খবর
বিজয়-বিরাটের জোড়া শতরানে টেস্টে আধিপত্য কায়েম ভারতের
হায়দরাবাদ: পাটা পিচে টস জিতে ভারত ব্যাটিং করলে কী হবে, তা-ও আবার বাংলাদেশের দুর্বল বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে, তা তো সহজেই অনুমেয়। হলও তাই। তাই দিনের শেষে সংবাদ শিরোনামে ভারতের ব্যাটিং নয়, টসের আগে টিম ম্যানেজমেন্টের নেওয়া একটা সাহসী সিদ্ধান্ত। এই মুহূর্তে কী ভাবছেন করুন নায়ার? কী দোষ করলেন যার জন্য তাঁকে দল থেকে বাদ পড়তে […]

হায়দরাবাদ: পাটা পিচে টস জিতে ভারত ব্যাটিং করলে কী হবে, তা-ও আবার বাংলাদেশের দুর্বল বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে, তা তো সহজেই অনুমেয়। হলও তাই। তাই দিনের শেষে সংবাদ শিরোনামে ভারতের ব্যাটিং নয়, টসের আগে টিম ম্যানেজমেন্টের নেওয়া একটা সাহসী সিদ্ধান্ত।
এই মুহূর্তে কী ভাবছেন করুন নায়ার? কী দোষ করলেন যার জন্য তাঁকে দল থেকে বাদ পড়তে হল। আসলে অধিনায়ক কোহলির তত্ত্ব খুব পরিষ্কার। বছর দুয়েক ধরে দলের প্রধান ব্যাটিং ভরসা ফর্মে থাকতে থাকতেই হঠাৎ করে যদি চোট পেয়ে যান, তাঁর জায়গায় যদি নবাগত কোনো ক্রিকেটার আসেন, তিনি যত রানই করুন না কেন, পুরোনো প্লেয়ারটি ফিরে এলে তিনিই দলে প্রাধান্য পাবেন। করুনকে তাই বসিয়ে রাহানের ওপরই ভরসা রাখলেন কোহলি। অধিনায়কের সেই ভরসার অনেকটা মর্যাদা দিতে পেরেছেন রাহানে।
এ বার একটু খেলার কথায় ফেরা যাক। এ দিন প্রথম ওভারেই টাসকিন আহমেদের বলে রাহুলকে হারায় ভারত। বোলিং-এর গুণ না, নিজের দোষেই বলটা স্ট্যাম্পে ডেকে আনেন তিনি। এই মরশুমে জমাটি পার্টনারশিপ হচ্ছে বিজয় আর পুজারার মধ্যে। এ দিনও তার ব্যাতিক্রম হল না। শুরুর আধঘণ্টা বাঙালি পেস আক্রমণ সামলে নিয়ে পালটা প্রতি-আক্রমণ শুরু করেন তাঁরা। দু’জনের পার্টনারশিপে যখন ১৭৮ রান উঠেছে, জুটিটা ভাঙেন মেহদী হাসান। তাঁর বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পুজারা। তাঁর সংগ্রহ ৮৩। তবে দমেননি বিজয়। শতরানের গণ্ডি পেরোন তিনি। ১০৮ রানে তাইজুল ইসলামের শিকার বিজয়।
বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান রাহানে। শুরুর দিকে কিছুটা আড়ষ্ট ভাব থাকলেও ক্রমে তা কাটিয়ে ওঠেন। উলটো দিকে ইংল্যান্ড সিরিজে যেখানে শেষ করেছিলেন, এখানে যেন সেখান থেকেই শুরু করেন বিরাট। দু’জনের রানের গতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দিনের খেলা শেষ হওয়ার একটু আগে টেস্টে নিজের ১৬তম শতরান পূর্ণ করেন বিরাট।
প্রথম দিনের শেষে তিন উইকেট হারিয়ে ভারতের স্কোর ৩৫৬। ১১১-তে ব্যাট করা বিরাটের সঙ্গে ৪৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন রাহানে।
মুর্শিদাবাদ
Coronavirus Second Wave: কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন রাজ্যের আরও এক প্রার্থী
রাজ্যে কোভিডের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই ভোটগ্রহণ চলছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ এবং রোড শোগুলোতে করোনাবিধি শিকেয় উঠছে।


খবরঅনলাইন ডেস্ক: মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থীর পর এ বার ওই জেলারই জঙ্গিপুর কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী। রাজ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল আরও এক প্রার্থীর। শুক্রবার বিকেলে বহরমপুরের কোভিড হাসপাতালে মৃত্যু হল প্রদীপ নন্দীর। বয়স হয়েছিল ৭২।
প্রদীপবাবুর পরিবার সূত্রে খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন জঙ্গিপুর ৫৮ নম্বর বিধানসভার আরএসপি প্রার্থী এই প্রবীণ রাজনীতিক। সোমবার, ৫ এপ্রিল তাঁর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। তার পর শুক্রবার বিকেলেই প্রদীপের মৃত্যু হয়।
ফলে ৮ দফার চলতি ভোট পর্বের মাঝেই দু’টি আলাদা রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর মৃত্যু হল কেবলমাত্র মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমায়।
