বাংলার টেরাকোটা, ডোকরা ও অন্যান্য হস্তশিল্পকে সারা দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা থেকেই মুম্বইয়ে যাত্রা শুরু করল পেট্রিকোর। এর নেপথ্যে রয়েছেন দুই বঙ্গকন্যা, শ্রেয়া রায়চৌধুরী আর অভিধা মিত্র।
‘পেট্রিকোর’— আপাত অপরিচিত এই ইংরেজি কথাটির অর্থ বৃষ্টির প্রথম স্পর্শে মাটি থেকে বেরোনো সেই সোঁদা গন্ধ। আরেক অর্থে এটিকে মাটির টানও বলা যেতে পারে। তাই পেট্রিকোরের ট্যাগলাইন, ‘ফ্রম দ্য কোর অফ বেঙ্গলস হার্ট’ অর্থাৎ বাংলার হৃদয় থেকে। অভিধা আর শ্রেয়ার মূল ভাবনা ছিল বাংলার হস্তশিল্পকে যদি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয় করা যায়।
শুরু থেকেই শ্রেয়া আর অভিধার এই উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে মানসিক ভাবে সঁপে দিয়েছেন অভিধার স্বামী অমিত দাস। জন্ম থেকে মুম্বইনিবাসী হলেও নিজের শিকড়ের টান কখনও ভোলেননি। তাই অমিতবাবুকে এই ভাবনার কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই সায় দেন তিনি।
পেট্রিকোরের ব্যবসার ধরনটি হল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিস মুম্বইতে নিয়ে গিয়ে সেখানে ইচ্ছুকদের মধ্যে বিক্রি করা। তবে কলকাতারও হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। এখানেও পেট্রিকোরের একটি শাখা খোলা হয়েছে। তার দায়িত্বে আছেন শ্রয়ণ সেন।
এই ব্যাপারে অভিধা বলেন, “পেট্রিকোর শব্দটা একটু অন্য রকম, মানে সবাই ঠিক বুঝবে না। কিন্তু যে বুঝবে সে ভালো না বেসে থাকতেও পারবে না। পেট্রিকোর নিয়ে আমাদের ইচ্ছেটাও অনেকটা ঠিক সে রকমই। বিজ্ঞাপন শিল্পের জগতে থেকে মন আর শরীর দু’টোই জর্জরিত। এক দিন ভাবলাম কী বা করছি জীবনের সাথে। ক্লান্তি ছাড়া নিজের কিছুই থাকছে না, কিছু একটা থাকুক যা নিজের বলতে পারি। আমি আর শ্রেয়া ধরলাম হাত আর পথ চলা শুরু হল পেট্রিকোরের। পাশে পেলাম অমিত আর আমার পরিবারের সকলকে। বাংলার নিজস্ব শিল্পকলা যা হারিয়ে যেতে বসেছে তাঁকে আবার জীবন্ত করে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য। আর লোকে জানুক বাংলায় কী রত্ন লুকিয়ে আছে। এ ভাবে সবাই যখন শিল্প আর মাটির টানে বাংলার কাছে আসবে হয়তো মানুষের মনে যান্ত্রিকতাটাও অনেকটা কমে যাবে”। অভিধার সাথে এক মত পোষণ করে তাঁর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু শ্রেয়া বলেন, “পেট্রিকোর শুরু করার পেছনে একটাই ভাবনা ছিল, বাংলার জন্য কিছু করা, সেই সঙ্গে নিজের জন্যও। এমন কিছু, যেটা করে আনন্দ পাওয়া যায়। আর সেই ভাবনা থেকে হঠাৎ মনে হল যদি বাংলার শিল্পীদের হাতের কাজ আমরা তুলে ধরি মুম্বইয়ের মাটিতে। এখন আমাদের শুধু একটাই লক্ষ্য, পেট্রিকোরকে আরও বড়ো করা”।
নিজেদের ফেসবুক পেজে হস্তশিল্পগুলির নিদর্শন দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু হল পেট্রিকোর। পেট্রিকোরের ফেসবুক পেজ থেকেই আপাতত জিনিসগুলি কিনতে পারবেন ইচ্ছুকরা। ক্রেতাদের কাছে পচ্ছন্দসই জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব অভিধা-শ্রেয়া-শ্রয়ণের।
কলকাতার শ্রয়ণ বলেন “আমাকে যখন ওঁরা বললেন পেট্রিকোরের ব্যাপারে, এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। এ রকম উদ্যোগের সাথে নিজেকে যুক্ত করে গর্বিত লাগছে। নিজের বাংলার জন্য কিছু করতে আমি সব সময় তৈরি। পেট্রিকোরের মাধ্যমে সারা দেশে বাংলার হস্তশিল্পের আরও প্রসার হবে এই আশাই রাখি। ভবিষ্যতে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে আমাদের এই প্রয়াস”।
খবরের সব আপডেট পড়ুন খবর অনলাইনে। লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।