Home দুর্গাপার্বণ ৮৭তম বছরে কাঁকুড়গাছি মিতালির দুর্গাপুজো তুলে ধরছে ‘ইচ্ছে’-র কাহিনি  

৮৭তম বছরে কাঁকুড়গাছি মিতালির দুর্গাপুজো তুলে ধরছে ‘ইচ্ছে’-র কাহিনি  

0

নিজস্ব প্রতিনিধি: কাঁকুড়গাছি মিতালির দুর্গাপুজো এ বার ৮৭তম বছরে পড়ল। এ বছর তাদের পুজোর থিম ‘ইচ্ছে’। ‘ইচ্ছে’র কাহিনি তুলে ধরা হচ্ছে কাঁকুড়গাছি মিতালির পূজামণ্ডপে। কেমন সে কাহিনি?

কথা হচ্ছিল পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা নীলকমল পালের সঙ্গে। নীলকমলবাবু জানালেন, উত্তর কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে রাস্তার দু’ পাশে অস্থায়ী হাট বসে ব্যবহৃত জামাকাপড়ের। সপ্তাহের প্রতি দিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। কিন্তু দিন দিন এই হাটের ব্যাবসা মার খাচ্ছে। এর পিছনে রয়েছে মানুষের রুচির পরিবর্তন এবং আর্থিক অবস্থার উন্নতি। যার ফলে হাটে বেচাকেনা থেকে মানুষ আজ সরে আসছেন। তাই আগেকার মতো আজকাল ওই হাটে অত বিক্রিবাট্টা হয় না। আর হাটে আসা বিক্রেতাদের আর্থিক অবস্থাও তাই খুব একটা স্বচ্ছল নয়।

‘ইচ্ছে’র কাহিনিটা কী সেটা আরও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিলেন নীলকমলবাবু। এ বার তাঁদের পুজোমণ্ডপে তুলে ধরা হচ্ছে মিতেশ নামে এমনই এক পুরোনো জামাকাপড়ের বিক্রেতার কথা। মিতেশের পূর্বপুরুষ বাংলার আদি বাসিন্দা নয়। কিন্তু পরিবারের বেশ কয়েক প্রজন্ম জন্মসূত্রে এই বাংলার বাসিন্দা। তারা এই পুরোনো জামাকাপড় বেচাকেনার সঙ্গেও যুক্ত। মিতেশ দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করে আনে পুরোনো জামাকাপড়। রাতের অন্ধকারেঈ সেই জামাকাপড়ের পসরা রাস্তার ধারে মজুত করে। তার পর ওই জামাকাপড়ের গাঁটরি-বোঁচকার ওপর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে। তার দু’ চোখে নেমে আসে ঘুমঘোর।

নীলকমলবাবু বলে চলেন – মনে মনে মিতেশ ভাবে সে-ও যদি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে মা দুর্গার আরাধনা করতে পারত। কিন্তু তার মতো দিন-আনি-দিন-খাই এক সামান্য গরিব মানুষের পক্ষে কি দুর্গাপুজোর মতো রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করা সম্ভব? ঘুমের মধ্যে এ সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই মিতেশ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে সে দেখে কোনো এক বনেদিবাড়িতে পুজো হচ্ছে। আড়ম্বরপূর্ণ ও জাঁকজমকের মধ্যে দিয়ে সে মা দুর্গার আরাধনা করছে। চারিদিকে কাঁসরঘণ্টা বাজছে। ঢাকের বাদ্যি বেজে উঠছে। সবাই উৎসবের আনন্দে গা ভাসিয়েছে। কিন্তু মিতেশ স্বপ্নে আসা ইচ্ছেকে পূরণ করতে পাচ্ছে না বাস্তবের আর্থিক অনটনের কারণে। সামান্য হাটের বিক্রেতা মিতেশ তাই স্বপ্নেই মায়ের পুজো করছে।

কাল্পনিক এই ইচ্ছের কাহিনিই এ বার তুলে ধরা হচ্ছে কাঁকুড়গাছি মিতালির মণ্ডপে। সামগ্রিক ভাবনা ও সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী প্রশান্ত পাল।

কথা হল শিল্পী প্রশান্ত পালের সঙ্গেও। তিনি জানালেন, কাঁকুড়গাছি মিতালির পুজোর থিম ‘ইচ্ছে’। সাধারণত পুরোনো জামাকাপড়ের হাট শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বসে রাস্তার ওপর। বিক্রেতারা রাত থেকে জামাকাপড়ের গাঁটরি-বোঁচকা নিয়ে জড়ো হন।  বিক্রেতারা আর্থিক ভাবে খুব একটা স্বচ্ছল নন। এ রকম পুরোনো জামাকাপড়ের বিক্রেতারা দেখেন নানা রকম জিনিসপত্র নিয়ে পুজোর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে।  তাঁরাও চান, তাঁদের জিনিস দিয়েও মণ্ডপ হোক। মণ্ডপে গোটা ইনস্টলেশনই ভাসমান হচ্ছে। স্ট্রাকচারাল পার্ট সবই ঝুলন্ত হবে। পুরোনো জামাকাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে মণ্ডপসজ্জায়। বনেদি বাড়ির একচালার সাবেকি সনাতনী ঠাকুর হবে।

ছবি: রাজীব বসু

আরও পড়ুন

আগমনী গান গেয়ে মা দুর্গার আবাহন করা হয় বড়জোড়ার গুপ্ত পরিবারে

৬২তম বর্ষে ‘আগামীর বাংলা’ তুলে ধরবে ঢাকুরিয়ার বাবুবাগান  

টুসু পরবের আঙ্গিকে প্রান্তজনের কথা বলছে এ বারের তেলেঙ্গাবাগান সর্বজনীনের দুর্গাপুজো

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version