কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৭৯-৬ (অজিঙ্ক রাহানে ৪৮, আন্দ্রে রাসেল ৩৮, নুর আহমদ ৪-৩১)
চেন্নাই সুপার কিংস: ১৮৩-৮ (১৯.৪ ওভার) (ডিওয়াল্ড ব্রেভিস ৫২, শিবম দুবে ৪৫, বৈভব অরোরা ৩-৪৮, বরুণ চক্রবর্তী ২-১৮)
কলকাতা: একেই কি বলে ওস্তাদের মার শেষ রাতে? শেষ ওভারে খেল দেখালেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। চেন্নাই সুপার কিংস ৮ উইকেটে ১৭২ রান। জয়ের জন্য দরকার ৮ রান, হাতে ৬ বল। সমীকরণ সহজ। কিন্তু ক্রিজে ধোনি এবং টেল এন্ডার অনশুল কাম্বোজ। এবারের আইপিএল-এ আগের ধোনিকে সে ভাবে দেখা যায়নি। পারবেন কি দলকে জয় এনে দিতে?
বল করছেন অভিজ্ঞ আন্দ্রে রাসেল। রাসেলের প্রথম বলটাই সীমানার ও পারে পাঠিয়ে দিলেন ধোনি। চাপ অনেকটা হালকা। তবু নিজের হাতেই দলকে জয় এনে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বলে কোনো রান নিলেন না। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে স্কোর সমান সমান করলেন। কিছু না হোক, সুপার ওভার তো হবে। বাকি ৩ বল, চাই অন্তত ১ রান। ব্যাট হাতে কাম্বোজ। ধোনি বেশ কিছুক্ষণ পরামর্শ দিলেন। সেই পরামর্শেই কি কাজ হল? চতুর্থ বল স্বচ্ছন্দে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দলকে জিতিয়ে দিলেন আনকোরা কাম্বোজ। সিএসকে জিতে গেল ২ উইকেটে। বোলিং-এ ভেলকি দেখিয়ে ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন নুর আহমদ।
দ্বাদশ ম্যাচে জয় না পেয়ে কেকেআরের প্লে অফে যাওয়ার আশা প্রায় দূরাশায় পরিণত হল। ১২ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট। আর চেন্নাইয়ের তো আর কিছু হারানোর নেই। ১২ ম্যাচ থেকে তাদের পয়েন্ট দাঁড়াল ৬।

স্বমহিমায় আন্দ্রে রাসেল। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
টসে জিতে আবার ব্যাট নিল কেকেআর
বুধবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স তথা কেকেআর। আগের ম্যাচেও টসে জিতে ব্যাট নিয়েছিল কেকেআর এবং রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে জয় পেয়েছিল। সেই আশায় এ দিনও ব্যাট নিল কেকেআর। কিন্তু আশায় জল ঢেলে দিল সিএসকে।
দলের ১১ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফিরে যান অন্যতম ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ, অনশুল কাম্বোজের বলে নুর আহমদকে ক্যাচ দিয়ে। সুনীল নারাইনের সঙ্গী হন অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে। তাঁরা দলের রান টেনে নিয়ে যান ৬৯-এ। ১৭ বলে ২৬ রান করে নুর আহমদের বলে স্টাম্পড আউট হন সুনীল। দলের স্কোরের সঙ্গে ২ রান যোগ হতেই ফিরে যান অঙ্গকৃশ রঘুবংশী।
দলের রান ৭.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৭১ রান থেকে শেষ পর্যন্ত পৌঁছোয় ৬ উইকেটে ১৭৯-তে। সৌজন্যে অজিঙ্ক রাহানে (৩৩ বলে ৪৮), মনীশ পাণ্ডে (২৮ বলে ৩৬ নট আউট) এবং আন্দ্রে রাসেলের (২১ বলে ৩৮ রান) ব্যাটিং। এ দিন বেঙ্কটেশ আয়ারের বদলে খেলানো হয় মনীশ পাণ্ডেকে। এই সিদ্ধান্ত যে আরও অনেক আগে নিতে পারত দল, তার প্রমাণ রাখেন মনীশ। আর গত ম্যাচ থেকে আন্দ্রে রাসেল স্বমহিমায় ফিরেছেন। এ দিনও তার ব্যত্যয় হল না। বল হাতে ভেল্কি দেখান সিএসকে-র নুর আহমদ। ৩১ রান দিয়ে ৪ উইকেট দখল করেন তিনি।

ধোনির সঙ্গে জয়ের আরও দুই কারিগর — শিবম দুবে (বাঁ দিকে) এবং অনশুল কাম্বোজ (ডান দিকে)। ছবি: সঞ্জয় হাজরা।
খেলার মোড় ঘোরালেন ব্রেভিস, শিবম ও ধোনি
জয়ের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে গোড়াতেই ধাক্কা খায় সিএসকে। শূন্য হাতে ফিরে যান আয়ুষ মাত্রে। আর এক ওপেনার ডেভন কনভয়ও খালি হাতে ফেরেন। ততক্ষণে অবশ্য উর্বী পটেলের দৌলতে দলের রান উঠেছে ২৫। কিন্তু ঘন ঘন উইকেট পড়তেই থাকে চেন্নাইয়ের। ৬০ রানের মধ্যে ফিরে যান পাঁচ জন ব্যাটার। আয়ুষ আর ডেভন ছাড়াও ফিরে যান উর্বী, রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। এই অবস্থায় জয়ের আশা করা দূরাশার নামান্তর। জয় তখনও ১২০ রান দূরে। হাতে ১৪.৪ ওভার। ৫ উইকেট পড়ে গেলেও রান ওঠার গতি ভালোই ছিল। ফলে হাতে বল ছিল অনেক।

নুর আহমদের বোলিং সিএসকে-র জয় প্রশস্ত করেছিল। ছবি:সঞ্জয় হাজরা।
এখান থেকেই খেলার মোড় ঘোরালেন ডিওয়াল্ড ব্রেভিস, শিবম দুবে এবং শেষ দিকে মহেন্দ্র সিং ধোনি। ৪টে ছয় আর ৪টে চার সহ ২৫ বলে ৫২ রান করে ব্রেভিস যখন ফিরলেন দলের রান তখন ১২৭। শিবমের সঙ্গী হলেন ধোনি। ধোনি নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে রেখে খেলতে দিলেন শিবমকে। ৪০ বলে ৪৫ রান করে শিবম যখন ফিরে গেলেন জয় তখন ১০ রান দূরে। শেষ পর্যন্ত জয় এনে দিলেন ধোনি। কী ভাবে? তা তো আগেই বলা হয়েছে
ম্যাচের আগে জাতীয় সংগীত
ম্যাচ শুরুর আগে ইডেনে এ দিন বাজল জাতীয় সংগীত। আইপিএলে প্রথম বার। পহলগাম কাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় মঙ্গলবার গভীর রাতে ভারত প্রত্যাঘাত করল ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বেশ কিছু জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই কারণে ভারতীয় সেনাকে বাহবা জানিয়ে জাতীয় সংগীত বাজানো হল। দুই দলের ক্রিকেটারেরা মাঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালেন।