বেশির ভাগ মানুষের কাছে বর্ষাকালটা ঘুরে বেড়ানোর সময়ই নয়। চার দিকে জল-কাদা মাখামাখি, এর মধ্যে ঘোরা যায় না কী! কিন্তু বর্ষার সত্যিকারের রূপ যদি উপভোগ করতে হয়, তা হলে বাড়িতে না থেকে বেরিয়ে পড়ুন। খুব বেশি দিন নয়, দিন পাঁচেক থেকে এক সপ্তাহ ছুটি নিলেই ঘুরে আসা যায়, ভারতের এমন এক ডজন জায়গার সন্ধান দিচ্ছে খবর অনলাইন।
জিম করবেট (উত্তরাখণ্ড)
বন্যপ্রাণী যাঁরা ভালোবাসেন বর্ষায় তাঁদের আদর্শ গন্তব্য। পর্যটকদের ভিড় নেই। একটা গুজব খুব প্রচলিত। বর্ষায় বন্ধ থাকে জিম করবেট। না, তা নয়। ধিকালা, বিজরানি, দুর্গাদেবী আর ঝির্না – এই চারটি জোনের মধ্যে ঝির্না সারা বছরই খোলা থাকে। আর কোশী নদীতে র্যাফটিং তো বর্ষাতেই সম্ভব। বছরের বাদ বাকি সময়ে তো জলই থাকে না। প্রতি দিন সকালে আর সন্ধ্যায় তিন ঘণ্টার জিপ সাফারির আয়োজন করা হয়। বর্ষায় করবেটে হাতি সাফারিরও ব্যবস্থা করা হয়। বনশুয়োর আর হরিণ দেখার সুবিধা বর্ষাতেই। প্রচুর পাখিও দেখা যায় এই সময়ে।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা, দিল্লি থেকে সরাসরি ট্রেনে মোরাদাবাদ। মোরাদাবাদ থেকে দু’ ঘণ্টার ট্রেনযাত্রায় রামনগর। মোরাদাবাদ-রামনগর বাস চলে। গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। দিল্লি থেকেও সরাসরি রামনগরের বাস আছে। বিমানে দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে যাওয়া যায় রামনগর। দিল্লি থেকে গাড়িতে ৬ ঘণ্টা। রামনগর থেকে ঝির্না ১৬ কিমি। রামনগরে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টরের অফিস থেকে সাফারি বুক করতে হয়। যোগাযোগ- (০৫৯৪৭)২৫১৪৮৯।
কোথায় থাকবেন
কুমায়ন মণ্ডল বিকাশ নিগমের টুরিস্ট রেস্ট হাউস। যোগাযোগ – ৮৬৫০০০২৫২২। অনলাইন বুকিং – www.kmvn.gov.in। ঝির্নায় বন দফতরের রেস্ট হাউস বুক করতে হলে রামনগরে ফিল্ড ডিরেক্টরের অফিসে যোগাযোগ। এ ছাড়া রামনগরে বেসরকারি হোটেল, রিসোর্ট আছে।
মান্ডু (মধ্যপ্রদেশ)
সংগীতজ্ঞা সুন্দরী হিন্দু কন্যা রূপমতী আর মুসলিম শাসক সংগীতপ্রিয় বাজবাহাদুরের প্রেমগাথা আজও মান্ডুর আকাশেবাতাসে ছড়িয়ে। ইতিহাস আর প্রকৃতির অপূর্ব মিলনক্ষেত্র এই মান্ডু। বর্ষায় এর রূপ যেন আরও খোলে। মান্ডুর পাশ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর রূপ বর্ষার জলে উপচে পড়ে। জলভরা মেঘ সমতল ছেড়ে ভেসে বেড়ায় মান্ডুর আকাশে। অবিরাম রিমঝিম বৃষ্টি অপূর্ব সুর সৃষ্টি করে। নদী-নালা-লেক জলে টইটম্বুর। পাহাড়ি-কন্যা মান্ডু সবুজের গালিচায় নিজেকে মুড়ে নিয়ে এক রোমান্টিক রূপে ডুবে যায়।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে কলকাতা-সহ ভারতের যে কোনও বড়ো শহর থেকে ইনদওর। সেখান থেকে মান্ডু ৯৫ কিমি। অনেক ট্রাভেল এজেন্সি দিনে দিনে মান্ডু বেড়িয়ে আনে। মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমও সপ্তাহান্তিক ট্যুরে মান্ডু বেড়িয়ে আনে। তবে মান্ডুতে দিন তিনেক না কাটাতে পারলে মন ভরে না।
