ভ্রমণ
চলুন ঘুরে আসি: ফুটফুটে ফুটিয়ারি
সবুজের বুক চিরে লালমাটির চোখরাঙানি, তাল-পলাশ-কুসুম-মহুয়াদের সদর্প অধিষ্ঠান, তিলাবনিদের বিশ্বস্ত সঙ্গ।


সুন্দরী কলাবনি আর লধুড়কার মাঝে ফুটিয়ারির রূপকথা। আপন খেয়ালে বয়ে চলা ফুটিয়ারি নদীর ছন্দ কাটে ফুটিয়ারির ড্যামে, তিন দিক থেকে চলে শাসন তিন পাহাড়ের, তিলাবনি, পাঞ্জোনিয়া, সিন্দুরপুর – এই ত্রয়ীর কড়া অনুশাসনে ফুটিয়ারি গেঁথে চলে রূপকথা।
বেশ কিছু দিন ধরেই দিব্যেন্দুদা বলছিলেন, “দাদা, একবার সময় করে আসুন, দেখে যান।” কিন্তু পরিস্থিতির চাপে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। হঠাৎ একদিন মনস্থির করেই ফেললাম। ক’ দিন ধরেই পুরুলিয়া টানছিল, তাই চাকা ছুটল।
কাশের আগমনী বার্তা রাস্তার ধারে, শরতের নীল আকাশ আর রাঙামাটির মনে দোলা দেওয়া ল্যান্ডস্কেপ – এ নিয়েই গাড়ি ছুটে চলে পুরুলিয়ার দিকে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অপরূপা বাংলার স্বাদ নিতে নিতে অবশেষে ফুটিয়ারির কোলে। আকাশে তখন মেঘের আস্তরণ বেড়েই চলেছে। তাল গাছগুলি আরও দৃপ্ত পদচ্ছাপ রেখে দেওয়ার প্রস্তুতিতে, ফুটিয়ারির জলে ধীরে ধীরে ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ বয়ে চলেছে।
অপর দিকে তিলাবনি আর প্যাঞ্জোনিয়া ক্রমেই স্নানের প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে, মাঝে আমি বুনে চলেছি স্বপ্নের বাসভবন। আহা এর মাঝে যদি হত আমার স্বপ্নকুটির, মোহাচ্ছন্নতা কাটালেন দিব্যেন্দুদা – “আরে দাদা, দেশি মুরগির ঝোল রেডি, গরম গরম দু’টো ভাত পেটে দিয়ে আবার নিজের স্বপ্নকুঁড়ি ফোটান।”

ডাল, বেগুনভাজা আর গরম মুরগির ঝোল দিয়ে সপাসপ মেরে এ বার সারপেন্টাইল রাস্তা ধরে হন্টন। কী অপরূপ ল্যান্ডস্কেপ বলে বোঝানো যাবে না। সবুজের বুক চিরে লালমাটির চোখরাঙানি, তাল-পলাশ-কুসুম-মহুয়াদের সদর্প অধিষ্ঠান, তিলাবনিদের বিশ্বস্ত সঙ্গ, ড্যামের রাস্তা ধরে স্থানীয়দের সাইক্লিং – সবে মিলে শোণিতধারা পালটে দেওয়ার সব উপকরণ হাজির।
মেঘ আরও জমে আসছে, কালো আকাশের নীচে ফুটিয়ারি যেন আরও অভিমানী। উষ্ণতার পারদ ক্রমেই নিম্নমুখী, গায়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আয়োজন, বাতাসে লালমাটি ভেজা গন্ধ, কাশঝোপে মেটাক্রোনাল তরঙ্গ… এ আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? বৃষ্টির তেজ বাড়াতে অগত্যা টেন্টে ফেরা।

ফুটিয়ারি রিট্রিট দিব্যেন্দু দার স্বপ্নের প্রজেক্ট। আগে তাজপুর রিট্রিট বানিয়েছিলেন, তার পর এই ফুটিয়ারি প্রজেক্ট। আপাতত একটি ডিলাক্স কটেজ আর চারটি টেন্ট। বাথরুম থেকে বেডরুম – সবেতেই সুরুচিসম্মত মননের ছাপ। ফুটিয়ারির পাশে হওয়া এই ফুটিয়ারি রিট্রিট অবস্থান মাহাত্ম্যে বেশ মনোমুগ্ধকর। আপাতত এসি না থাকলেও ধীরে সে ব্যবস্থাও হবে। সবে তো পথচলা শুরু হয়েছে। রক ক্লাইম্বিং থেকে জিপ লাইনিং, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের বহু ক্রিয়াকলাপ আগামী বছর থেকে শুরু হয়ে যাবে প্রায় ১৪ বিঘার বিশাল প্রজেক্টে। তবে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস শুরু হওয়ার আগের ফুটিয়ারি রিট্রিট দেখে আমি মুগ্ধ। বাকিগুলি শুরু হলে হয়ত ট্যুরিজমের এক অন্য দিক খুলে যাবে। কায়াকিংও শুরু হয়ে যাবে এই বছরের শেষ দিক থেকে।
রাত জেগে ড্যামের ধারে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আরামকেদারায় বসে শুধু ভাবছিলাম এই বাংলাকে ঠিক কতটা চিনেছি আমরা। কত অদেখা জায়গা শুধু এই বাংলাতেই। বিশেষ করে এই পুরুলিয়ার কত জায়গা অনাঘ্রাত থেকে গিয়েছে আমাদের কাছে।
ভোর হতেই গাড়ি র চাকা ছুটে চলে তিলাবনি, প্যাঞ্জোনিয়া আর সিন্দুরপুরের দিকে। পথের শোভা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। মাত্র ১০-১২ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে এ এক স্বপ্নভূমিই বটে। তিনটে পাহাড়ই আবহবিকারের ফলে ভগ্নপ্রায় অবস্থায়। পাহাড় ভেঙে বড়ো বড়ো বোল্ডার গা বেয়ে নেমে আসছে। দাবার ছকে যেন বোল্ডারের গুটি সাজানো। পাহাড়ের নিচু ঢালের পাশ থেকে বয়ে চলেছে পিচঢালা কালো রাস্তার ঢেউ। মনে এসে গেল সেই পঞ্চম দার সুরে গানের দৃশ্যায়ণ – ‘পান্না কি তমান্না হ্যায় কি হিরা মুঝে মিল যায়ে’ – হ্যাঁ, একদম সেই স্পট।

তিন পাহাড়ের সান্নিধ্যলাভের পর চললাম দ্বারকেশ্বর নদীর উৎপত্তিস্থল দেখতে। সুন্দর ল্যান্ডস্কেপকে পাশে রেখে দুর্গাসিংডাঙা য় পৌঁছে তো অবাক। প্রস্রবণের জলধারা সরু হয়ে বয়ে চলেছে ক্যানিয়ন বেয়ে। ভাবা যায়, এই দ্বারকেশ্বরই ‘বাঁকুড়ার দুঃখ’-এর রূপ নেয় বছরে বছরে।
পরের গন্তব্য পাকবিড়রা ভৈরবস্থান। কষ্টিপাথরের এক অদ্ভুত শৈলী যে এই বাংলায় আছে জানতামও না, দিব্যেন্দুদা না বললে। সময় কম। তাই এর পর কাশীপর রাজবাড়ি দেখে আবার ফিরে আসতে হল।
তবে এই ফুটিয়ারি রিট্রিট-এ থেকে আপনি ঘুরে নিতে পারেন অচেনা, অনাঘ্রাত পুরুলিয়ার বেশ কিছু অংশ। এ ছাড়া চেনা পুরুলিয়া তো আছেই – আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম, বামনি ফলস, চড়িদা, পাখিপাহাড় ইত্যাদি ইত্যাদি।
কী ভাবে যাবেন
(১) যদি গাড়ি নিয়ে যান –
কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ২৮০ কিমি, সময় লাগবে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। পথ: কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পানাগড়, টোল প্লাজা পেরিয়ে দুর্গাপুরের কাছে বাঁ দিকে বাঁকুড়ার পথ ধরুন। বাঁকুড়ার ধলডাঙা মোড় থেকে ডান দিকে পুরুলিয়ার পথ ধরুন (জাতীয় সড়ক ৬০এ)। ৬ কিমি মতো গিয়ে পুয়াবাগান মোড় থেকে ডান দিকে চলুন হুরা। ওই পথে আরও ১৫ কিমি গিয়ে লোধুর্কা মোড়। সেখান থেকে ডান দিকে চলুন শালডিহা মোড় (৩ কিমি)। সেখান থেকে বাঁ দিকে ২ কিমি ফুটিয়ারি রিট্রিট।
(২) যদি ট্রেনে যান –
হাওড়া থেকে ট্রেনে আদ্রা বা পুরুলিয়ায় গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে ফুটিয়ারি। দূরত্ব ২৭-২৮ কিমি।

