ওয়েবডেস্ক: দুর্গাপুজো শেষ হতে না হতেই ফুটবল পার্বণ শুরু। শুক্রবারই ঢাকে কাঠি পড়ে যাবে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে। হোক না অনূর্ধ্ব-১৭, বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই। ইতিমধ্যে দেশে পা রাখতে শুরু করে দিয়েছে দলগুলি।
মঙ্গলবার প্রথম পর্বে গ্রুপ এ, বি এবং সি-এর দলগুলির ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছিল। এ বার নজর রাখব বাকি গ্রুপের দলগুলির ওপরে।
গ্রুপ এফ
(এই গ্রুপে রয়েছে ব্রাজিল, স্পেন, নাইজার এবং উত্তর কোরিয়া)
ব্রাজিল
এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল তিন বারের যুববিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এ বারের দক্ষিণ আমেরিকার যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে অপরাজেয় ছিল দলটি। সাতটি ম্যাচ জিতেছে এবং দু’টো ম্যাচ ড্র করেছে তারা। গোটা টুর্নামেন্টে ২৪টা গোল করেছে তারা আর খেয়েছে মাত্র তিনটে। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই যে তাঁর দল বিশ্বকাপ খেলবে সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কোচ কার্লোস আমাদিউ।
স্পেন
এই গ্রুপে ব্রাজিলের সব থেকে বড়ো চ্যালেঞ্জার এই দলটি। যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বে ইউরোপের সেরা দল হয়ে বিশ্বকাপে উঠেছে এই দলটি। কোচ সান্তিয়াগো দানিয়ার বড়ো ভরসা দলের অধিনায়ক আবেল রুইজ। ইতিমধ্যেই আগামী দিনের তারকা বলা শুরু হয়েছে এই স্ট্রাইকারটিকে। তিন বার রানার্স-আপ দলটি প্রথম বার বিশ্বকাপের মুকুট মাথায় পরতে চাইবে।
নাইজার
এই প্রথম ফিফার কোনো টুর্নামেন্ট খেলছে এই দলটি। নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপের অন্যতম কঠিন গ্রুপে জায়গা পেয়েছে তারা। কিন্তু যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বে যারা নাইজেরিয়ার মতো দলকে হারিয়েছে, তাদের কি খুব একটা হেলাফেলা করা যায়! এই দলের তারকা তাদের কোচ তথা নাইজার দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তিয়োমোগো সুমাইলা। একার হাতেই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দলকে।
উত্তর কোরিয়া
কিম জং উনের দেশের ওপরে কেউই খুব একটা আশা রাখছেন না। ব্রাজিল এবং স্পেনের সঙ্গে কতটা টেক্কা দিতে পারবে সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতে। যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বেও বিশেষ আশাপ্রদ ফল করতে পারেনি তারা। তবুও এই দলের সব থেকে বড়ো ভরসা তাদের মনের জোর।
গ্রুপ ই
(এই গ্রুপে রয়েছে ফ্রান্স, জাপান, হোন্দুরাস এবং নিউ ক্যালিডোনিয়া)
ফ্রান্স
ফুটবলের সুপারপাওয়ার হিসেবে যতই খ্যাতি অর্জন করুক ফ্রান্স, যুব বিশ্বকাপে তাদের রেকর্ড কিছু খুবই সাদামাটা। বেশির ভাগ সময়েই যুববিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি জিনাদিন জিদান, থিয়েরি অঁরির দেশ। তবে ২০০১ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। এ বারও যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বে শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের টিকিট পায় তারা। মোটামুটি সহজ গ্রুপে পড়ায় দ্বিতীয় রাউন্ডে অবশ্য ফ্রান্সের ওঠা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: নজরে বিশ্বকাপ: দেখে নিন দলগুলোর খুঁটিনাটি / প্রথম পর্ব
জাপান
নিঃসন্দেহে এশিয়ার সুপারপাওয়ার। কিন্তু ছোটোদের হোক, কী বড়োদের, বিশ্বকাপে সব সময় ডার্ক হর্স রয়ে গিয়েছে জাপান। যুব বিশ্বকাপেও বারদুয়েক কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছোনো ছাড়া তাদের বিশেষ কোনো কর্তৃত্ব নেই। দল কতটা আক্রমণাত্মক খেলে তার প্রমাণ যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বেই পাওয়া গিয়েছে। পাঁচ ম্যাচে ২৪টা গোল করে তারা। নজর থাকবে তাকেফুসো কুবোর ওপরে। ইতিমধ্যেই তাঁকে ভবিষ্যতের মেসি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