শুক্রবার মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত দু’দিন ধরে কোভিড আক্রান্ত ছিলেন প্রদীপবাবু। গুরুতর অসুস্থও ছিলেন। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার বিকেলে তিনি মারা যান।’’
রাজ্যে কোভিডের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই ভোটগ্রহণ চলছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ এবং রোড শোগুলোতে করোনাবিধি শিকেয় উঠছে। ব্যাপক ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে সেখান থেকে। কিন্তু তবুও রাজনৈতিক দলগুলির বিশেষ হুঁশ নেই। এই নিয়ে বার বার সতর্ক করছেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ভোটের মরশুমে সংক্রমণ এড়াতে শুক্রবার বেশ কয়েক দফা নির্দেশিকা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন থেকে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো প্রচার করা যাবে না। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করে দিতে হবে।
এরই মধ্যে প্রাণ গেল দুই প্রার্থীর। এর পর রাজনৈতিক দলগুলি আরও সতর্ক হয় কি না, সেটাই দেখার।
পঞ্চম দফার ভোটের যাবতীয় লাইভ আপডেট পেতে ক্লিক করুন এখানে।
রাজ্য
Bengal Polls Live: শুরু পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ, সংক্রমণের ভয় নিয়েই ভোটের লাইনে জনতা
অশান্তি এবং সংক্রমণ, দুটোয় এড়ানো চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের কাছে।


খবরঅনলাইন ডেস্ক: পঞ্চম দফায় শনিবার সকাল ৭টা বাজতেই শুরু হয়ে গিয়েছে ৪৫ আসনের ভোটগ্রহণ। এর আগে ৪ দফায় রাজ্যের ১৩৫টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। এই দফায় ভোট কালিম্পঙের ১, দার্জিলিঙের ৫ এবং জলপাইগুড়ির ৭ বিধানসভা আসনের সবগুলিতেই। এ ছাড়া উত্তর ২৪ পরগনায় ৩৩টির মধ্যে ১৬, নদিয়ায় ১৭টির মধ্যে ৮ এবং পূর্ব বর্ধমানের ১৬টির মধ্যে ৮ আসনে ভোটগ্রহণ চলছে।
গত শনিবার কলকাতার দক্ষিণ শহরতলীতে ভোটগ্রহণ ছিল, এ বার ভোট চলছে উত্তর শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায়। রাজ্যে প্রথম ৩ দফার ভোট বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ হলেও চতুর্থ দফায় পাঁচটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাই এই দফার ভোটে বাড়তি সতর্ক নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে ভয়াবহ ভাবে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। সেই দিকেই বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে কমিশনকে। পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণের যাবতীয় লাইভ আপডেট দেখে নিন:
=========================================================
***** কামারহাটি এবং রাজারহাট-নিউটাউন কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই বিপত্তি। বেশ কয়েকটি ইভিএম খারাপ।
***** বর্ধমান উত্তর কেন্দ্রে বিজেপি এজেন্ট, কর্মীকে মারধরের অভিযোগ। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
***** ভোট ‘উৎসব’। শিলিগুড়ির একটি বুথকে মডেল বুথ হিসেবে সাজানো হয়েছে। জনতাকে ভোটদানে উৎসাহী করতেই এই ব্যবস্থা।
***** রাজ্যে শুরু হল পঞ্চম দফার ভোটগ্রহণ।
বাংলাদেশ
Mujibnagar Day: ঠিক ৫০ বছর আগের ১৭ এপ্রিল যিনি গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন সেই মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রমের স্মৃতিচারণ
মাহবুব উদ্দিন বলেন, “একাত্তরে সাধারণ মানুষ, আদিবাসী-সহ সকলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আর সেই যুদ্ধ ছিল বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যুদ্ধ।”


ঋদি হক: ঢাকা
আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশের স্বাধীন সরকার গঠিত হয়। সে দিন কলকাতা থেকে গাড়ি-বহর নিয়ে এসে বৈদ্যনাথতলায় শপথ নেন অস্থায়ী সরকারের সদস্যরা। আর এই শপথগ্রহণের মধ্য দিয়েই বিশ্ব জানতে পারে বাংলাদেশের নাম।
করোনা মহামারিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে পালন করা হবে আজকের দিনটি। সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন।
