক দেশ হিসাবে এবারে আশা করা হয়েছিল জার্মানি হয়তো ট্রফি আনবে ঘরে। সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসাবে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা যে ৪টি দেশকে বেছে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল জার্মানি। কিন্তু জার্মানির আশাভঙ্গ করল গত ইউরো কাপের সেমিফাইনালিস্ট স্পেন। এবারের ইউরোতে টানা ৫টি ম্যাচ জিতল স্পেন।
শুক্রবার রাতে (ভারতীয় সময়) স্টুটগার্ট আরেনায় আয়োজিত ম্যাচে স্পেন ২-১ গোলে হারাল জার্মানিকে। প্রথমার্ধ গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় গোড়ার দিকে গোল করে এগিয়ে যায় স্পেন। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের সামান্য আগে সমতা ফেরায় জার্মানি। ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গড়ায়। সেই অতিরিক্ত সময়ের মাত্র দু’ মিনিট বাকি থাকতে গোল করে বাজিমাত করে স্পেন।
প্রথমার্ধ গোলশূন্য
ম্যাচের ২ মিনিটে প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে প্রথম শট নেয় স্পেন। নিকো উইলিয়ামস বল নিয়ে আলবারো মোরাতাকে দেন। মোরাতা তা পাস করেন পেদ্রিকে। পেদ্রি যে শট নেন তা সহজেই ধরে নেন জার্মান গোলকিপার মানুয়েল নয়ার। জার্মানরা একটু আগ্রাসী ফুটবল খেলতে থাকে। জার্মান মিডফিল্ডার টোনি ক্রুস এমন ভাবে বাধা দেন পেদ্রিকে যে পেদ্রি ম্যাচের ৮ মিনিটে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন।
ম্যাচের ১০ মিনিটে সুযোগ পায় জার্মানি। স্পেনের বক্সের বাইরে বল পান কাই হাভার্ৎজ। তিনি পাস বাড়ান বাঁদিকে থাকা ডাভিড রাউমকে। রাউম যে শট নেন তা সরাসরি স্পেনের গোলকিপার উনাই সিমনের হাতে চলে যায়। ১৪ মিনিটে সেট পিস থেকে গোল করার সুযোগ পেয়েছিল স্পেন। জার্মানির বক্সের ঠিক বাইরে থেকে লামিনে ইয়ামাল যে ফ্রি-কিক নেন তা জার্মানির গোলের বেশ দূর দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের ২১ মিনিটে জার্মানি দারুণ সুযোগ পেয়েছিল গোল করার। হাভার্ৎজ অনেকটা লাফিয়ে যশুয়া কিমিশের ক্রসে মাথা ছোঁয়ান। সেই হেড স্পেনের গোলে ঢোকার মুখে সিমন নিচু হয়ে বলটি ধরে ফেলেন। গোল পেল না জার্মানি। এভাবেই দু’ পক্ষই গোল করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ৩৬ মিনিটে উইলিয়ামস জার্মানির বক্সে ঢুকে দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোল লক্ষ্য করে যে শট নেন তা নয়ার ধরে ফেলেন। ২ মিনিট পরে ওলমো ২৫ গজ দূর থেকে জার্মানির গোল লক্ষ্য করে যে শট নেন নয়ার তা বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ধরে ফেলেন। প্রথমার্ধ গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হয়। বলের দখলদারিতে দু’ পক্ষই সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছে।
গোল করার পরে মিকেল মেরিনো। মেরিনো। ছবি UEFA EURO 2024 ‘X’ handle থেকে নেওয়া।
দ্বিতীয়ার্ধে এগোল স্পেন, সমতা ফেরাল জার্মানি
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার ২ মিনিটের মধ্যেই জার্মানির ঠিক গোলের সামনে দলের অধিনায়ক মোরাতাকে পেয়ে যান ইয়ামাল। ইয়ামালের কাছ থেকে বল পেয়ে মোরাতা যে শট নেন তা জার্মানির ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ১ মিনিট পরেই জার্মানি সুযোগ পায়। স্পেনের বক্সে কিমিশের কাছ থেকে বল পেয়ে রবার্ত আন্দ্রিখ যে শট নেন তা গোলের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়।