কোথায় থাকবেন
মান্ডুতে এমপি পর্যটনের দু’টি থাকার ব্যবস্থা আছে। মান্ডু মালব রিট্রিট এবং মান্ডু মালব রিসোর্ট। অনলাইন বুকিং www.mptourism.com। এ ছাড়া মান্ডুতে বেসরকারি হোটেল, রিসোর্টও আছে।
আগুমবে (কর্ণাটক)
‘দক্ষিণ ভারতের চেরাপুঞ্জি’ বলে কথিত আগুমবে যাওয়া উচিত বর্ষাতেই। ভারতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের জায়গা আগুমবে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৬৪০মিমি। কর্ণাটকের মালনাড় অঞ্চলের এই গ্রাম ও তৎসন্নিহিত অঞ্চল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর – উঁচু পাহাড়, জলপ্রপাত, ঝরনা, নদী আর ঘন সবুজ জঙ্গল। ২১১০ ফুট উঁচু এই অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য ট্রেক রুট। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর আগুমবে বহু ওষধি বৃক্ষের আবাসস্থল। তাই এর আরেক নাম ‘হাসিরু হন্নু’ বা ‘সবুজ সোনা’। দেশের একমাত্র রেনফরেস্ট রিসার্চ স্টেশনটি এই আগুমবেতেই।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে বা বিমানে বেঙ্গালুরু গিয়ে বাস বা গাড়িতে আগুমবে ৩৮০ কিমি। কাছাকাছি শহর উদুপি, ৫৫ কিমি। কোঙ্কন রেলে উদুপি স্টেশন। মুম্বই থেকে উদুপি ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে আগুমবে।
কোথায় থাকবেন
উদুপি শহর বা সেখান থেকে ৬ কিমি দূরে মালপে সৈকতে প্রচুর বেসরকারি হোটেল আছে। সেখানে থেকে আগুমবে ঘুরে আসা যায়। তবে মন ভরবে না। আগুমবেতে থাকার জায়গা হাতে গোনা। আগুমবে বাস স্ট্যান্ড থেকে হাঁটা দূরত্বে কস্তুর আকার বাড়ি ‘দোদ্দা মানে’। বাড়ির মতো ঘরোয়া থাকা। আগে থেকে ফোন করে ব্যবস্থা করতে হয়। যোগাযোগ কস্তুর আকা (০৮১৮১-২৩৩০৭৫) বা ওঁর জামাই রবিকুমার পাই (৯৪৪৮৬০৩৩৪৩)।
বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০০ মিটার দূরে মাল্য রেসিডেন্সি। যোগাযোগ – ৮১৮১২৩৩০৪২/৯৪৪৮৭৫৯৩৬৩/৯৪৮০০৬১১২৭। ই মেল – [email protected]
থাকা যায় আগুমবে রেনফরেস্ট রিসার্চ স্টেশনেও। যোগাযোগ – ৯৯৫৫৫৫৫৮৫৪।
গোয়া
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্য গোয়া বর্ষায় যেন আরও মোহময় হয়ে ওঠে। মনসুনে গোয়া অত্যন্ত আদরণীয়। পশ্চিমঘাট পাহাড়শ্রেণির কোলের গোয়াকে বর্ষায় দেখে মনে হয়, কে যেন গোটা প্রদেশটাকে সবুজ জাজিমে মুড়ে দিয়েছে। গাছের পাতায় তখন বৃষ্টির মাতন, শাখে শাখে রংবেরঙের ফুলের বর্ণালি। পাখির কুজন মন মাতায়। আর আরব সাগরে ঢেউয়ের দোলা মন ভরায়। আর একটা মস্ত সুবিধা মনসুনে গোয়া বেড়ানোর। হোটেলগুলোতে ছাড় পাওয়া যায় প্রায় অর্ধেক। ১৫ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর গোয়ায় অফ সিজন।