১৭ এপ্রিল ১৯৭১
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক পুলিশ অফিসার। ২৩-২৪ বছরের টগবগে যুবক। তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ প্রশাসক (এসডিপিও)। অস্থায়ী সরকারকে প্রথম গার্ড অব অনার দেন তিনিই।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি। সে দিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। মাথার ওপরে পত পত করে উড়ছে লালসবুজে খচিত বাংলাদেশের পতাকা। সেই পতাকায় সেই টগবগে যুবক দেখতে পান বঙ্গবন্ধুর মুখ। এর পর গার্ড অব অনার দেন তিনি। গর্জে ওঠে তাঁর কন্ঠ। খালি গলার কমান্ডে কেঁপে ওঠে বৈদ্যনাথতলার আকাশ-বাতাস। তিনি, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।
এক ঐশ্বরিক শক্তি ভর করে তাঁর মাঝে। বুটজুতোয় মাটি কাঁপিয়ে চলে গার্ড অব অনার। হাজারো মানুষের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে বৈদ্যনাথতলার চতুর্দিক প্রকম্পিত। তার মধ্যেই মাহবুব উদ্দিনের কমান্ড আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। বিনা মাইকে এমনই কমান্ডের শক্তি কোথা থেকে এল তা আজও তাঁর অজানা। আসলে কারণ তখন তাঁর মনে, তাঁর প্রাণে একটাই ছবি – বঙ্গবন্ধুর মুখ।

স্মৃতির পথ বেয়ে চলে গেলেন পঞ্চাশ বছর আগের মেহেরপুরে। এক যুবক পুলিশ অফিসার। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেন, কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল ‘সে দিনের কমান্ড’? কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন তিনি।
তাঁর গুলশান অফিসে বসে কথা হচ্ছিল।
তার পর? বলুন।
ফের স্মৃতির জানলা খুলে ধরেন প্রায় ৭৪ বছর বয়সি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম। বললেন, “তোমাকে আরও একটি কথা বলা হয়নি। তা হচ্ছে, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হবার পর দিন ১৮ এপ্রিল কলকাতার পার্ক সার্কাসে সার্কাস অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন হাইকমিশন অফিসে প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।”
সেটাই ছিল বিদেশের মাটিতে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন। যার উদ্যোগ নিয়েছিলেন হাইকমিশনের অন্যতম কর্মকর্তা হোসেন আলী। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাঁকে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত করেন। বাংলাদেশের সেই পতাকা উত্তোলনকালেও গার্ড অব অনার-এর দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব উদ্দিন। বললেন, “জানো, এই দু’টো ঐতিহাসিক ঘটনা আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে, সে দিনের ঘটনা।”
১৭ এপ্রিল কলকাতার থিয়েটার রোড থেকে সে দিন গাড়ি-বহর নিয়ে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের সদস্য হিসাবে শপথ নিতে বৈদ্যানাথতলায় এসেছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং কামরুজ্জামান-সহ অন্যরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দেশি-বিদেশি বেশ কিছু সাংবাদিকও।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর দিয়ে এসে বাংলাদেশ সীমান্ত। সেখান থেকে বর্তমান মুজিবনগরের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। এই ধরো সর্বোচ্চ মাইল দু’য়েক বা তার কম হতে পারে, বললেন মাহবুব উদ্দিন।
মাহবুব উদ্দিন বললেন, “এ বারে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদী মুজিবনগর-কৃষ্ণনগরের মধ্যে স্বাধীনতা সড়কটির উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। নতুবা আমি তো অবশ্যই যেতাম।”
স্বাধীনতা সড়কের বাংলাদেশ অংশটি এখন ডাবল লেন করা হয়েছে। নদিয়া ও আশেপাশের মানুষ এখন খুব সহজেই মুজিবনগর আসতে পারবেন এবং জাদুঘর থেকে শুরু করে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন।
আচ্ছা, মুজিবনগর সরকার বা বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, আগে থেকে এমন কোনো তথ্য আপনি জানতেন?
