শ্রয়ণ সেন
ইংরাজিতে একটি বিখ্যাত প্রবাদ রয়েছে, যার বাংলা করলে হয়, “সকালেই বোঝা যায় গোটা দিনের আভাস!” কিন্তু এই প্রবাদটাই পারথ টেস্টের প্রথম দিন ভুল প্রমাণিত করে ছাড়ল ভারত। দিনের শুরুতে ব্যাটিং ব্যর্থতা পুরোটাই ঢেকে গেল বোলিং বিক্রমে। একদিনেই মোড় ঘুরে গেল টেস্টের।
শুক্রবার টসে জিতে জসপ্রীত বুমরাহ ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে যত না চর্চা হয়েছে, তার থেকেও অধিক চর্চা হয়েছে দল বাছাই নিয়ে। জাদেজা, অশ্বিনকে বসানো হয়েছে, নেওয়া হয়নি সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট ভালো পারফর্ম করা আকাশদীপকে। উলটে দু’জন অভিষেককারি খেলছেন, নীতীশকুমার রেড্ডি এবং হর্ষিত রানা। অনভিজ্ঞ এক দল যার স্তম্ভ বলতে মাত্র দু’জন, ব্যাটিংয়ে বিরাট কোহলি আর বোলিংয়ে বুমরাহ নিজে।
ভারতের ব্যাটিং এতটাই দুর্বল যে দু’জন উইকেটকিপার খেলানো হচ্ছে। শেষ কবে বা আদৌ ভারত কোনো দিনও প্রথম একাদশে দু’জন উইকেটকিপার খেলিয়েছে কি না, মনে পড়ে না।
অতএব, শুরুটা যেমন ভাবা হয়েছিল, তেমনই হল। অস্ট্রেলীয় আক্রমণের সামনে একে একে ফিরলেন যশস্বী জয়সওয়াল, দেবদত্ত পাড়িক্কাল, বিরাট কোহলি। ভরসা যোগাচ্ছিলেন কেএল রাহুল। গত কয়েকটা টেস্টে যাঁকে নিয়ে চর্চা কম হয়নি, তিনিই কিছুটা হাল ধরে রেখেছিলেন দলের। সাবলীল ভাবে সামলেছেন অজি পেসত্রয়ীকে। শেষে ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হন তিনি। তৃতীয় আম্পায়ারকে ঠিকঠাক ফুটেজ পাঠানো হয়নি। পাঠানো হলে তাঁর রান আরও কিছুটা বাড়ত। কারণ খুব সুন্দর ভাবে নিজের ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
এ দিকে ঋষভ পন্থও যথেষ্ট ভালো খেলছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তিন-শূন্যতে চুনকামের সিরিজেও একা কুম্ভ ছিলেন পন্থ, এ বার পারথের পিচেও তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন অস্ট্রেলীয়দের উইকেট না দেওয়ার। কিন্তু টপ অর্ডার যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে মিডিল অর্ডারই বা কী করবে! তবে নজর কাড়েন অভিষেককারি নীতীশকুমার রেড্ডি। নীচের দিকে নেমে তাঁর ব্যাটের হাত ধরেই ভারতের স্কোর কিছুটা ভদ্রস্থ হয়। ৪১ রান করে গোটা ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন তিনি। ভারত শেষ হয়েছে ১৫০ রানে।
ভারতীয় ব্যাটিং যেমন দুর্বল, ঠিক তেমন অবস্থা অস্ট্রেলিয়ারও। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ খুইয়েছে তারা। জসপ্রীত বুমরাহর প্রথম স্পেলে রীতিমত অসহায় আত্মসমর্পণ করে অজি টপঅর্ডার। বুমরাহ একে একে ফেরান অভিষেককারী ন্যাথান ম্যাকসুইনি, উসমান খাওয়াজা এবং স্টিভ স্মিথকে। কুড়ি রানের আগেই তিন উইকেট হারায় অজিরা।
টপ অর্ডার ভেঙে যাওয়ার পর আর মাথাই তুলতে পারেনি তারা। মহম্মদ সিরাজ এবং অভিষেকে থাকা হর্ষিত রানাকেও সামলাতে ব্যর্থ হন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। ক্রমে প্যাভিলিয়নের পথ দেখেন ট্র্যাভিস হেড, মিচেল মার্শ, মার্নাস লাবুশেন এবং প্যাট কামিন্স। দিনের শেষে ৬৭ রানে কোনো রকমে পৌঁছতে পেরেছে অস্ট্রেলিয়া, ইতিমধ্যেই সাত উইকেট গেছে তাদের। বুমরাহ ৪, সিরাজ ২ এবং রানা ১ উইকেট নিয়েছেন।
পরিস্থিতি যা তাতে দ্বিতীয় দিনেই এই টেস্টের নিস্পত্তি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দেখার ভারত প্রথম দিনের শেষে যে মোমেন্টামটা পেয়েছে, সেটা দ্বিতীয় দিনেও সঙ্গে রাখতে পারে কি না।