লখনউ সুপার জায়ান্টস: ২০৯-৮ (নিকোলাস পুরান ৭৫, মিচেল মার্শ ৭২, মিচেল স্টার্ক ৩-৪২, কুলদীপ যাদব ২-২০)
দিল্লি ক্যাপিটলস: ২১১-৯ (১৯.৩ ওভার) (আশুতোষ শর্মা ৬৬, বিপরাজ নিগম ৩৯, শার্দূল ঠাকুর ২-১৯, দিগবেশ রাঠি ২-৩১)
বিশাখাপত্তনম: এ ভাবেও জেতা যায়! এক অবিশ্বাস্য জয়। মাত্র ৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও দ্বিশতাধিক রান যে তাড়া করে জেতা যায় তা দেখিয়ে দিল দিল্লি ক্যাপিটলস। আর মূল কৃতিত্ব আশুতোষ শর্মার।
ক’জন নাম জানেন এই আশুতোষ শর্মার? ঘরোয়া ক্রিকেটে রেলের হয়ে খেলেন। আইপিএল-এ অভিষেক গত বছর। পঞ্জাব কিংস তাঁকে ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছিল। আর এ বার দিল্লি ক্যাপিটলস তাঁকে ৩.৮০ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছে। সেই দিল্লির মান রাখলেন তিনি। ৩ বল বাকি থাকতে ১ উইকেটে লখনউ সুপার জায়ান্টসকে হারাল দিল্লি। স্বাভাবিক ভাবেই ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন আশুতোষ শর্মা।
লড়াই করার মতো স্কোর লখনউয়ের
সোমবার বিশাখাপত্তনমের ড. ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডি এসিএ-ভিডিসিএ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে লখনউকে ব্যাট করতে পাঠায় দিল্লি। আর এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে লখনউ। গোড়া থেকেই ব্যাটে ঝড় তোলে তারা এবং নির্ধারিত ২০ ওভারে করে ৮ উইকেটে ২০৯ রান।
দলের ৪৫ রানে অন্যতম ওপেনার আইডেন মার্করাম (১৩ বলে ১৫ রান) আউট হয়ে যাওয়ার পর মিচেল মার্শের সঙ্গী হন নিকোলাস পুরান। রান ওঠার গতি অনেক বেড়ে যায়। মাত্র ৭ ওভারে এই জুটি তোলে ৮৭ রান। ৩৬ বলে ৭২ করে বঙ্গসন্তান মুকেশ কুমারের বলে ট্রিস্টান স্টাবসকে ক্যাচ দিয়ে মার্শ যখন বিদায় নেন তখন দলের রান ১১.৪ ওভারে ১৩৩। মার্শের রানে ছিল ৬টা ছক্কা আর ৬টা চার। পুরানের সঙ্গী হন দলের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ। কিন্তু দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই বয়ে নিয়ে চলেন পুরান। দলের স্কোরে আরও ২৮ রান যোগ হওয়ার পরে যখন ঋষভ আউট হন তখনও তাঁর ঝুলিতে কোনো রান নেই। অর্থাৎ তৃতীয় উইকেটে যে ২৮ রান যোগ হয় তার প্রায় সবটাই আসে পুরানের ব্যাট থেকে।
৩০ বলে ৭৫ রান করে পুরান যখন মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন, তখন দলের রান ১৬৯। পুরানের ৭৫ রানে ছিল ৭টা ছক্কা আর ৬টা চার। এর পর ঘন ঘন উইকেট পড়তে থাকে লখনউয়ের। শেষ পর্যন্ত তাদের ইনিংস শেষ হয় ২০৯ রানে। ডেভিড মিলার ২৭ রান করে নট আউট থাকেন। ভালো বল করেন মিচেল স্টার্ক (৪২ রানে ৩ উইকেট) এবং কুলদীপ যাদব (২০ রানে ২ উইকেট)।

বিধ্বংসী আশুতোষ। ছবি Indian Premier League ‘X’ থেকে নেওয়া।
জয়ের জন্য দিল্লির সামনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১০। ইদানীং আইপিএল-এ যে ভাবে রানের বন্যা বইছে তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা খুব কঠিন নয়। তবে খুব কমও নয়। লড়াই করার মতো জায়গায় ছিল লখনউ।
৭ রানে ৩ উইকেট, ৬৫ রানে ৫, সেখান থেকে জয় দিল্লির
জয়ের লক্ষ্যে রান তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারাল দিল্লি। তখন মনে হল এই লড়াই বোধহয় লখনউ জিতেই গেল। ৭ রানের মধ্যে দিল্লির ৩ উইকেট পতন। ২টি উইকেট তুলে নিলেন শার্দূল ঠাকুর, ১টা রবি বিশ্নোই। এর পর কিছুটা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল দিল্লি। আবার বিপর্যয়। ৬৫ রানের মধ্যে চলে গেল ৫ উইকেট।
এর পর কিছুটা রুখে দাঁড়ালেন ট্রিস্টান স্টাবস। সঙ্গী আশুতোষ শর্মা। আশুতোষ তখনও তাঁর রূপ খোলেননি। ২২ বলে ৩৪ রান করে স্টাবস যখন প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন তখনও দিল্লি দূর অস্ত। জয়ের জন্য দরকার ৯৭ রান। হাতে বল ৪৫টি আর ৪ উইকেট। সেই অসম্ভবকে বাস্তব করতে আশুতোষ পেলেন বিপরাজ নিগমকে। ঝড় তুললেন বিপরাজ। তুলনায় শান্ত থাকলেন আশুতোষ। মাত্র ৩.৪ ওভারে এই দুজনের জুটি যোগ করল ৫৫ রান।
দলের ১৬৮ রানে বিপরাজ (১৫ বলে ৩৯ রান) চলে যেতে দিল্লির সমর্থকরা ধরে নিলেন জয় হাতের বাইরে। এর পরেই হাত খুললেন আশুতোষ। কিন্তু আরও বিপদ এল। একে একে আউট হয়ে গেলেন মিচেল স্টার্ক ও কুলদীপ যাদব। দলের রান ১৯২। জয় এখনও ১৮ রান দূরে, হাতে মাত্র ১ উইকেট, আর ৯ বল। এক অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে ৬ বলে ১৯ রান তুলে দলকে জয় এনে দিলেন আশুতোষ। ৩১ বলে করলেন ৬৬, ৫টা ছক্কা আর ৫টা চারের মাধ্যমে।