কোথায় থাকবেন
থাকবেন ফুটিয়ারি রিট্রিট-এ। যোগাযোগ : দিব্যেন্দু ঘোষ (+৯১৯০৫১১৬৬৫৬৩)
খরচ: ডিলাক্স কটেজ – প্রতি দিন মাথাপিছু ১৬০০ টাকা (যদি দু’জন থাকেন)/১৪০০ টাকা (যদি তিন বা চার জন থাকেন)।
টেন্ট – প্রতি দিন মাথাপিছু ১৪০০ টাকা (যদি দু’জন থাকেন)/১২০০ টাকা (যদি তিন জন থাকেন)।
খরচ থাকা এবং খাওয়া-সহ।
ঘোরাঘুরি
ফুটিয়ারি থেকে অফবিট পুরুলিয়া ঘুরে দেখতে বোলেরো গাড়িতে খরচ হবে ২৫০০-২৮০০ টাকা।
ছবি: লেখক
কলকাতা
এ বার সারা দিনের পাসে বাস-ট্রাম-ফেরিতে কলকাতা ভ্রমণ
কলকাতা শহরে সারা দিনে যত বার খুশি বাস-ট্রাম-ফেরিতে ভ্রমণ করা যাবে।

খবরঅনলাইন ডেস্ক: ভ্রমণের জন্য ‘হপ অন হপ অফ’ (hop-on-hop-off) পাস চালু করল ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (ডব্লিউবিটিসি, WBTC)। বেশ কয়েক বছর আগে কলকাতার ট্রামে যে অল ডে টিকিট চালু ছিল, এটা অনেকটাই সে রকম। তবে এই ‘হপ অন হপ অফ’ পাস নিয়ে শুধু ট্রাম নয়, কলকাতা শহরে সারা দিনে যত বার খুশি বাস-ট্রাম-ফেরিতে ভ্রমণ করা যাবে। ২১ জানুয়ারি থেকে এই পাস পাওয়া যাবে।
লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে সিটি ট্যুরের ক্ষেত্রে ভ্রমণকারীদের জন্য যে টিকিট-ব্যবস্থা রয়েছে, তারই আদলে চালু হচ্ছে এই পাস। এই পাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিটি ট্রাভেল পাস’ (City Travel Pass)। এই পাসের দাম পড়বে ১০০ টাকা। তবে কেউ যদি এক সঙ্গে ২০টা বা তার বেশি পাস কেনেন, সে ক্ষেত্রে টিকিটের দামে ১০% ছাড় পাওয়া যাবে।
ডব্লিউবিটিসি-র এক আধিকারিক বলেন, “ট্রেন বা বিমানে ভ্রমণ করার ফাঁকে কোনো ভ্রমণকারীর যদি কলকাতায় সারাটা দিন কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তা হলে তাঁর ক্ষেত্রে এই ট্রাভেল পাস বেশ কাজের হবে। ভ্রমণকারীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রুটের খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে গাইড ম্যাপও তৈরি করা হচ্ছে।”
যাঁরা কলকাতায় ভ্রমণে আসেন বা যাঁদের এই শহরে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করতে হয়, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই পাস চালু করা হচ্ছে বলে ওই আধিকারিক জানান।
তিনি বলেন, “এই পাস নিয়ে আপনি সিটি অফ জয়-এ যেমন খুশি ভ্রমণ করতে পারেন। একটি পাস কিনে হাওড়া থেকে ফেরি ধরুন। নদী পেরিয়ে মিলেনিয়াম পার্কে আসুন। এখান থেকে বাস বা ট্রাম ধরে চলে যান এসপ্ল্যানেড। সেখান থেকে কলেজ স্ট্রিটে ঐতিহ্যশালী বইয়ের বাজারে চলে যান।”
ডব্লিউবিটিসি ১০০ টাকায় ‘ট্রাম পাস’ও (Tram Pass) চালু করছে। এই পাস নিয়ে মহানগরে ট্রামে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন ভ্রমণকারীরা।
ডব্লিউবিটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর রজনবীর সিং কপুর বলেন, “শহরের নিয়মিত যাত্রী ও দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্যই এই ‘সিটি ট্রাভেল পাস’ ও ‘ট্রাম পাস’ চালু করা হচ্ছে।”
“এর বড়ো সুবিধা হল একই দিনে ট্রাম, বাস বা ফেরিতে চড়ার জন্য বার বার টিকিট কাটার হ্যাপা পোহাতে হবে না”, বলেন ডব্লিউবিটিসি-র চেয়ারম্যান রচপাল সিং।
বাস, ট্রামের কন্ডাক্টরদের কাছ থেকে এবং ফেরির টিকিট কাউন্টার থেকে এই পাস কেনা যাবে। বিমানবন্দর, হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনেও এই পাস কেনা যাবে। ডব্লিউবিটিসি-র ওয়েবসাইট থেকেও এই পাস বুক করা যাবে।
আরও পড়ুন: মাস্টারস্ট্রোক! নন্দীগ্রামে তিনি নিজেই প্রার্থী, জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রবন্ধ
শুধু ‘ভেটকির পাতুরি’র লোভে নয়, মন ফিরুক প্রকৃত সুন্দরবনে…