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে গোয়া এখন সরাসরি বিমান যাচ্ছে। দেশের অন্য মেট্রো শহর থেকে গোয়ার বিমান সার্ভিস আছে। কলকাতা বা দিল্লি থেকে সরাসরি ট্রেনে পৌঁছে যাওয়া যায় মাড়গাঁও। কলকাতা বা দিল্লি থেকে ট্রেনে মুম্বই গিয়ে সেখান থেকেও কোঙ্কন রেলপথে সোজা গোয়া পৌঁছে যাওয়া যায়। পশ্চিম ভারত তথা দেশের নানা দিক থেকে মিরাজ বা লোন্ডা এসে সেখান থেকে ট্রেনে চলে যাওয়া যায় মাড়গাঁও-ভাস্কো। মুম্বই থেকে গোয়ার রাজধানী পানাজি পর্যন্ত প্রচুর বাস চলে। এ ছাড়াও ম্যাঙ্গালোর, পুনে-সহ পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের নানা শহর থেকে বাস সংযোগ আছে গোয়ার।
কোথায় থাকবেন
গোয়া ট্যুরিজমের হোটেল আছে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সৈকতগুলোতে। অনলাইন বুকিং goa-tourism.com। এ ছাড়া সারা গোয়া জুড়ে প্রচুর বেসরকারি হোটেল, রিসোর্ট, লজ আছে।
চেরাপুঞ্জি (মেঘালয়)
বৃষ্টি দেখার জন্যই চেরাপুঞ্জি (খাসি ভাষায় সোহরা) যাওয়া। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয় বছরে ১১ হাজার মিমির বেশি আর তৎসন্নিহিত মৌসিনরামে বছরে বৃষ্টি হয় ১২ হাজার মিমির বেশি, যার ৯৫ শতাংশেরও বেশি হয় বর্ষার চার মাসে। বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের জায়গা মেঘালয়ের এই পাহাড়ি অঞ্চল। ৪৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত চেরাপুঞ্জিতে কখনও কখনও টানা বৃষ্টি হয়, ন’ দিন ধরে, এগারো দিন ধরে। সাধারণত অত্যধিক বৃষ্টির জায়গায় যা দেখা যায়, সেই ঘন সবুজ জঙ্গল এখানে নেই। এখানে আছে ফলের বাগান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কমলালেবু। বিশ্বের সব চেয়ে আর্দ্র জায়গায় যে দিন রোদ ওঠে, সে দিন আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। নীচে যতদূর চোখ যায়, বাংলাদেশের সমভূমি সুরমা ভ্যালি চোখে পড়ে। মন ভরে যায় এক নস্টালজিয়ায়।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে বা বিমানে গুয়াহাটি। সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে ১০৩ কিমি দূরে শিলং। শিলং থেকে পাহাড়ি পথ ধরে বাসে বা গাড়িতে ৫৪ কিমি দূরে চেরাপুঞ্জি। কলকাতা থেকে বিমানে সরাসরি শিলং আসা যায়।
কোথায় থাকবেন
শিলং থেকে দিনে দিনে ঘুরে নিতে পারেন চেরাপুঞ্জি। তা না হলে থাকতে পারেন চেরাপুঞ্জির ১৬ কিমি আগে চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্ট। যোগাযোগ – (০৩৬৩৭)২৪৪২১৮/২১৯/২২০ অথবা ৯৪৩৬১১৫৯২৫। থাকতে পারেন সোহরা প্লাজা (৯৭৭৪৯৭০৮২৫/৯৪৩৬৩০৮০০৭), কনিফেরাস রিসোর্টে (৯৪৩৬১৭৮১৬৪/৯৬১৫৭৯১৭৫২) বা পোলো অর্কিড রিসোর্টে (০৯৮৫৬০০০২২২)।
