খবর অনলাইন ডেস্ক: ২০২৫ সালের ২৮ এপ্রিল – আইপিএল-এর ইতিহাসে স্মরণীয় দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকল। সবচেয়ে কমবয়সি ক্রিকেটার হিসাবে আইপিএল-এ শতরান করল ১৪ বছরের কিশোর ব্যাটার বৈভব সূর্যবংশী। মাত্র ৩৫ বলে শতরান করল বৈভব। শুধু তা-ই নয়, মাত্র ১৭ বলে অর্ধশতরান করে কনিষ্ঠতম ব্যাটার হিসাবেও আর-এক কীর্তি গড়ল বৈভব।
আইপিএল-এ আর-একটি রেকর্ড প্রায় করে ফেলেছিল বৈভব। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। সেটা হল না। সেটা হল সবচেয়ে কম বলে অর্ধশতরান। এই রেকর্ডটি রয়েছে ক্রিস গেলের দখলে। ২০১৩ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে পুণে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ৩০ বলে শতরান করেন গেল। এই তালিকায় দ্বিতীয় নামটি থাকল বৈভব সূর্যবংশীর।
সোমবার জয়পুরের সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে রাজস্থান রয়্যালস ব্যাট করতে পাঠায় গুজরাত টাইটান্সকে। নির্ধারিত ২০ ওভারে গুজরাত তোলে ৪ উইকেটে ২০৯ রান। অধিনায়ক শুভমন গিল (৫০ বলে ৮৪ রান), জোস বাটলার (২৬ বলে ৫০ রান নট আউট) এবং সাই সুদর্শনের (৩০ বলে ৩৯ রান) ব্যাটের সুবাদে লড়াই করার মতো রান তোলে গুজরাত। জবাবে রাজস্থান রয়্যালস ১৫.৫ ওভারেই পৌঁছে গেল লক্ষ্যমাত্রায়। তারা তুলল ২ উইকেটে ২১২ রান। জিতে গেল ৮ উইকেটে। স্বাভাবিক ভাবেই ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হল বৈভব।

প্রতিটি বলকেই এ ভাবে মাঠের বাইরে পাঠাতে চাইছিল বৈভব। ছবি Indian Premier League ‘X’ থেকে নেওয়া।
গুজরাতের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাকে নিয়ে এরকম যে ছেলেখেলা করবে রাজস্থান রয়্যালস তা ভাবাও যায়নি। আর রাজস্থান রয়্যালস এই ছেলেখেলা করল বৈভব সূর্যবংশী এবং যশস্বী জয়সোয়ালের ওপেনিং জুটির দৌলতে। আরও বলা ভালো বৈভবের ঝড়ের দৌলতে। ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ সিরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দর, রশিদ খানের মতো বোলারদের রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়ল বৈভব। তাঁদের প্রতিটি বলকে মাঠের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করে গেল সে। তার ব্যাটিং-ঝড় দেখে সঙ্গী যশস্বী জয়সোয়াল (৪০ বলে ৭০ রান নট আউট) নিজেকে কিছুটা গুটিয়েই রাখলেন। ওপেনিং জুটিতে ১১.৫ ওভারে ১৬৬ রান তুলে বৈভব যখন প্যাভিলিয়নে ফিরে গেল তখন তার ঝুলিতে ১০১ রান। ৩৮টা বল খেলল। স্ট্রাইক রেট ২৬৫.৭৮। তার রানে ছিল ১১টা ছয় আর ৭টা চার।
গত মাসেই ১৪ বছর হয়েছে বৈভবের বয়স। আইপিএল-এ অভিষেক হল ১৯ এপ্রিল লখনউ সুপার জায়ান্টস-এর বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিল বৈভব। প্রথম বলেই এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে ছক্কা। অবিশ্বাস্য। কার বলে ছক্কা মারল সে? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় ক্রিকেটার শার্দূল ঠাকুর। এখানেই থেমে গেল না সে। তৃতীয় বলে চার। এ ভাবেই সে তার ইনিংস গড়ল। ২০ বলে করল ৩৪, ৩টে ছয় আর ২টি চারের সাহায্যে। দুর্ভাগ্য বৈভবের। ২০ বলে ৩৪ রান করে স্টাম্প আউট হয়ে গেল সে। সে দিন বৈভব যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছে তখন তার চোখে জল। হেলমেট খুলে ডান হাতের বুডো আঙুল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ফিরল সে।

বৈভবের খেলা দেখে নিজেকে কিছুটা গুটিয়েই রাখলেন যশস্বী। ছবি Indian Premier League থেকে নেওয়া।
১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় বৈভবের। ২১১ দিনের জন্য কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের রেকর্ডটা গড়া হল না বৈভবের। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে রাজপুতানার প্রাক্তন ক্রিকেটার আলিমুদ্দিন খানের। মাত্র ১২ বছর ৭৩ দিন বয়সে রণজি ট্রফিতে রাজস্থানের হয়ে অভিষেক হয়েছিল তার। দেশভাগের পর আলিমুদ্দিন পাকিস্তানে চলে যান এবং সে দেশের হয়ে ২৫টি ট্রেস্ট খেলেন।
২০১১-এর ২৭ মার্চ বিহারের সমস্তিপুরে বৈভবের জন্ম। বাঁহাতি ব্যাটার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা শুরু বিহারের হয়ে ২০২৪-এর জানুয়ারিতে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম খেলা। বিনু মানকড় ট্রফিতে বিহারের অনুর্দ্ধ ১৯-এর হয়ে খেলেছে বৈভব সূর্যবংশী।
আইপিএলের নিলামে বৈভবকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় কিনেছে রাজস্থান রয়্যালস। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই ভ্রূ কুঁচকেছিলেন। কিন্তু আস্থা রেখেছিলেন রাজস্থান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তিনি বলেছিলেন, বৈভবকে পূর্ণ ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তুলবে রাজস্থান। দ্রাবিড় যে কথার কথা বলেননি, তা আইপিএলে সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করে দিচ্ছে বৈভব। সোমবার গুজরাতের বোলারদের নিয়ে তার ছেলেখেলা দেখিয়ে হুইলচেয়ারে বসে থাকা দ্রাবিড়কে দাঁড় করিয়ে দিল ১৪ বছরের কিশোর।