নিজস্ব প্রতিনিধি: “ভেটকির পাতুরি, পাবদার ঝাল, কাতলার কালিয়া, আমুদি মাছ ভাজা… লুচি, তরকারি… ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন… পাঁঠার ঝোল…”।
সুন্দরবন মানেই এখন এই সব। প্রচুর ভ্রমণ সংস্থা ইদানীং সুন্দরবন প্যাকেজের আয়োজন করছে। গত তিন-চার বছরে তা মারাত্মক ভাবে বেড়ে গিয়েছে। কিছু ভ্রমণসংস্থা অবশ্যই বাঁধা গতের বাইরে বেরিয়ে পর্যটকদের জন্য অন্য রকম স্বাদের ভ্রমণের আয়োজন করে। কিন্তু বেশির ভাগ প্যাকেজই বাঁধাধরা গতে চলছে। আর বাঁধাধরা গত বলতে যেখানে খাবারের তালিকা ঘোরাঘুরির থেকে বেশি প্রাধান্য পেয়ে যাচ্ছে।
রবিবার, সুন্দরবনে ভয়াবহ একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ৩৫ জনের একটি পর্যটকদল বেড়াতে এসেছিল সুন্দরবনে। এ দিন তাঁরা নামখানা থেকে রওনা হয়েছিলেন। রামগঙ্গা থেকে বন দফতরের অনুমতি নিয়ে দলটি যখন আজমলমারি জঙ্গলের উদ্দেশে যাচ্ছিল, তখন জলযানে রান্না হচ্ছিল। বনি ক্যাম্পের কাছাকাছি যাওয়ার সময় গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে আগুন লেগে যায়।
বরাত জোরে বেঁচে যান সব পর্যটকই। কাছেই একটি মৎস্যজীবীর ট্রলার ছিল বলে এ যাত্রায় রক্ষে হয়। কিন্তু এই ঘটনা সুন্দরবন ভ্রমণের নিরাপত্তা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। সময় কি আসেনি সুন্দরবনকে অন্য রকম ভাবে চেনার?
‘সুন্দরবনের গল্প শোনার কান তৈরি করা হোক’
ভ্রমণ-ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত সৌরভ নায়েক। কিন্তু এই ধরনের বাঁধা গতের ভ্রমণের আয়োজন করতে তাঁর খুব একটা সায় নেই। একই সঙ্গে যদিও ভ্রমণার্থীদের চাহিদাটাও দেখতে হবে বলে মত তাঁর।
সৌরভের কথায়, “একটা জিনিস আমাদের বুঝতে হবে, চাহিদা অনুযায়ীই জোগান তৈরি হয়। অপারেটরদের কাছেও প্রশ্ন আসে ‘দাদা খাওয়ার মেনু কী আছে?’ সুতরাং খাওয়ার মেনুতে টান পড়া মানে প্রতিযোগিতার বাজারে তার বিজ্ঞাপন পিছিয়ে পড়বে।”
কী ভাবে সমাধান হবে এই সমস্যার। সৌরভ বলেন, “ট্রলার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা সবার আগে জরুরি। এবং সেফটি রুলস কঠোর ভাবে যাতে মেনে চলা হয় তার নজরদারির ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের তরফ থেকে। ট্যুরের জন্য নির্দিষ্ট মানের রেজিস্টার্ড ট্রলারকেই একমাত্র পার্মিশন দেওয়া উচিত।”