কোদাইকানাল (তামিলনাড়ু)
নীলগিরিরই অংশ পালনি পাহাড়। সেই পাহাড়েই কোদাইকানালের অবস্থান (২১৩৩ মিটার)। ভারতের অন্যান্য অংশে যখন বর্ষাকাল, তামিলনাড়ুতে তখন বর্ষাকাল হলেও সেই বর্ষায় তত জোর থাকে না, যতটা থাকে ফিরতি মৌসুমি বায়ুর সময়ে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে। তাই জুন-জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কোদাইয়ে বৃষ্টি হলেও তা ভোগায় না। নীল পাহাড়ের ছায়ায় ঘেরা সবুজে ছাওয়া সুন্দর প্রকৃতির মাঝে স্বাস্থ্যকর শহর কোদাই। কলা-কমলা আর পাইন- ইউক্যালিপ্টাসের শহর কোদাই। লেকের শহর, ফুলের শহর, পাখির শহর, ঝরনার শহর কোদাই। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোটেল ভাড়ায় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে বা বিমানে চেন্নাই হয়ে বাস বা গাড়িতে কোদাইকানাল যাওয়া যেতে পারে। দূরত্ব ৪৫২ কিমি। চেন্নাই থেকে ট্রেনে মাদুরাই পৌঁছে, সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে কোদাই (১২০ কিমি) অথবা ট্রেনে কোদাই রোড পৌঁছে সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে কোদাই (৮০ কিমি) যাওয়া যেতে পারে। হাওড়া থেকে সাপ্তাহিক কন্যাকুমারী এক্সপ্রেসে কোদাই রোড আসা যায়। হাওড়া থেকে ট্রেনে সোজা ত্রিচি পৌঁছে সেখান থেকেও বাস বা গাড়িতে ১৯২ কিমি দূরে কোদাই যাওয়া যেতে পারে।
কোথায় থাকবেন
কোদাইতে নানা মানের, নানা দামের বেসরকারি হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া আছে তামিলনাড়ু পর্যটনের হোটেল তামিলনাড়ু। অনলাইন বুকিং www.tamilnadutourism.org।
লাহুল-স্পিতি (হিমাচল প্রদেশ)
লাহুল-স্পিতি খ্যাত তার নৈসর্গিক শোভা, মনাস্ট্রি, গ্লেসিয়ার আর লেকের জন্য। গাছপালা নেই, ন্যাড়া পাহাড়, উপত্যকা জুড়ে বরফ আর গ্লেসিয়ার। সূর্যের প্রখর কিরণ, কনকনে বাতাস, গ্রীষ্মের দিনেও শীতের আধিক্য। অক্টোবর থেকে মে, বরফে মোড়া থাকে উপত্যকা। গাড়িও চলে না। হোটেলও বন্ধ থাকে। তাই এই অঞ্চলে বেড়ানোর মরশুম জুন থেকে সেপ্টেম্বর।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে বা বিমানে দিল্লি গিয়ে, সেখান থেকে বাসে সিমলা। বা ট্রেনে কালকা গিয়ে সেখানে থেকে টয় ট্রেন, বাস বা গাড়িতে সিমলা। তার পর সিমলা থেকে গাড়িতে হিন্দুস্তান-টিবেট রোড ধরে শতদ্রুর পাশ দিয়ে লাহুল-স্পিতির দিকে এগিয়ে চলা। এই পথে বাসও চলে। তবে খুব বেশি নয়। দিল্লি বা চণ্ডীগড় থেকে বাসে মানালি এসে সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে রোটাং পাস পেরিয়ে লাহুল-স্পিতিতে ঢোকা যায়।
কোথায় থাকবেন
এই পথে নারকান্ডা, রামপুর, সারাহান, কল্পা, কাজা, কেলং-এ হিমাচল পর্যটনের হোটেল আছে। অনলাইন বুকিং www.hptdc.nic.in।
এ সব জায়গা ছাড়াও নাকো, তাবোতে বেসরকারি হোটেল আছে।
