ইতালি ভ্রমণ: পায়েস্তুমের মাদ্রে ও অন্যান্য

0

mousumiমৌসুমি বিলকিস

মাদ্রের সঙ্গে দোস্তি হয়ে গেল। আলবের্তোর মা। তিরাশি। কিন্তু সাঙ্ঘাতিক কর্মঠ। তাঁর বড়োসড় বাগানে চাষ করেছেন পেঁয়াজ, রসুন, জুকিনি, শশা, লেটুস পাতা, আর্টিচোক, ব্রকোলি, লেবু, আপেল, ডুমুর, অলিভ, সর্ষে গাছও। সব কিছু অর্গানিক। খাঁচায় একগাদা মুরগি। পাঁউরুটি টুকরো, স্যালাড পাতা ইত্যাদি খায়। মুরগিরা পাতা খায় এর আগে দেখিনি। হোটেলে থাকতে চাইনি। আলবের্তোর বাড়িতেই ব্যবস্থা। তাঁর, তাঁর দিদি আনামারিয়া আর মাদ্রের আতিথ্য চমৎকার। মাদ্রের ট্র্যাডিশনাল নানা রকম পদের সঙ্গে আনামারিয়ার তৈরি রেড ওয়াইন খাচ্ছি রোজ। সে অলিভ তেলও বানায়, সারা বছরের জন্য টমেটো সসও। চাকরিও করে। ওয়াইন, অলিভ তেল বা টমেটো সস বানানো আগে একটা যৌথ বিষয় ছিল। প্রতিবেশীরা সবাই সবাইকে সাহায্য করত। সেই ট্র্যাডিশন আর নেই। সব বাড়িতে বানানোও হয় না। এখন সবই কিনতে পাওয়া যায়। অন্য দিকে প্রবল অর্থনৈতিক চাপের মুখে লোকজনের সময়ও কমে গেছে।

মাদ্রে কয়েকটি ইংরেজি শব্দ শিখেছিলেন আমেরিকান সৈন্যদের থেকে; থ্যাক্যু, ভেরি মাচ্‌, গুড্‌। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নাজিদের হটিয়ে সমুদ্রপথে এই অঞ্চলে ঢুকেছিল আমেরিকান সৈন্যদল। মাদ্রে তখন ছোট্ট, ন’ বছরের বালিকা। ওরা চকোলেট দিয়েছিল। রান্নাঘরে বসে তাঁর জীবনের কথা বলতেন তিনি। শেষে বলতেন, কাপিতো (বুঝেছ) ? আমি: কাপিস্কো (বুঝেছি) অথবা, নো কাপিস্কো (বুঝিনি)।

Italy: news paper clipping

দু’দিনের সিনেমা কনভেনশন। দু’দিনই উপ্‌চানো ভিড়। আর রোজই কোনও না কোনও কাগজে ছবি-সহ খবর। প্রথম দিনের থিম ইতালি। সঙ্গে ইতালিয়ান বুফে; মোজ্জারেল্লা (গরুর দুধ থেকে তৈরি এই অঞ্চলের স্পেশাল খাবার। খানিকটা ছানার মতো।), ওয়াইন ও আরও অনেক কিছু। দ্বিতীয় দিনের বিষয় ভারত। আমার ফিল্মের স্ক্রিনিং, কথোপকথন আর পঞ্জাবের প্রবাসী তরুণদের ভাংড়া। বুফেতে আমের রস, শিঙাড়া, ভাত, মাংস। সৌজন্যে প্রবাসী ভারতীয় বিজয়জি ও তাঁর স্ত্রী কুমারী সন্তোষ। ইতালিয়ানরা খুশি। রোমের ভারতীয় দূতাবাসের মি. অমিত ভার্মাও খুব উপভোগ করলেন। ইভেন্ট ম্যানেজার ভ্যালেরিয়া স্টিচ-রেডি শাড়ি পরে এসেছিল, আমিও বাঙালি স্টাইলে শাড়ি। ভার্মাজি খানিক লজ্জা লজ্জা মুখে আমাদের দু’জনকে দু’পাশে রেখে ছবি তুলতে চাইলেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক্‌।এখানেই আলাপ বহু পুরনো শহর সালের্নোর ভাস্কর এনরিকা ও গায়ক চিজারের সঙ্গে।

Italy: before-screening

এখানকার মানুষজন অতিথিপরায়ণ। কথা তো বলছেই, খাওয়াচ্ছে। পিজ্জা দোকানের মালিকও খাওয়াল ব্রুসকেত্তা, এখানকার টিপিক্যাল অ্যাপেটাইজার। কত জনের নিমন্ত্রণ যে রক্ষা করা হল না। এক দিন মধ্যরাতে ডোমিনিকোর পিজ্জেরিয়ায় কত রকম পিজ্জা খেলাম! মাছেরও। এমনকি মিষ্টি পিজ্জাও। দেখলাম পিজ্জা উনুন। ডোমিনিকো যত্ন করে দেখাল পিজ্জা তৈরির পদ্ধতি। আর এক দিন রাত দু’টোয় নতুন সব স্যান্ডুইচের সঙ্গে পরিচিতি। শেষ পাতে পৃথিবী বিখ্যাত নুতেল্লা চকোলেটের স্যান্ডুইচও। এক কৃষকের বাড়ি। ফল সবজি চাষ করা ছাড়াও গরু, ভেড়া, শুয়োর পোষেন ও মাংস বিক্রি করেন। অতুলনীয় সিরাপ খেলাম, ওদের বাগানের পুদিনা পাতার। বিজয়জির বাড়িতে এক দিন ডিনারে খেলাম ভারতীয় খানা। শেষে ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রে সুরের মহড়া। সঙ্গতে বিজয়জির ছোট ছেলে পাওলো। অসাধারণ। শেকড়ের টান।

খ্রিস্টজন্মের ৫০০ বছর আগের দেবী হেরা। এখানে তার মন্দির সারা বিশ্বে বিরলতম গ্রীকস্থাপত্যের নিদর্শন, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ।এই মন্দিরের ছবি আঁকা টি-শার্ট উপহার দিলেন ডালমাজিও ভোজা।মন্দিরের সামনেই তাঁর সুন্দর সাজানো নানা রকম বিরল ও অত্যন্ত সুন্দর জিনিসপত্রের দোকান।‘ভোজা’ পদবি নয়, তিনি যে অঞ্চল থেকে এসেছেন সেই অঞ্চলের পরিচয়বাহক।

মারতিনা মারিনো তৈরি করেন পারফিউম। সুন্দর সুন্দর বোতলে সাজানো দোকান। পায়েস্তুমের বিখ্যাত গোলাপ ও মশলার পারফিউমও আছে। এখানে দু’পা হাঁটলেই কফি বার। এরা আড্ডাবাজ। রিসেশনের ধাক্কায় অবশ্য কিছুটা টালমাটাল। তবু এদের আন্তরিকতা মনে রাখার মতো।

(চলবে)

ছবি 

১। জুকিনি হাতে নিজের বাগানে মাদ্রে

২। খবরের কাগজে

৩।স্ক্রিনিং-এর আগে আলবের্তো, ভ্যালেরিয়া, মি. ভার্মা ও অন্যান্যদের সঙ্গে

ছবিঃ লেখক ও আলবের্তো ফ্রাঙ্কোর সৌজন্যে

dailyhunt

খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল

বিজ্ঞাপন