ম্যাচের ৫১ মিনিটে গোল পেয়ে যায় স্পেন। এটা ছিল দলগত প্রচেষ্টা। অবশেষে বল পান ইয়ামাল। ইয়ামালের কাছ থেকে নিখুঁত পাস পেয়ে ওলমো ১৫ মিটার দূর থেকে যে শট নেন তা নিচু হয়ে গোলের কোণ দিয়ে ঢুকে যায়। গোল করে আরও চাপ বাড়ায় স্পেন। ৫৯ মিনিটে প্রায় দ্বিতীয় গোল করে ফেলেছিল তারা। ওলমো স্কোয়ার পাস বাড়ান উইলিয়ামসের উদ্দেশে। উইলিয়ামস জার্মানির গোলের সামনে এসে যে শট নেন তা ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুদিগার ক্লিয়ার করে দেন।
একটু চাপে থাকার পর জার্মানিও আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে ম্যাচে সমতা ফেরানোর। ৬৯ মিনিটে দুর্দান্ত সেভ করে নিজের দলকে গোল খাওয়া থেকে বাঁচান স্প্যানিশ গোলকিপার সিমন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৮৯ মিনিটে গোল শোধ করে জার্মানি। দলগত মুভমেন্টের পরে কিমিশ হেড করেন ফ্লোরিয়ান ভির্ৎজের উদ্দেশে। ২১ বছরের ভির্ৎজ তাঁর গড়ানে শটে পরাস্ত করেন স্পেনের গোলকিপারকে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পরে যে অতিরিক্ত ৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল সেই সময়েও গোল করার বারদুয়েক সুযোগ পেয়েছিল জার্মানি, কিন্তু কাজ হয়নি। ম্যাচ গড়াল ৩০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে।
খেলা শেষের ২ মিনিট আগে জয়সূচক গোল স্পেনের
অতিরিক্ত সময়ে দু’ পক্ষ সমানে সমানে পাল্লা দেয়। ৯ মিনিটের মাথায় সুযোগ পায় জার্মানি। স্পেনের গোলের দিকে ছুটতে থাকা প্রবীণ ফুটবলার থমাস মুলারকে পাস বাড়ান সতীর্থ খেলোয়াড়। কিন্তু স্পেনের মার্ক কুকুরেয়া ততোধিক জোরে ছুটে এসে বল ক্লিয়ার করে দেন। ৪ মিনিট পরে স্পেনের মিকেল ওয়ারখাবেলের শট দুরের পোস্টের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ১ মিনিট পরেই জার্মানির সুযোগ। ভির্ৎজের বাঁ পায়ের শট প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট ঘেঁষে নিচু হয়ে বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে কোনো গোল হয় না।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার ২ মিনিট পরে জামাল মুসিয়ালার শট কুকুরেয়ার হাত লাগলে জার্মানি পেনাল্টির আবেদন জানায়। রেফারি সেই আবেদনে সাড়া দেননি। ৮ মিনিটে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন স্পেনের ওয়ারখাবেল। ১২ মিনিটে নিকলাস ফুলক্রুগের জন্য স্পেনের বক্সে ক্রস বাড়ান কিমিশ। বলে হেড দেওয়ার জন্য ফুলক্রুগ লাফিয়ে উঠলে স্পেনের গোলকিপারও উঠে বল বার করে দেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে দানি ওলমোর কাছ থেকে দুর্দান্ত বল পান স্পেনের পরিবর্ত খেলোয়াড় মিকেল মেরিনো। দুর্দান্ত হেডে পরাস্ত করেন জার্মানির গোলকিপার নয়ারকে। স্পেন এগিয়ে যায় ২-১ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে ৩ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। কিমিশের বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করার চেষ্টা করেন ফুলক্রুগ। অল্পের জন্য রক্ষা পায় জার্মানি। দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন স্পেনের দানি কারবাখাল। ম্যাচের শেষ ২ মিনিটের জন্য স্পেন ১০ জনে হয়ে যায়। তাতে অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। শেষ পর্যন্ত জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্পেন চলে ঘেল সেমিফাইনালে।
আরও পড়ুন
কোপা আমেরিকা ২০২৪: মেসির মিস, তবু পেনাল্টি শুট-আউটে একুয়াদোরকে হারিয়ে আর্জেন্তিনা সেমিফাইনালে