কেদারনাথ মন্দিরের কাছে রবিবার ভোরে ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন সাতজন। দুর্ঘটনার পরই রোববার ও সোমবার হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। একইসঙ্গে তিনি হেলি-পরিষেবার জন্য একটি কঠোর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
হেলিকপ্টারে থাকা সাতজনের মধ্যে পাঁচজন তীর্থযাত্রী, একজন চালক এবং একজন বদ্রীনাথ-কেদারনাথ মন্দির কমিটির কর্মী ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে মহারাষ্ট্রের শ্রদ্ধা রাজকুমার জয়সওয়াল (৩৫) ও তাঁর দুই বছরের সন্তান কাশী, গুজরাটের রাজকুমার সুরেশ জয়সওয়াল (৪১), উত্তরাখণ্ডের বিক্রম সিং রাওয়াত এবং উত্তরপ্রদেশের বিনোদ দেবী (৬৬) ও তুষ্টি সিং (১৯) ছিলেন। পাইলটের নাম রাজবীর সিং চৌহান।
দুর্ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী ধামি বলেন, “আজ সকালে খারাপ আবহাওয়ার কারণে একটি হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে। প্রাণ হারানোদের জন্য আমি প্রার্থনা করি। জরুরি বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে DGCA-র নিয়ম যেন ভাঙা না হয় এবং হিমালয়ের উচ্চাঞ্চলে যারা হেলিকপ্টার চালাচ্ছেন, তাঁদের এই অঞ্চলের অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। অ্যাভিয়েশন সংস্থাগুলিকেও তা নিশ্চিত করতে হবে। কন্ট্রোল ও কম্যান্ড সেন্টার তৈরি করতে হবে। এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
দুর্ঘটনার কারণ
রুদ্রপ্রয়াগ জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক নন্দন সিং রাজওয়ার জানান, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, ঘন কুয়াশা এবং দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসায় পাইলটের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। কেদারঘাটির পার্বত্য অঞ্চল অত্যন্ত সংকীর্ণ হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারালে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পর হেলিকপ্টারটিতে আগুন ধরে যায়।
হেলিকপ্টারটি বেসরকারি সংস্থা অ্যারিয়ান অ্যাভিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড পরিচালিত। ভোর ৫:৩০ নাগাদ কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই গৌরিকুণ্ডের জঙ্গলের উপরে গৌরী মাই খার্ক নামে দুর্গম এলাকায় ভেঙে পড়ে।
#WATCH | Uttarkhand Helicopter Crash | Dehradun | Chief Minister Pushkar Singh Dhami says, "… This morning, a helicopter crashed due to bad weather. I pray to God for those who lost their lives. An emergency meeting has been called immediately, in which instructions have been… pic.twitter.com/NEwagB6i4I
— ANI (@ANI) June 15, 2025
নতুন নিয়মের পথে রাজ্য সরকার
এই দুর্ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী ধামি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন, যারা হেলিকপ্টার পরিষেবার বর্তমান প্রোটোকল পর্যালোচনা করবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম তৈরি করবে।
নতুন SOP-তে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে—
- প্রতিটি হেলিকপ্টারের টেকনিক্যাল চেক
- আবহাওয়ার রিয়েল টাইম পর্যবেক্ষণ
- অভিজ্ঞ পাইলট ছাড়া হিমালয়ের উচ্চভূমিতে উড়ানের অনুমতি নয়
এছাড়া, অতীতের দুর্ঘটনাগুলির তদন্তে গঠিত হাই-লেভেল কমিটিকে এবার কেদারনাথের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আরও দুটি দুর্ঘটনা
গত ৮ মে গঙ্গোত্রী ধামে যাওয়ার পথে উত্তরকাশীতে আরেকটি হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে, তাতে ছ’জন মারা যান। ৭ জুন কেদারনাথে যাওয়ার একটি হেলিকপ্টার মাঝ আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণ করে।
এই দুর্ঘটনা ঘটে এমন সময়, যখন দেশের মধ্যে বিমান নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কিছুদিন আগেই লন্ডনগামী একটি এয়ার ইন্ডিয়া বিমান আহমেদাবাদে ভেঙে পড়ে, তাতে ২৪১ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়।