হোন্দুরাস
লাতিন আমেরিকার ফুটবলের সুপারপাওয়ারগুলির কাছে এখনও ‘বামন’ এই হোন্দুরাস। তবে সাম্প্রতিক অতীতে ফুটবলে নজর দিচ্ছে এই দেশ। শেষ যুব বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল তারা। এই দলের প্রাপ্তি তাদের কোচ খোসে ভালাদারেসের মস্তিস্ক। একার হাতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুটবলার তুলে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
নিউ ক্যালেডোনিয়া
ওশেনিয়ার এই দেশটাকে কত জনই বা চেনেন! কিন্তু এরাই ফুটবলের ‘আইসল্যান্ড’ হয়েছে। গত বছর ইওরো কাপ খেলে সবাইকে চমকে দিয়েছিল আইসল্যান্ড। এ বার যুব বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করে ঠিক একই ভাবে সবাইকে চমক করেছে প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্টো এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বে পাপুয়া নিউ গিনি, ভানিয়াতু এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে তারা। তবে ফাইনালে অবশ্য নিউজিল্যান্ড তাদের পিষে ফেলে।
গ্রুপ এফ
(এই গ্রুপে রয়েছে চিলে, মেক্সিকো, ইংল্যান্ড এবং ইরাক)
চিলে
এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল চিলে। তবে এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের রেকর্ড তাদের খুবই সাধারণ। এর আগে মাত্র চার বার বিশ্বকাপ খেলেছিল এই দল। তবে ১৯৯৩ সালে তৃতীয় হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিল লাতিন আমেরিকার এই দেশ। নিজেদের ডিফেন্সের ওপরেই ভরসা রেখে বিশ্বকাপের আসরে নামবে চিলে।
মেক্সিকো
ঐতিহাসিক ভাবে যুব বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল মেক্সিকো। এখনও পর্যন্ত দু’বার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। গত বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে উঠলেও, নাইজেরিয়ার কাছে হেরে যায় তারা। যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বে ছ’ম্যাচে ২২ গোল করেছে মেক্সিকো। ‘গ্রুপ অফ ডেথ’-এ থাকলেও, নিজেদের পারফরমেন্সের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী মেক্সিকো। এর পাশাপাশি খেলোয়াড়দের উদ্বুদ্ধ করবে তাদের দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি। তীব্র ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে নামবে এই দল।
ইংল্যান্ড
যুব বিশ্বকাপে কখনোই সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি ব্রিটিশরা। ২০০৭ সালে প্রথম বার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করে ইংল্যান্ড। সে বারই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিল তারা। তবে এ বার যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্ব থেকে বেশ ভালো ফর্মে রয়েছে ইংল্যান্ড। আক্রমণাত্মক ঢঙেই দলকে খেলানো পচ্ছন্দ কোচ স্টিভ কুপারের।
ইরাক
এশিয়ার অন্যতম সুপারপাওয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটি। তবে যুব বিশ্বকাপে তাদের প্রদর্শন আহামরি কিছু নয়। এর আগে ২০১৩ সালে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছিল এই দেশ। কিন্তু সে বার গ্রুপ পর্বে সবক’টা ম্যাচ হেরে লজ্জাজনক বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের। তবে এ বার আরও বেশি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে নামছে তারা। যোগ্যতাঅর্জনকারী পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইরাক। এখন দেখার মেক্সিকো, চিলে এবং ইংল্যান্ড সমৃদ্ধ ‘গ্রুপ অফ ডেথ’-এ আদৌ কোনো চমক দেখাতে পারে কি না তারা।