লাদাখ (জম্মু-কাশ্মীর)
জলবায়ু, ভূ-বৈচিত্র্যে খুব একটা তফাৎ নেই লাহুল-স্পিতির সঙ্গে লাদাখের। তাই লাদাখেও বেড়ানোর মরশুম জুন থেকে সেপ্টেম্বর।
কী ভাবে যাবেন
সরাসরি বিমানে দিল্লি বা চণ্ডীগড় হয়ে লাদাখের প্রধান শহর লে যাওয়া যেতে পারে। শহর থেকে বিমানবন্দর ৯ কিমি। বাস বা গাড়ি পাওয়া যায়। ট্রেনে জম্মু গিয়ে সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে শ্রীনগর। সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে কারগিলে এক রাত কাটিয়ে ৪৩৪ কিমি দূরের লে যাওয়া যেতে পারে। আবার মানালি থেকে বাস বা গাড়িতে সারচুতে এক রাত কাটিয়ে পরের দিন পৌঁছে যান ৪৭৭ কিমি দূরের লে শহরে। লে পৌঁছে অন্তত ২৪ ঘণ্টা বিশ্রাম নিন। তার পর ভ্রমণ শুরু করুন। খুব তাড়াহুড়ো করবেন না। ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে ঘুরুন। না হলে মাউন্টেন সিকনেস হতে পারে। গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নিন দ্রষ্টব্য।
কোথায় থাকবেন
লে শহরে থাকার জন্য হরেক দামের হরেক মানের হোটেল আছে। তা ছাড়া জম্মু-কাশ্মীর পর্যটনের লে রিসোর্ট রয়েছে। অনলাইন বুকিং www.jktdc.co.in ।
মালসেজ ঘাট (মহারাষ্ট্র)
ভরা বর্ষাতেই রূপ খোলতাই হয় রূপসী মালসেজ ঘাটের। চার পাশে সহ্যাদ্রি পাহাড়, ধারা নামছে জলপ্রপাতের – তারই মাঝে ৭০০ মিটার উচ্চতায় সবুজে মোড়া উপত্যকা। বন্যজন্তু আর চেনা-অচেনা নানা পাখির কুজন মধুময় করে তোলে চার পাশের পরিবেশ। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে যাযাবরী ফ্লেমিংগোরা ভিড় জমায় মালসেজ ঘাটে।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে বা বিমানে মুম্বই বা পুনে। মুম্বই থেকে আহমেদনগর হয়ে বাস বা গাড়িতে মালসেজ ঘাট ১৫৪ কিমি। পুনে থেকেও ১৬৪ কিমি দূরের মালসেজ ঘাট পৌঁছনো যায় বাস বা গাড়িতে। ট্রেনে কল্যাণ পৌঁছে সেখান থেকেও বাস বা গাড়িতে চলা যেতে পারে মালসেজ ঘাট।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য আছে মহারাষ্ট্র পর্যটনের এমটিডিসি মালসেজঘাট। অনলাইন বুকিং www.maharashtratourism.gov.in । বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আছে সাজ বাই দ্য লেক মালসেজ। ই মেলে যোগাযোগ – [email protected]।
সাপুতারা (গুজরাত)
মহারাষ্ট্র-গুজরাত সীমানায় সহ্যাদ্রি পাহাড়ে ৮৭৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত গুজরাতের এক মাত্র শৈলশহর সাপুতারা। বছরে গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার মিমি বৃষ্টি হয় সাপুতারায়। বর্ষায় সবুজ শৈলশহর ঢেকে থাকে মেঘে। ভ্যালি ভিউ পয়েন্টে গিয়ে মনে হয় মেঘের জালে বন্দি আমরা। মেঘ আসে, মেঘ যায়, সব কিছু দৃশ্যমান হয়, আবার মেঘ ঢেকে দিয়ে যায়। এ ভাবেই চলে লুকোচুরি। সাপুতারা লেকও কখনও দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। আবার কখনও ভেসে ওঠে চোখের সামনে, বোঝা যায় এর রূপ। বর্ষায় মনসুন ফেস্টিভ্যালে মেতে ওঠে সাপুতারা।