মাহবুবউদ্দিনের কথায়, “তোমাকে তো আগেই জানিয়েছি, আমি তখন তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমায় পুলিশ প্রশাসক (এসডিপিও)। ১৭ এপ্রিল সকালবেলায় খবর পেলাম আমাকে বৈদ্যনাথতলায় যেতে হবে। কারণ সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেবে।
“নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পৌঁছুলাম বৈদ্যনাথতলায়। তাতে খুব একটা সময় লাগেনি। মুক্তাঞ্চল বৈদ্যনাথতলা। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম একটি ছোটো আকারের মঞ্চ। তার উপরে কয়েকটি পুরোনো চেয়ার ও একটি ছোটো টেবিল।
“মঞ্চের এক কোনায় একটা সরু বাশ পোঁতা। মঞ্চ ঘিরে স্থানীয় মানুষের ভিড়। মঞ্চের পাশে প্রহরায় ভারতীয় কমান্ডো বাহিনীর ক’ জন সদস্য। একটু দূরে একটা হারমোনিয়ামে চলছিল জাতীয় সংগীতের রিহার্সেল। হারমোনিয়াম থেকে শুরু করে সব কিছুই সংগ্রহ করা। বেলা তখন ১১টা হবে। গাড়িবহর নিয়ে কলকাতা থেকে নেতৃবৃন্দ বৈদ্যনাথতলায় উপস্থিত হলেন।
“কিছুক্ষণের মধ্যে মঞ্চে আসন নিলেন তাঁরা। এর পর ঘোষণা দেওয়া হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, এম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী প্রধান সেনাপতি।
“অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন টাঙাইলের জননেতা আব্দুল মান্নান, এমএনএ। পরিচয়পর্বের পর শপথবাক্য পাঠ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী, এমএনএ।”
এর পর, এর পর কী হলো বলুন?
স্মৃতির অতলে ডুব দিলেন মাহবুব উদ্দিন। তিনি মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল তার মধ্যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার, বঙ্গন্ধুর মুখ, গণহত্যা ইত্যাদি তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এ বারে সোজা হয়ে বসলেন বীরযোদ্ধা।
“জানো এর পরই আমার পালা। এটিকে জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণই বলব। একটা জাতির ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার-প্রধানকে আমার নেতৃত্বে গার্ড অব অনার প্রদান করা হল। আমি তৃপ্ত হলাম।
“জীবনে আর কোনো দিন এমন করে গর্জে ওঠে কমান্ড দেওয়ার সুযোগও পাব কিনা সন্দেহ। যখন গার্ড অব অনার দিচ্ছিলাম, তখন ক্যামেরার অসংখ্য ফ্লাশ জ্বলে উঠছিল। সেই সঙ্গে হাজারো মানুষের ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠছিল।
“গার্ড অব অনার বিষয়ে তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। গার্ড অব অনার-এর দায়িত্ব পালনের কথা ছিল তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর। অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি। এ সময় হন্তদন্ত হয়ে বন্ধু তৌফিক-ই-এলাহী (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা) এসে বলল, ‘ওসমান ভাই তো আসার কথা ছিল। কিন্তু উনি তো এলেন না। এখন কী করি? গার্ড অব অনার কী করে দেওয়া যায় চিন্তা করো’।
“আমি তাঁকে আশ্বস্ত করে বললাম, তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে বহু গার্ড অব অনার দিয়েছি এবং নিয়েছি। সব ঠিক করে নেবো। এর পর আমি তৎক্ষণিক গার্ড অব অনার-এর ব্যবস্থা করি।”
সেটা কী ভাবে সম্ভব হল?
মাহবুব উদ্দিন বলে চলেন, “আমার সঙ্গে তিন-চারজন পুলিশ কনস্টেবল ছিল। আর আশপাশ থেকে কয়েক জন আনসার এনে কয়েক মিনিটের প্রশিক্ষণ দিলাম। তার পর বলাম আমি প্রস্তুত। এর পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন। পেছনে প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী। মঞ্চের বাঁ দিকে মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহম্মদ। অন্য সবাই মঞ্চের পাশে অপেক্ষা করছেন।
“এ অবস্থায় আমার নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে সামরিক কায়দায় গার্ড অব অনার প্রদান করলাম। প্রেজেন্ট আর্মস করে সৈনিকেরা যখন তাদের রাইফেল ঊর্ধ্বমুখী করে দাঁড়াল তখন আমি হাত তুলে তাঁকে স্যালুট দিলাম। তিনি স্যালুট গ্রহণ করলেন।
“আর সঙ্গে সঙ্গে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বেজে উঠল। এর পর মঞ্চের পাশে সরু বাঁশটিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
“বাতাসে পতাকাটা পতপত করে উড়ছে। সেই পতাকায় দেখতে পেলাম বঙ্গবন্ধুর মুখ। পতাকা উত্তোলনের পর মঞ্চে দাঁড়ালেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। জাতীয় সংগীত শেষে কমান্ড দিয়ে সালাম শেষ হল। রাইফেলধারীদের অস্ত্র নেমে এল ঘাড়ে। আমিও হাত নামালাম। কুইক মার্চ করে সামনে এগিয়ে গেলাম দু’ কদম। তার পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানিয়ে বললাম, ‘স্যার, আমাদের দল আপনার পরিদর্শনের অপেক্ষায়।’
