Home দুর্গাপার্বণ বিষহরা গানকে ফিরিয়ে আনতে শিবমন্দির পুজোর থিম ‘বিষহরি’, মণ্ডপে ১০০ ফুট লম্বা...

বিষহরা গানকে ফিরিয়ে আনতে শিবমন্দির পুজোর থিম ‘বিষহরি’, মণ্ডপে ১০০ ফুট লম্বা সাপ

0
শিবমন্দিরের প্রতিমা

শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে সর্পদেবী মনসার আরাধনা করা হয়। মনসা লোকদেবী। বিষহরি বা বিষহরা হল পৌরাণিক দেবী মনসার আরেক নাম। বিষহরা বা বিষহরির আক্ষরিক অর্থ হল, ‘যিনি বিষ হরণ করেন’। মনসাকে বন্দনা করার গানই বিষহরা নামে পরিচিত। প্রতি বছর নিত্য নতুন অভিনব থিমে মাত করে দেয় দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। এবছর তাদের থিম ‘বিষহরি’।

বাংলার লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতি বিষহরা গানকে বাঁচিয়ে তোলার লক্ষ্যে এবছর শিবমন্দিরের প্রয়াস হল ‘বিষহরি’। একসময় উত্তরবঙ্গের মতো দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সাড়ম্বরে মনসা পুজো হত। দেবীর বন্দনায় শোনা যেত নানান গান। যেমন, ‘বন্দিলু বন্দিলু আমি মাতা বিষহরি, চরণেতে দেহ ঠাঁই, সবে কৃপা করি।’ বিষহরি গানকে অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে শিবমন্দিরের মণ্ডপে থাকছে তার ছাপ। মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমা তৈরির সামগ্রিক পরিকল্পনায় আছেন শিল্পী প্রশান্ত পাল।

shib mandir 1
শিবমন্দিরের মণ্ডপ

শিবমন্দির পুজোর কর্মকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, ‘উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মনসামঙ্গলের গান বিষহরা। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনে অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি হল বিষহরা গান। কিন্তু আজ কালের ফেরে এর লৌকিক আঙ্গিক ও পরম্পরা হারিয়ে যাওয়ার মুখে। শিবমন্দিরের এবছরের থিম হল বিষহরি। দেবাদিদেব মহাদেবের মানসকন্যা মনসা বা বিষহরিকে দেবী পার্বতীর সঙ্গে একসঙ্গে কোথাও দেখা যায় না। কিন্তু এবছর আমাদের মণ্ডপে তিনি মাতৃরূপে আবির্ভূত হবেন লোকসংস্কৃতির বাহক হিসাবে।’

একসময় রাজবংশী সমাজের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিষহরা গানের আয়োজন করা হত। তা পরিচিত ছিল ‘ঠাকুর শান্তি’ নামে। অনেকে মনসা দেবীর কাছে মানত করেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে যে বিষহরা গান গাওয়া হয় তার নাম হল ভাসান গান। এই গান লোকনাট্যকেন্দ্রি। দৈনন্দিন জীবনের নানান ঘটনা বিশেষ গায়কি রীতির মাধ্যমে মনসামঙ্গলে তুলে ধরা হয়। তবে বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলভেদে পুজোর রীতি আলাদা। গান ও বাদ্যযন্ত্রর ব্যবহারও আলাদা।

জোর কদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ

বিষহরা গানে প্রায় ৩০ রকম নাচগান ও অভিনয়ের রীতি আছে। নাচগানের সময় যে সব বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয় তার মধ্যে অন্যতম হল মুখা বাঁশি। একসময় যাঁরা বিষহরা গান গাইতেন সে সব শিল্পীরা বংশপরম্পরায় নিবেদন করতেন সেই সব গান। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম বিষহরা গান গাওয়া থেকে বিমুখ। আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। নানান রকম বাদ্যযন্ত্রর ব্যবহারে সুরের নিজস্বতা হারিয়ে যাচ্ছে। মুখা বাঁশি বাজানোর লোক প্রায় নেই বললেই চলে। মণ্ডপের অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে ১০০ ফুট লম্বা সাপ।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version