দিন দুয়েক আগেই দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যাদের মূল কাজ হল সুন্দরবন বায়োডাইভার্সিটি যাতে কোনো ভাবেই নষ্ট না হয়ে যায় এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে রিসর্ট বা হোটেল গজিয়ে না ওঠে তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা। হাইকোর্টের এই রায় অত্যন্ত ভালো একটা দিক, মনে করেন সৌরভ।
ভ্রমণ-ব্যবসায়ীদের কাছেও তাঁর বিশেষ আবেদন, “শুধু খাওয়াদাওয়া, ফূর্তি করার জায়গা হিসেবে সুন্দরবনকে প্রাধান্য না দিয়ে ভ্রমণের অন্য দিকগুলোকেও তুলে ধরার চেষ্টা করা হোক। খাওয়া কমিয়ে দিতে বলা হচ্ছে না এতে। কিন্তু সেটাই যাতে মূল বিষয় না হয়ে ওঠে সেটা মাথায় রাখা হোক, সম্ভব হলে দু’ রাত তিন দিনের বাঁধাধরা রুটের বাইরে বেরিয়ে অন্য কিছু অফবিট লোকেশনকেও সামনে তুলে আনা হোক। সুন্দরবনেরও অনেক গল্প বলার থাকে সেগুলো শোনার কান তৈরি করা হোক।”
‘মন ফিরুক সুন্দরবনে’
বাংলার বিভিন্ন দিক চষে বেড়ানো ভ্রামণিক সঞ্জয় গোস্বামী কিন্তু মনে করেন সুন্দরবনের অন্যান্য দিক তুলে না ধরলে অচিরেই পর্যটকের আগমন বন্ধ হয়ে যাবে।
তাঁর প্রশ্ন, আজকের মানুষের চাহিদা কি শুধু খাবারের মেনুতেই আবদ্ধ? তাঁর কথায়, “সুন্দরবনকে আবিষ্কার না করে কি শুধু ঝালে-ঝোলে-অম্বলেই তাঁকে খুঁজে নেব?”
তাঁর বক্তব্য, “মনে রাখতে হবে সুন্দরবন ট্যুরিজম অন্য সব ট্যুরিজম সেক্টরের থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। মানুষের কাছে সুন্দরবনের বিভিন্ন দিক তুলে না ধরলে অচিরেই কিন্তু পর্যটকদের আসা বন্ধ হতে পারে। কারণ তাদের সামনে সুন্দরবনের প্রকৃত রূপ তুলে না ধরলে একই পর্যটক বার বার যাবেন না, এবং তাতে স্যাচুরেশন আসতে বাধ্য।”
তিনি বলেন, “মানুষেরও ভাবা দরকার যে কেন যাচ্ছি সুন্দরবনে? এটা আর চারটে পর্যটনস্থানের মতো নয়, যেখানে গিয়ে মদ মাংসে শেষ হতে পারে দিন।”
ভ্রমণপ্রিয় মানুষ এবং ভ্রমণ-ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সবার কাছে সঞ্জয়বাবুর আবেদন, “আসুন আমরা সবাই মিলে নতুন সুন্দরবনকে সবার সামনে তুলে ধরি এবং নতুন ভাবে চেনার চেষ্টা করি। মাছ, মাংস, কাঁকড়া, ভেটকি, ইলিশ এ সব পালাচ্ছে না, সবই থাকবে। কিন্তু মনটাই যদি না থাকে পেট থেকেও লাভ নেই। মন ফিরুক সুন্দরবনে।”
অন্য চিন্তাধারাও ধীরে ধীরে আসছে
বাঁধা গতের বাইরে বেরিয়ে কিছুটা অন্য চিন্তাধারাও এ বার সামনে আসছে। কিন্তু তা এখনও পর্যন্ত খুবই কম। জানুয়ারি মাসে সুন্দরবন ভ্রমণে নিয়ে যাচ্ছে একটি ভ্রমণ সংস্থা। তাদের প্যাকেজে কিন্তু কোনো ভাবেই খাবারের তালিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।

বরং তাদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে স্থানীয়দের সঙ্গে কথোপকথন, সুন্দরবনের মানুষের জীবনসংগ্রামের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। ওই সংস্থার কর্ণধার বলেন, “বেড়াতে গিয়ে যদি স্থানীয় মানুষের সঙ্গেই না মিশলাম তা হলে ভ্রমণের উদ্দেশ্যই তো সফল হল না।”
ঠিক এই বদলটাই দরকার। খাওয়াদাওয়া তো চলবেই। বাঙালির ভ্রমণে খাওয়া তো অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে, খাওয়ার লোভে গিয়ে বাঙালি যেন শুধু ‘পর্যটক’-এই নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে ‘ভ্রামণিক’ হতে পারেন।
খবরঅনলাইনে আরও পড়তে পারেন
কৃষকরা কেন প্রতিবাদ করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কী করতে পারেন
ভ্রমণ কথা
রূপসী বাংলার সন্ধানে ৪/ সিঙ্গির শান্তিনিকেতনে দুটো দিন

শ্রয়ণ সেন
আমাদের ছোটো নদী। নাম তার ব্রহ্মাণী। মধ্য-কার্তিকে অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতেও টলটলে জল তার। ছলাত ছলাত শব্দে সে এগিয়ে চলেছে নিজ গন্তব্যে।
সম্রাটদা বললেন, “মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী। ভাতারের কাছে জন্ম নিয়ে কাটোয়ায় গঙ্গায় গিয়ে মিশেছে।”
নদীর ধারের পাড়টায় বসে থাকতে দিব্য লাগছে। এখন সকাল ৮টা। চামড়ায় টান ধরতে শুরু করে দিয়েছে। একটা শিরশিরানি ব্যাপার রয়েছে আবহাওয়ায়।
গতকাল এখান আসার পর থেকেই সম্রাটদা, বউদি আর তাঁর দলবল যে ভাবে আমাদের দিকে খেয়াল রাখছে, সেটা ভাষায় ব্যাখ্যা করা যাবে না। আজ তো আবার দুপুরে দেশি খাসির ব্যবস্থা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে সম্রাটদা।