“তিনি ধীর পদক্ষেপে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গার্ড অব অনার পরিদর্শন করলাম। অবশেষে তিনি আবার মঞ্চে ফিরে গেলেন। আমি সৈনিকদের সামনে দাঁড়িয়ে আবার তাঁকে সালাম জানিয়ে বললাম, ‘আমি এখন সৈনিকদের নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাই।’ তিনি অনুমতি দিলেন।
“এর পর আমি মার্চপাস্ট করে মঞ্চের সামনে থেকে সরে গেলাম। এ সময় উপস্থিত হাজারো মানুষের কণ্ঠ এক সঙ্গে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে বৈদ্যনাথতলার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। সে এক অভূতপূর্ব মুর্হূত। অনুধাবন করা যায়। ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
“পরবর্তীতে মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। তিনি কয়েক জনকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ঘোষণা দিলেন, আজ থেকে বৈদ্যনাথতলার নাম হবে ‘মুজিবনগর’। আর এ মুজিবনগরই হবে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী। এখান থেকেই সরকারের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
“তাজউদ্দিন আহমদের ঐতিহাসিক ঘোষণায়ই বৈদ্যনাথতলা ‘মুজিবনগর’ নামে স্বীকৃতি পেল। আর এই মুজিবনগর সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীন বাংলার অস্তিত্বের কথা।”
মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম

১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করেন। এর পর ১৯৬৭ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে সারদা পুলিশ একাডেমিতে যোগদান করেন। তৎকালীন যশোর জেলার অধীনে ঝিনাইদহ ছিল একটি মহকুমা। ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ প্রশাসক (এসডিপিও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বেই তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহের জনযুদ্ধে স্থানীয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাভূত করেন এবং তাদের সমস্ত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া ১০ ও ১২ এপ্রিল মান্দারতলায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। এর পর ১৩ এপ্রিল বারোবাজারে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধে অংশ নেন।
২০ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনীর বৈকারী ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালাতে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ব্যারাকপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হন। আহত এক যোদ্ধা রণাঙ্গনের পরিবর্তে হাসপাতালে, কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি যে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার এক লড়াকু সৈনিক। হাসপাতালের বিছানা তাঁকে মানায় না। বিছানায় ছটপট করতে থাকেন। অসামান্য দৃঢ় মনোবলের এই যোদ্ধা কখন ফিরে যাবেন রণাঙ্গনে! যেখানে মায়ের আঁচল তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি, সেখানে হাসপাতালের বিছানায় আটকা পড়ে মাঝে মাঝেই খেপে উঠছিলেন মাহবুব উদ্দিন।
এর পর ২৬ দিনের মাথায় অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর ফের রণাঙ্গনে ফিরে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবে ভূষিত করে।
উপসংহারে যে কথা বললেন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি টেনে বলেন, “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার একটা বীজ পুঁতে রেখে গেলাম। এই বীজ যে দিন উৎপাটন করা হবে, সে দিন বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে’। আমাদের সেই স্বপ্নের পথে এগোতে হবে। একাত্তরে সাধারণ মানুষ, আদিবাসী-সহ সকলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আর সেই যুদ্ধ ছিল বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যুদ্ধ।”
কথা শেষ
এ বার বিদায়ের পালা। উঠে দাঁড়ালাম। তিনিও আশীর্বাদ করলেন, বললেন, “ভালো থেকো আর দেশের জন্য কাজ করো”। তাঁর উপদেশ মাথায় নিয়ে মনে মনে তাঁকে গার্ড অব অনার দিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে বললাম, “বিদায় বীর যোদ্ধা এবং ইতিহাসের সাক্ষী মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম”।
-
রাজ্য2 days ago
স্বাগত ১৪২৮, জীর্ণ, পুরাতন সব ভেসে যাক, শুভ হোক নববর্ষ
-
কলকাতা2 days ago
মাস্ক থাকলেও কালীঘাট-দক্ষিণেশ্বরে শারীরিক দুরত্ব চুলোয়, গা ঘেষাঘেঁষি করে হল ভক্ত সমাগম
-
কোচবিহার2 days ago
Bengal Polls 2021: শীতলকুচির গুলিচালনার ভিডিও প্রকাশ্যে, সত্য সামনে এল, দাবি তৃণমূলের
-
গাড়ি ও বাইক2 days ago
Bajaj Chetak electric scooter: শুরু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেই বুকিং বন্ধ! কেন?