কী ভাবে যাবেন
সাপুতারা যাতায়াতে মহারাষ্ট্রের নাসিকই সুবিধাজনক। ট্রেনে নাসিক রোড পৌঁছে সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে চলে যাওয়া যায় সাপুতারা। দূরত্ব ৮০ কিমি।
কোথায় থাকবেন
গুজরাত পর্যটনের তোরান হিল রিসোর্ট। অনলাইন বুকিং www.gujarattourism.com। এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি হোটেল আছে।
ওয়েনাড় (কেরল)
সমুদ্রতীর মাত্র ৭৬ কিমি দূরে। বৃষ্টির মনভোলানো রূপের সুবাদে ওয়েনাড় এখন ক্রমশই ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘মনসুন ডেস্টিনেশন’ হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠছে। বর্ষায় ওয়েনাড়ের পাহাড়-জঙ্গলের রূপ কেমন খোলে তা বোঝাতে তিন দিন ধরে মনসুন ফেস্টিভ্যাল ‘স্প্ল্যাশ’-এর আয়োজন করা হয় এখানে। নাম-না-জানা অসংখ্য ঝরনার অবিরাম ধারাপাত মোহময়ী করে তোলে ওয়েনাড়কে।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে কোঝিকোড় পৌঁছে সেখান থেকে বাসে ওয়েনাড়ের বিভিন্ন জায়গা ভাইথিরি, কালপেট্টা আর সুলতান বাথেরি যাওয়া যায়। বেঙ্গালুরু থেকে গাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। মাইশুরু, উটি, কান্নুর থেকে বাস বা গাড়িতে আসা যায় ওয়েনাড়ের নানা জায়গা।
কোথায় থাকবেন
সুলতান বাথেরিতে আছে কেরল পর্যটনের পেপ্পার গ্রোভ। অনলাইন বুকিং www.ktdc.com । এ ছাড়া সুলতান বাথেরি, ভাইথিরি, কালপেট্টা ও মান্নানথাভেড়িতে বেসরকারি হোটেল আছে।
দারিংবাড়ি (ওড়িশা)
প্রায় ৪ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ‘ওড়িশার কাশ্মীর’ দারিংবাড়ি। জোর এক পশলা বৃষ্টি হওয়ার পরে জল কোথায় গড়িয়ে যায় টের পাওয়া যায় না। অথচ আবহাওয়া হয়ে ওঠে মনোরম। চার দিকের পাহাড়গুলো আরও সবুজ হয়ে যায়। নীল আকাশ আরও নীল হয়। ফলস্গুলো জলে ভরে ওঠে। প্রকৃতি কেমন যেন ঝলমল করে। এত ঝকঝকে আবহাওয়া ভাবাই যায় না।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে বিশাখাপত্তনম পথে ট্রেনে ব্রহ্মপুর। সেখান থেকে দারিংবাড়ি ১২০ কিমি বাস বা গাড়িতে। ট্রেনে ভুবনেশ্বর এসে সেখান থেকে গাড়িতে প্রায় ২৫০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে আসা যায় এই দারিংবাড়িতে।
কোথায় থাকবেন
এখানে থাকার জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আছে পাহাড়ের ঢালে ডিয়ার ইকো রিসোর্ট (০৯৪৩৮৪২২৪৫২/০৯৮৬১৫৯৬২৬১/০৯৩৩৮৮৮০৮৯৪) এবং মেন রোডে ইউটোপিয়া হোটেল (০৯৪৩৭৭৮১৯৭২)।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।