গতকাল এখানে এসেছি। পৌঁছোতে যে এমন দেরি হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। আসলে ঝিলিমিলি থেকে রওনা হয়েছিলাম পৌনে ন’টা নাগাদ। ২৩০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পূর্ব বর্ধমানের সিঙ্গি গ্রামে আসতে বড়োজোর ঘণ্টা পাঁচেক লাগত। কিন্তু বাধ সাধল বাঁধ।
মানে, ঝিলিমিলি থেকে রানিবাঁধ, বাঁকুড়া, বেলেতোড় হয়ে বড়জোড়া পৌঁছে সেখানে আধ ঘণ্টা জ্যামে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর জানতে পারলাম দুর্গাপুর ব্যারেজ বন্ধ। লকগেট ভেঙে গিয়েছে। গাড়ি যাবে না।
অগত্যা গাড়ি ঘুরিয়ে ফের বেলেতোড় এসে, সেখান থেকে বাঁ দিকে ঘুরলাম। সোনামুখী, খণ্ডঘোষ হয়ে বর্ধমান পৌঁছোতেই দুপুর দেড়টা বেজে গেল।
বর্ধমান থেকে ভাতার, বলগোনা, চন্দ্রপুর হয়ে সিঙ্গি যখন পৌঁছোলাম তখন ৩টে বাজে। পেটে ছুঁচোয় ডন মারছে রীতিমতো।
সম্রাটদার শান্তির নিকেতনে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামতেই লেবুর শরবত চলে এল। ওপরে পুদিনা পাতা ভাসছে। আহ! কী অসম্ভব তৃপ্তি যে পেলাম। গোটা রাস্তার ক্লান্তি যেন নিমেষের মধ্যে দূর হয়ে গেল।
অনেকেই প্রশ্ন করবেন, দক্ষিণবঙ্গে গন্ডা গন্ডা তথাকথিত ‘টুরিস্ট স্পট’ থাকতে কেন পূর্ব বর্ধমানের এক গ্রামকে বেছে নিলাম দু’টো দিন থাকার জন্য।
সত্যি কথাই, ভ্রমণ-মানচিত্রে খুব একটা পরিচিত নয় এই সিঙ্গি গ্রাম। তবে বাংলায় মহাভারত রচয়িতা কাশীরাম দাসের জন্য এই গ্রামের খ্যাতি যথেষ্ট। এই গ্রামেই তাঁর জন্ম, রয়েছে তাঁর বসতবাটীও।
কাশীরাম দাসের বসতবাটী তো দেখতে যাবই, কিন্তু সেটা প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়। আসলে সম্রাটদার ডাককে উপেক্ষা করতে পারিনি। সেই জানুয়ারিতে ফেসবুকে আলাপ হয়েছে ভদ্রলোকের সঙ্গে। তার পর তো লকডাউন হয়ে গেল।
জুনে লকডাউন উঠতে সম্রাটদাই বলতে থাকলেন এক বার তাঁর শান্তিনিকেতনে আসতে। প্রথমে অবাক লাগত। কেন যাব তাঁর শান্তিনিকেতনে?
প্রশ্নের উত্তরে তিনিই বলেন, “পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অলস বিশ্রাম যাপন করতে অথবা নিজের কাছে একলা হতে, ফুসফুস ভরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে, মুখরোচক অথচ ১০০% বিষমুক্ত খাবারের স্বাদ নিতে, আর বর্ষার তো একটা অন্য রূপ আছেই, তা দু’ চোখ ভরে দেখতে এখানে আসতেই হবে।”
বর্ষার রূপ দেখা হল না বটে, তবে এখন যা রূপ দেখছি, তা-ই বা কম কীসে! বাড়ির তিনতলায় ছাদ। সেই ছাদ সংলগ্ন দু’টো ঘর আমাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘরের জানলা দিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ আর ছাদে দাঁড়ালে উত্তর ও পশ্চিম, যে দিকে তাকাই শুধু সবুজ আর সবুজ। এই আমার শস্যশ্যামলা বাংলা।

