শরীর আর মন দু’টোই দীর্ঘদিন ঘরবন্দি। এ বার একটু হাঁফ ছাড়া দরকার। আর পুজোও তো এসে গেল। এ দিকে করোনাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তাই এ বার বেরিয়ে পড়াই যাই। শুধু মাথায় রাখবেন স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা।
এমনই কিছু জায়গার কথা বিশদে জানাচ্ছে খবরঅনলাইন। আজ পঞ্চম পর্বে ওড়িশার সমুদ্রসৈকত চাঁদিপুর। তিন-চার দিনের ছোট্ট ছুটিতে ঘুরে আসুন চাঁদিপুর।
ঘোরাঘুরি
ছোট্ট অবকাশ যাপনের মনোরম জায়গা চাঁদিপুর। এখানে বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, ভাটার টানে সমুদ্র সরে যায় অনেক দূরে। আবার জোয়ারে সমুদ্রের ঢেউ ধাক্কা মারে পান্থনিবাসের চৌহদ্দিতে। দিনে দু’ বার সমুদ্রের এই খেলা চলে। চোরাবালি বা চোরাস্রতের তীব্রতা নেই এই সৈকতে, মনের আনন্দে হেঁটে বেড়ান। লাল কাঁকড়ার সঙ্গে বিচরণ করুন, ঝিনুক সংগ্রহের নেশায় মাতুন। সূর্যোদয় আর চন্দ্রোদয় দুই-ই মনোরম এই চাঁদিপুরে।

ঘুরে আসুন –
(১) বুড়িবালামের মোহনা – চাঁদিপুর থেকে ৩ কিমি, বলরামগড়িতে।
(২) চষাখণ্ড – বালেশ্বর হয়ে ২৩ কিমি। বুড়িবালামের তীরে এই চষাখণ্ডেই বাঘা যতীন তাঁর চার সঙ্গীকে নিয়ে চার্লস টেগার্টের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম লড়াইয়ে নেমেছিলেন।
(৩) রেমুনা – বালেশ্বর হয়ে ১৯ কিমি। বৈষ্ণবতীর্থ রেমুনা ওড়িশার বৃন্দাবন। এখানে রয়েছে ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির। মন্দিরটি ১৫০ বছরের প্রাচীন, মন্দিরগাত্রে কৃষ্ণলীলার নানা আখ্যান উৎকীর্ণ। জরাজীর্ণ রাজবাড়িটিও দ্রষ্টব্য।

(৪) পঞ্চলিঙ্গেশ্বর – চাঁদিপুর থেকে ৩৮ কিমি, রেমুনা থেকে ২৬ কিমি। চার দিক অনুচ্চ পাহাড়ে ঘেরা। নীলগিরি পাহাড়ের ঢালে গহন বনের মধ্যে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আড়াইশো সিঁড়ি ভেঙে দেবতার থান। পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে সুন্দরী ঝরনা। পাহাড়ি খাদের মধ্যে ছোট্ট এক ফাটলে বহমান জলের মধ্যে পাঁচ শিবলিঙ্গের অধিষ্ঠান। পাহাড়ের পাদদেশে প্রাচীন রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও জগন্নাথ মন্দির।
(৫) কুলডিহা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – চাঁদিপুর থেকে ৫৪ কিমি। আদতে ওড়িশার বিখ্যাত সিমলিপাল অভয়ারণ্যেরই অংশ কুলডিহা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ২৮২ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে শাল, পিয়াশাল, শিশু, মহানিম, আম, জাম, বহেড়া, শিমুলে ছাওয়া কুলডিহা অরণ্যে দেখা মেলে হাতি, চিতল হরিণ, জংলি বিড়াল, লম্বা লেজওয়ালা বানর-সহ নানা জন্তুর। অরণ্য চিরে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী কুলডিহা। নজরমিনার রয়েছে অরণ্যের ৫ কিমি ভেতরে গড়শিমুলিয়ায়।

কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে বালেশ্বর গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে চাঁদিপুর যেতে পারেন।
হাওড়া থেকে বালেশ্বর যাওয়ার সুবিধাজনক ট্রেন: (১) হাওড়া-সেকেন্দরাবাদ স্পেশাল সকাল ৮.৩৫-এ হাওড়া ছেড়ে বালেশ্বর পৌঁছোয় সকাল ১১.৪০-এ; (২) হাওড়া-পুরী স্পেশাল সকাল ৯.১৫-য় হাওড়া ছেড়ে বালেশ্বর পৌঁছোয় বেলা ১২.৪৮-এ।
বালেশ্বর থেকে ফেরার ট্রেন: (১) সেকেন্দরাবাদ-হাওড়া স্পেশাল দুপুর ১.৫৩-য় বালেশ্বর ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় বিকেল ৫.৪০-এ; (২) পুরী-হাওড়া স্পেশাল বিকেল ৩-৩৫-এ বালেশ্বর ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় রাত ৮টায়; (৩) যশবন্তপুর-হাওড়া ফেস্টিভ্যাল স্পেশাল বিকেল ৩.৫০-এ বালেশ্বর ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় রাত ৭.৫০-এ।
সড়কপথে
কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে যেতে পারেন চাঁদিপুর। পথ: (১) কলকাতা থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে জাতীয় সড়ক ১৬। তার পর কোলাঘাট-খড়গপুর-জলেশ্বর-বালেশ্বর হয়ে চাঁদিপুর, দূরত্ব ২৫৮ কিমি; (২) কলকাতা থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে জাতীয় সড়ক ১৬। তার পর কোলাঘাট-মেচেদা-নন্দকুমার-হেড়িয়া–এগরা-জলেশ্বর-বালেশ্বর হয়ে চাঁদিপুর, দূরত্ব ২৫৮ কিমি।

কোথায় থাকবেন
চাঁদিপুরে থাকার জন্য রয়েছে ওড়িশা পর্যটনের পান্থনিবাস। অনলাইন বুকিং: https://www.panthanivas.com। এ ছাড়া বেসরকারি হোটেলও রয়েছে। গুগুল সার্চ করলে সন্ধান পাওয়া যাবে।
কী ভাবে ঘুরবেন
এক দিন গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসুন বুড়িবালামের মোহনা, চষাখণ্ড, রেমুনা, পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। আর একটা দিন রেখে দিন কুলডিহা দেখার জন্য।
মনে রাখবেন
(১) টিকার দু’টি ডোজের সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখবেন। না হলে আরটি-পিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট।
(২) চাঁদিপুরে যেখানে থাকবেন সেখান থেকে আপনার ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
(৩) ট্রেনের বিস্তারিত তথ্যের জন্য দেখুন erail.in।
আরও পড়তে পারেন
বন্দিদশা থেকে মুক্তির স্বাদ: পুজোয় চলুন ফুটিয়ারি
বন্দিদশা থেকে মুক্তির স্বাদ: পুজোয় চলুন ঝিলিমিলি
বন্দিদশা থেকে মুক্তির স্বাদ: পুজোয় চলুন কাশীরাম দাসের সিঙ্গি গ্রাম
বন্দিদশা থেকে মুক্তির স্বাদ: পুজোয় চলুন ঘাটশিলা