ওয়েবডেস্ক: সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গোল করে দুমাথাওয়ালা ঈগলের চিহ্ন দেখিয়েছিলেন সুইটজারল্যান্ডের দুই ফুটবলার। কারণ তাঁরা ছিলেন আলবানিয়ান বংশোদ্ভূত। সার্বিয়ানদের সঙ্গে সংঘাতের জেরে গত শতকে যুগোস্লাভিয়া(সার্বিয়া সে সময় যুগোস্লাভিয়ার অন্তর্ভূক্ত ছিল) তাঁদের পরিবারকে। সেই জায়গা থেকেই আলবিনীয় জাতিসত্তার প্রতীক ‘দুমাথাওয়ালা ঈগল’ দেখিয়েছিলেন জাকা ও শাকিরি। কিন্তু ফুটবলের মঞ্চে রাজনীতি টেনে আনা ফিফার নিয়ম বহির্ভূত। তাই কোনোরকমে শাস্তি এড়ান দুই ফুটবলার।
সেই ঘটনার দিন পনেরোর মধ্যেই ফের বিশ্বকাপে এসে পড়ল রাজনীতি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন দোমাগজ ভিদা। পরে টাইব্রেকারেও গোল করেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার জয়ের এই অন্যতম নায়ক ম্যাচের শেষ করে ফেললেন এক বিতর্কিত কাণ্ড।
জয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে তিনি ও প্রাক্তন ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলার ওগেনজেন ভুকোজেভিচ সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে দুজনকেই বলতে দেখা যায় ‘গ্লোরি টু ইউক্রেন’ বা ‘ইউক্রেনের জয়’। আর সেই নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। ২০১৪ সালে ‘কমলা বিপ্লবে’র মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে পতন ঘটে রুশপন্থী সরকারের। তারপর থেকে ক্রিমিয়া ও আরও দুটি অঞ্চল চলে গেছে রাশিয়ার দখলে। ক্রিমিয়া গণভোটের মাধ্যমে ঠিক করে যে তারা রাশিয়ার সঙ্গে থাকবে। সেই গণভোট পরিচালনা করেছিল রুশ সেনাবাহিনী। অন্যদিকে দোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল দখল করে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা। তাদের সমর্থন ও সহায়তা দেয় রাশিয়া। শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন সরকার মেনে নেয়, ওই অঞ্চল দুটি ‘সাময়িক ভাবে রাশিয়া কর্তৃক অধিকৃত’। এলাকা দুটির নাম বর্তমানে দোনেস্ক প্রজাতন্ত্র ও লুহানস্ক প্রজাতন্ত্র। ইউক্রেনের ক্ষমতাসীনরা রাশিয়াকে আক্রমনকারী হিসেবে দেখে, যদিও সে দেশের বহু মানুষ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার পক্ষে। কিন্তু বর্তমান সরকার পশ্চিম বিশ্ব ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ।
সে যাই হোক, ‘ইউক্রেনের জয়’ কথাটি সে দেশের সেনাবহিনীর শ্লোগান। যা কার্যত রাশিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়। রাশিয়াকে হারিয়ে এই শ্লোগান দেওয়ার রাজনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। স্বাভাবিক ভাবেই ভিদার এই ভিডিও দ্রুত প্রচার হতে শুরু করে রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলিতে। দেশ জুড়ে তুলকালাম শুরু হয়ে যায়। ভিদাকে সেমিফাইনালে খেলতে না দেওয়ার দাবি ওঠে।
পরিস্থিতি সামলাতে ভিদা বলেন, তিনি স্রেফ মজা করেছিলেন, ভেবেছিলেন রুশরা মজাটা বুঝতে পারবে। আরও বলেন, যেহেতু তিনি এবং ওগেনজেন দীর্ঘদিন ডায়নামো কিয়েভে (ইউক্রেনের বিখ্যাত ক্লাব) খেলেছেন, তাই সে দেশে তাঁদের অনেক বন্ধু আছে। তাঁরা এদিন ক্রোয়েশিয়াকে সমর্থন করেছিন। তাঁদের জন্যই ওই কথা বলেছেন তিনি।
এই সব ব্যাখ্যা দিয়ে ফিফার শাস্তি এড়ালেও অযাচিত ভাবে রাজনীতি এনে বিশ্বকাপে নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন ভিদা।