পর্যটনের ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল পশ্চিমবঙ্গ। ২০২৪ সালে রাজ্যে মোট ১৮.৫ কোটি পর্যটকের আগমন ঘটেছে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যা। সোমবার রাজ্য বিধানসভায় এই তথ্য প্রকাশ করেন পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।
এই সংখ্যা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ প্রতিবেশী বাংলাদেশে অশান্তির কারণে গত বছরের আগস্ট থেকে সে দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। সাধারণত বাংলাদেশ থেকেই সর্বাধিক পর্যটক আসেন রাজ্যে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে রাজ্যে এসেছিলেন ১৪.৫ কোটি পর্যটক, এবং ২০২২ সালে এসেছিলেন ৮.৪ কোটি। ২০২২ সালে ১০ লক্ষ বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন। রাজ্য এবার কেরল ও রাজস্থানের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে এবং বিগত বছরে সেই দুই রাজ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন পর্যটনমন্ত্রী।
বর্তমানে রাজ্যে ৫,৩২২টি হোমস্টে রয়েছে এবং পর্যটন দফতর এই পরিষেবার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করতে ‘সাংস্কৃতিক পর্যটন’-এর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, বিশেষত হোমস্টে পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে।
ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার (TAFI) পূর্বাঞ্চলীয় কমিটির প্রতিনিধি অনিল পাঞ্জাবি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির কারণ এর বৈচিত্র্যময় আকর্ষণ এবং সাশ্রয়ী ভ্রমণ খরচ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা—সব মিলিয়ে রাজ্য পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটরস (IATO)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্ত বলেন, “পর্যটন শিল্পে পশ্চিমবঙ্গের উত্থান কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। এটি সরকারের এবং পর্যটন শিল্পের যৌথ প্রচেষ্টার ফল। সাম্প্রতিক সরকারি উদ্যোগ ও ইভেন্টের কারণে আমরা বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে দৃঢ়ভাবে জায়গা করে নিচ্ছি।”
তবে সরকারি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অশান্তির কারণে পর্যটকের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারত। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে মূলত চিকিৎসার প্রয়োজনেই বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ভ্রমণ পর্যটনে প্রভাব পড়েছে।
পর্যটনের এই সাফল্যে রাজ্য সরকার নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে চাইছে এবং আগামী দিনে আরও উন্নত পরিষেবা নিশ্চিত করতে চাইছে বলে সূত্রের খবর।