শ্রয়ণ সেন ঋভু
এই নিয়ে এগারোয় এগারো। ইডেনের উদ্যানে ৬ উইকেটে জিতে আইসিসি টুর্নামেন্টের ম্যাচে পাকিস্তানের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখল ভারত। পাশাপাশি সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল।
ভয় ছিল সেই কুখ্যাত ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টি-২০ ম্যাচের আরও একবার পুনরাবৃত্তি হওয়ার, যে দিন দুপুরের মাত্র আধ ঘণ্টার বৃষ্টি ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু ব্রিটেন থেকে আনা অত্যাধুনিক পিচ কভার আর নতুন ভাবে সাজানো নিকাশি ব্যবস্থার সৌজন্যে বৃষ্টিকে হারিয়ে ইডেন সাক্ষী থাকল এক মায়াবী রাতের যার মুখ্য ভুমিকায় অমিতাভ বচ্চন আর বিরাট কোহলি।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসকে সত্যি করে বিকেল ৫টা নাগাদ বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি থামার পর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ শুরু হয় ম্যাচ। ম্যাচ শুরুর আগে প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী সম্মানিত করা হয় ভারত-পাক ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের। কিন্তু স্মরণীয় মুহূর্ত তখনও বাকি ছিল। টস জিতে ধোনি বোলিং নেওয়ার কিছু পরেই, সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে মাঠে নামেন দু’দেশের ক্রিকেটাররা, সঙ্গে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, শফকত আমানত আলি আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শফকত আমানত আলির গলায় পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত শেষ হওয়ার পরেই মাইকে ভেসে ওঠে অমিতাভের কণ্ঠ। তাঁর গলায় ‘জন গণ মন’ এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি করে। অমিতাভের সাথে গলা মেলান ইডেনে উপস্থিত ৬৫ হাজার দর্শক।
পাকিস্তানের ইনিংসের প্রথম ওভার নেহরাকে করালেও দ্বিতীয় ওভারেই ধোনি নিয়ে আসেন অশ্বিনকে এবং বল ঘোরা শুরু। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের তখন নাকানিচোবানি অবস্থা। ওপেনাররা আউট না হলেও তাঁদের ব্যাট থেকে কোনও ভাবে রান আসছিল না। রায়নার বলে শারজিল খান আউট হতে নামেন পাক অধিনায়ক শাহীদ আফ্রিদি, যিনি আগের ম্যাচে প্রায় একার হাতেই বাংলাদেশকে দুরমুশ করেছিলেন। কিন্তু আজ তাঁর ব্যাটও কথা বলতে ব্যর্থ। মাত্র ৮ রান করে হার্দিক পাণ্ড্যর শিকার হন আফ্রিদি। পাকিস্তান তখন ১১.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৬০ রান তুলে রীতিমতো ধুঁকছে। একটু ভদ্রস্থ স্কোরের জন্য শেষের মাত্র ৬ ওভারে তখন অন্তত দশ রান করে রান তুলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে হাল ধরেন উমর আকমল আর শোয়েব মালিক। তাঁদের ব্যাটে পাণ্ড্য আর বুমরাহর পর পর দু’ওভারে ২৮ রান আসে। আকমল করেন ১৬ বলে ২২, মালিক করেন ১৬ বলে ২৬। পাকিস্তান তাঁদের নির্ধারিত ১৮ ওভারে করে পাঁচ উইকেটে ১১৮।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। মাত্র ১০ রানে মহম্মদ আমিরের শিকার হন রোহিত শর্মা, ইডেন যাকে কখনও খালি হাতে ফেরায়নি। মহম্মদ সামির বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন শিখর ধাওয়ান। পরের বলেই আবার সামির শিকার রায়না। ভারত তখন ২৩-৩। হুঙ্কার ছাড়ছেন পাক বোলাররা। কিন্তু ঝাপটা সামলে দিয়ে দুর্দান্ত পার্টনারশিপে ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন বিরাট কোহলি আর যুবরাজ সিং। বিরাট আর যুবরাজ মিলে যখন ভারতকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিচ্ছিলেন, আফ্রিদির তখন নিশ্চয়ই মনে হচ্ছিল তাঁর টিম সিলেকশনে ভুল হয়েছে। এক জন পেসারকে কমিয়ে বাঁ হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমকে খেলাতেই পারতেন আফ্রিদি। ওয়াহাব রিয়াজের বলে যুবরাজ যখন আউট হলেন ম্যাচ ভারতের দখলে ততক্ষণে চলে এসেছে। এর পর কোহলি ম্যাচ একার হাতে নিয়ে নিলেন। জয়ের অপেক্ষায় ইডেন তখন উন্মাদনায় ফুটছে। শাহীদ আফ্রিদির বলে এক রান নিয়ে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করলেন কোহলি, ইডেনের হাজার হাজার দর্শক তখন মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে সেই মুহূর্তটি উদযাপনে ব্যস্ত। ষোড়শ ওভারের চতুর্থ বলে মহম্মদ ইরফানের বলে ছক্কা মেরে স্কোর টাই করেন ধোনি। পরের বলেই ধোনির হাত থেকে বেরোয় ম্যাচ জেতানো উইনিং স্ট্রোক। ম্যাচের সেরা কোহলি বলেন, এই পিচটা ব্যাটিং-এর পক্ষে শক্ত ছিল, কিন্তু শক্ত পিচই ব্যাটসম্যানশিপের আসল পরীক্ষা। প্রাথমিক ঝাপটা সামলানোর জন্য যুবরাজেরও ভুয়সী প্রশংসা করেন তিনি। ভারতের পরের ম্যাচ ২৩ তারিখ বাংলাদেশ আর ২৭ তারিখ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।
ছবি: ক্রিকইনফো
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।