নয়াদিল্লি: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) টাকা ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছে। ‘অসম্ভব ত্রয়ী’— নির্দিষ্ট বিনিময় হার, উন্মুক্ত মূলধনী হিসাব এবং স্বাধীন মুদ্রানীতি— এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে বজায় রাখার সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আরবিআই।
নতুন গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্র তাঁর মেয়াদের শুরুতেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মন্দার ঝুঁকি, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা এবং টাকার দূর্বল অবস্থা তাঁকে চাপের মুখে ফেলেছে। মলহোত্রর পূর্বসূরি শক্তিকান্ত দাস টাকা মূল্য রক্ষায় কঠোর নীতি অনুসরণ করলেও, মলহোত্র টাকা ব্যবস্থাপনায় নমনীয়তার পথে হাঁটছেন।
নীতিতে পরিবর্তন
ব্লুমবার্গ নিউজ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মলহোত্র এবং তাঁর টিম টাকা বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা করেছেন। মলহোত্রর নেতৃত্বে আরবিআই এশিয়ার অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে টাকাকে আরও বেশি মুক্তভাবে চলতে দিতে প্রস্তুত, তবে অতি দ্রুত পতন ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতি পরিবর্তন রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মনোনিবেশ করতে পারবে। কুয়ান্টইকো রিসার্চের অর্থনীতিবিদ বিবেক কুমার বলেন, “বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে অনিশ্চয়তায় আরবিআইয়ের উচিত মূল্যস্ফীতির ওপর নজর রাখা এবং মূলধনের প্রবাহে ওঠানামা মুদ্রা হারে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।”
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
আরবিআইয়ের আগের নীতি টাকার মুদ্রাস্ফীতি-সংশোধিত বিনিময় হার ১০৮.১৪-তে নিয়ে গিয়েছিল, যা ৮% অতিমূল্যায়িত বলে ধরা হয়। এর ফলে রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে এবং ক্রমবর্ধমান তেলের দাম ভারতীয় অর্থনীতির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে।
গভর্নর মলহোত্র এখনও প্রকাশ্যে কোনো নীতিকে অগ্রাধিকার দেননি। তবে টাকার পরিচালনা নমনীয়তা আরবিআইয়ের গতানুগতিক নীতির থেকে ভিন্ন। দাসের নেতৃত্বে আরবিআই $৭০০ বিলিয়ন রিজার্ভ ব্যবহার করে টাকাকে রক্ষা করেছিল, যার ফলে টাকার ওঠানামা ছিল কম। তবে এর প্রভাব ব্যাঙ্কিং তরলতায় টানাপোড়েন এবং স্বল্পমেয়াদি সুদের হার বৃদ্ধিতে পড়েছে।
আগামীর সম্ভাবনা
আগামী মাসে আরবিআই নীতি পর্যালোচনা করবে। মূল্যস্ফীতি কমার প্রেক্ষিতে সুদের হার কমানোর দাবিও উঠেছে। তবে দুর্বল টাকা নিয়ন্ত্রণের চাপে আরবিআইয়ের নীতিনির্ধারণ কঠিন হতে পারে।
আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ গৌরা সেন গুপ্ত বলেন, “আরবিআই ‘অসম্ভব ত্রয়ী’র পূর্ণ চাপে রয়েছে। স্বাধীন মুদ্রানীতি বজায় রাখতে দ্রুত টাকা অবমূল্যায়ন মেনে নিতে হবে অথবা মুদ্রা স্থিতিশীলতার জন্য নীতির স্বাধীনতা ছাড়তে হবে।”
এই নীতি পরিবর্তন ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।