পাহাড় বা সমুদ্র তো কতই দেখেছি, কিন্তু এমন ভাবে সবুজ বাংলাকে দেখার ভাগ্য আর কত জনের হয়! মনে ভরে যাচ্ছে আমার। বাড়িটার নাম শান্তিনিকেতন হোমস্টে। সিঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা সম্রাট বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাবা শান্তিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে এই হোমস্টের নাম দিয়েছেন।
হাতমুখ ধুয়ে মধ্যাহ্নভোজন করতে বসে চক্ষু চড়কগাছ। কত রকম পদের ছড়াছড়ি। গুনে গুনে ১৪ রকম। পেট ভরে খাওয়ার পর শেষ পাতে ঠান্ডা ঘোলটা যেন অমৃত।
সম্রাটদা বলেন, এখানে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। সিঙ্গি গ্রামের পরিশ্রমী মানুষের সহযোগিতায় বাড়ির নিজস্ব রান্নাঘরে অতিথির জন্য খাবার তৈরি করা হয়।
বাড়িতেই আছে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি এবং বিভিন্ন গাছে ছাওয়া দু’টি ছোটো বাগান। সবজিতে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। এ ছাড়া আছে খুব ছোট্ট একটি বাঁধানো পুকুর, যেখানে ছোটো মাছ চাষ করা হয়।
বাগানের সেই সবজিই বাড়ির রান্নাঘরে ঘরে তৈরি তেল এবং বিভিন্ন মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। তা ছাড়া ঘি-ও বাড়িতেই তৈরি।
পাশের মসজিদ থেকে আসা আজানের সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়েই সবুজ ধানখেতে টুক করে ডুব দিল সূর্য। সন্ধ্যা নামল সিঙ্গিতে। সম্রাটদাকে নিয়েই জমে উঠল আমাদের সন্ধ্যার আড্ডা। রাত বাড়ল সিঙ্গিতে, সেই সঙ্গে অল্প অল্প ঠান্ডাও।
পরের দিন সকাল ৭টায় টোটো এসে হাজির শান্তিনিকেতনের গেটে। সিঙ্গি গ্রামের মধ্যে দিয়ে সরু বাঁধানো রাস্তা ধরে সে আমাদের নিয়ে চলল।
ধান পাকতে শুরু করেছে। তাই সবুজ ব্যাপারটা কোথাও কোথাও সোনালি রঙ নিচ্ছে। ধান কাটার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।
ছোটো মেইগাছি গ্রাম পেরিয়ে এসে পৌঁছোলাম ব্রহ্মাণী নদীর পাড়ে। জায়গাটা সিঙ্গি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। ব্রহ্মাণীকে দেখতে দেখতেই সময়ে কেটে যাচ্ছিল। সম্বিৎ ফিরল সম্রাটদারই ফোনে। শান্তিনিকেতনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে গরম গরম লুচি।
ফুলকো ফুলকো গরম লুচি সাঁটিয়ে প্রাতরাশ করলাম। এর পর আরও এক দফা সিঙ্গি গ্রাম ঘোরা। চলে এলাম লৌকিক দেবতা ক্ষেত্রপাল ঠাকুরের থানে।
কোনো বিগ্রহ নেই এখানে। অতি প্রাচীন একটি বটগাছকে পুজো করা হয়। গ্রামের প্রান্তিক দেবতা। আষাঢ়-নবমী বা উলটোরথের দিন এখানে বিশাল মেলা বসে। বেশ কয়েক দিন ধরে সেই মেলা চলে। কিন্তু এ বার করোনার কারণে, সেই মেলা হয়নি। তাই সিঙ্গির মন খারাপ।

মন খারাপ হয়ে যায় আরও একটা জিনিস দেখলে। সেটা হল কাশীরাম দাসের বসতবাটী। মহাকবি কাশীরামের বাড়ির অতিভগ্ন দশা।
কয়েকটি দেওয়াল ছাড়া এখন কিছুই প্রায় টিকে নেই। এখানে পাতালঘর রয়েছে। শোনা যায় তাঁর ওপরে আক্রমণ আটকাতে এই পাতালঘরে নিজের সব পাণ্ডুলিপি নিয়ে আত্মগোপন করতেন কাশীরাম।
বাড়িটি এখন সাপখোপের আখড়া হয়েছে। তবে বাড়িটি যাদের দেখভালে রয়েছে তাদের এবং সম্রাটদা-সহ সিঙ্গি গ্রামের নাগরিক সমাজের প্রচেষ্টায় এখানে একটা স্মৃতিমন্দির তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। বর্তমানে বাড়ির ঠিক সামনে একটা গেট তৈরি হয়েছে, যা এই মন খারাপের আবহেও কিছুটা স্বস্তি দেয়।
ফিরে আসি শান্তিনিকেতনে। এ বার এখানকার বাগান ঘুরে দেখার পালা। কত শাকসবজি ফলেছে এখানে, নানা রকমের আম গাছ রয়েছে। ডিসেম্বরেও আম ফলে, এমন গাছ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মশলার গাছ আর কত কী! এই বাগান ঘুরে দেখতে দেখতেই ঘণ্টা খানেক সময়ে কেটে যায়।
কথা দিয়েছিলেন সম্রাটদা। সেইমতো দুপুরের পাতে দেশি খাসির ঝোল। চার পিস খাওয়ার পরেও পেট আইঢাই করল না! সত্যিই, এখানকার তেলমশলা এবং রান্নার গুণ রয়েছে।

সিঙ্গির অবস্থান দারুণ জায়গায়। কাছেই ঐতিহাসিক দুই শহর কাটোয়া ও দাঁইহাট। কালনাও খুব বেশি দূরে নয়। কুমুদরঞ্জন মল্লিকের কোগ্রামও গাড়িতে ঘণ্টাখানেকেরই পথ। সিঙ্গিকে আশপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে কয়েকটি সতীপীঠ।
এমনই এক সতীপীঠে গেলাম বিকেলে। ক্ষীরগ্রামের যোগাদ্যা মন্দির। সিঙ্গি থেকে ১৮ কিমি। গ্রামে ঢুকতেই হাজার বিঘের ক্ষীরদিঘি, যেখানে পড়েছিল সতীর ডান পায়ের আঙুল। এই দিঘিতেই থাকে দেবীর মূর্তি। ওই মূর্তি বছরে মাত্র ছ’ দিন পুজোর জন্য দিঘি থেকে তোলা হয়।

ক্ষীরদিঘির পাড়ে অসাধারণ সূর্যাস্ত দেখে ফিরে এলাম শান্তিনিকেতনে। আমাদের ভ্রমণের আজই শেষ সন্ধ্যা। স্মৃতি রোমন্থনের সন্ধ্যা।
কোভিডের আবহে ৮ দিনের ট্যুর করছি এবং পাঁচ জনের দলে চার জনের বয়স ৫৮ থেকে ৭১-এর মধ্যে, এটা শুনে অনেকেই চোখ কুঁচকেছিল। অনেক রকম ভয় দেখিয়েছিল। বলা হয়েছিল, বেড়াতে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে ফিরব।
কিন্তু সেই সব ভয় আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি। সব বাধা টপকে অসাধারণ একটা ট্যুর করতে পেরেছি। এই ৮ দিনের ভ্রমণে বুঝে গিয়েছি, বেড়াতে বেরোলেই অসুস্থ হয়ে ফিরতে হবে, এই ধারণা এক্কেবারেই অমূলক।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব জায়গায় চললে, ভিড় এড়িয়ে গেলে, সর্বজনীন জায়গায় মাস্ক না খুললে, মাঝেমধ্যেই স্যানিটাইজারে হাত সাফ করে নিলে আপনার সংক্রমণের কোনো ঝুঁকিই নেই।
আমি তো বলব, কলকাতায় একটু অসতর্ক হলেই সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, কিন্তু ফাঁকা জায়গায় বেড়াতে গেলে সে সবের কোনো আশঙ্কা নেই।
ভ্রমণ আমাদের করতেই হবে। ভ্রমণ এক দিকে আমাদের মনকে যেমন ভালো করে, তেমনই ভ্রমণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনদেরও সাহায্য করে, তাদের মুখে হাসি ফোটায়। সেটা তাজপুর, ঝিলিমিলি আর এই সিঙ্গিতে এসে বুঝেছি।
তাই ভ্রমণ চলবেই। আপাতত বাড়ি ফিরেছি, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে আবার বেরিয়ে পড়ব, হ্যাঁ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই।
আর এই সিঙ্গি তো রয়েছেই। সম্রাটদা এত দিন আমার ভার্চুয়াল বন্ধু ছিলেন, এখন মুখোমুখি আলাপের পর নিজের দাদার মতো হয়ে গিয়েছেন। বউদি আর শান্তিনিকেতনের বাকিদের যা আতিথেয়তা পেলাম, তা-ও অনবদ্য।
তাই, কলকাতার একঘেয়েমি জীবন থেকে মুক্তি পেতে আর কোথাও না হোক এই শান্তিনিকেতনে যে আসবই, তা বলাই বাহুল্য। (শেষ)
পুনঃ সিঙ্গিতে শান্তিনিকেতন হোমস্টেতে থাকতে চাইলে যোগাযোগ করুন: ৭০৪৪৭৯১৪৩৬
এই ভ্রমণকাহিনীর বাকি ৩টে পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
-
রাজ্য12 hours ago
বুধবার রাজ্যে আসছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ
-
দেশ2 days ago
মহারাষ্ট্র-কেরলে সংক্রমিত ৮০৮৬ বাকি দেশে মাত্র ৫০৭২, ২৩ মে’র পর সব থেকে কম দৈনিক মৃত্যু ভারতে
-
রাজ্য2 days ago
দক্ষিণবঙ্গে দু’ দিনের জন্য তাপমাত্রা বাড়লেও ফের ফিরবে শীত, উত্তরের পাহাড়ে তুষারপাতের সম্ভাবনা
-
ফুটবল2 days ago
এগিয়ে থেকেও ড্র করে পয়েন্ট খোয়াল এটিকে মোহনবাগান