Home উৎসব জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? জামাই ষষ্ঠী পালনের পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে জানেন?

জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয়? জামাই ষষ্ঠী পালনের পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে জানেন?

কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তারই অন্যতম হল জামাই ষষ্ঠী । জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় শাশুড়ি মায়েরা এই ব্রত পালন করেন। এইদিন মেয়ে জামাইকে বাড়িতে নেমন্তন্ন করে এনে ভুরিভোজ করার শ্বশুর শাশুড়ি, সঙ্গে থাকে উপহার দেওয়ার পালা। এর পাশাপাশি এইদিন মা ষষ্ঠীর কাছে পুজো দিয়ে মেয়ে-জামাইয়ের মঙ্গল কামনাও করা হয়। 

সাধারণত, জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে পালন করা হয় জামাইষষ্ঠী। এ বছর আগামী ১লা আষাঢ় অর্থাত ১৬জুন, বুধবার পালিত হবে এই শুভঅনুষ্ঠান। হিন্দু মতে, ষষ্ঠী হলেন সন্তানাদির দেবী। তিনি গর্ভবতী হওয়ার আশীর্বাদ দেন। জামাইষষ্ঠীর মুখ্য উদ্দেশ্য হল, মাতৃত্ব, বংশবৃদ্ধি । মেয়ে যাতে সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে, তার জন্য মঙ্গল কামনাতেই এই ষষ্ঠী পালন করা হয়।

জামাইষষ্ঠী পালন করার কারণ-

বৈদিক যুগ থেকেই জামাইষষ্ঠীর রীতি চলে আসছে। জামাইষষ্ঠী হল একটি লোকায়ত ব্রত। ষষ্ঠী দেবীকে তুষ্ট করার জন্যই এই ব্রত-নিয়মগুলি পালন করা হয়। এইদিন ঘটা করে শাশুড়িরা যষ্ঠীর পুজো করেন। জামাইকে নেমন্তন্ন করে জামাইপুজো করেন শাশুড়িরা। পুজোর সময় প্রথমে কপালে চন্দন ও দইয়ের ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। এরপর দীর্ঘায়ুর কামনায় তাঁকে তেল-হলুদের ফোঁটা বা সুতো হাতের কবজিতে বেঁধে দেওয়া হয়।

কথিত আছে, বিড়াল হল ষষ্ঠীর বাহন। একটি পরিবারে দুটি বউ ছিল। লোভী ছোট বউ বাড়িতে যেদিন যেদিন মাছ ও ভালো খাবার রান্না করা হত, সেইদিন সে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়ে নিত আর দোষ দিত বাড়ির বিড়ালের উপর। এমন অভিযোগ শোনামাত্রই দেবী ষষ্ঠী রেগে যান।

যার কারণে ছোট বউয়ের সাত পুত্র ও এক কন্যার প্রাণ হরণ করেছিলেন দেবী। জঘন্য অপরাধের জেরে তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে মনের দুঃখে ছোট বউ কাঁদতে থাকে। ষষ্ঠী এক বৃদ্ধার বেশে তাঁর কাছে গেলে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে ও তাঁর পূর্বের আচরণের কথা স্মরণ করিয়ে নিজের রূপ ধারণ করেন দেবী ষষ্ঠী। ক্ষমা চাইলে তাঁকে ক্রমে ক্রমে সন্তান ফিরিয়ে দেন তিনি। এর পর থেকেই ষষ্ঠী পুজোর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে।

জামাই ষষ্ঠী কীভাবে পালিত হয়-

জামাই ষষ্ঠীর উৎসব পারিবারিক সম্পর্কের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মজবুত উৎসব। এই দিনে জামাই ও পুত্রবধূকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জামাইকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের খাবার বিশেষ করে মাছ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই দিনে কন্যা ও জামাইকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়। তাদের বিশেষ সম্মান দিয়ে খাওয়ানো হয়। তাদের দেওয়া হয় নতুন পোশাক ইত্যাদি। জামাই ষষ্ঠীর দিন মেয়ে ও জামাইয়ের বিশেষ পুজো হয়। দই টিকা লাগানো হয়। আর হাতে হলুদ সুতো বাঁধা হয়। পাখার হাওয়া দেওয়া হয়।  জামাইও এই দিনে শ্বশুরবাড়ির লোকদের শ্রদ্ধা ও সম্মান বিশেষভাবে দেখায়। এবং তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জন্য উপহার ইত্যাদি নিয়ে যেতে হয়। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে জামাই ষষ্ঠীর উৎসব পালিত হয়। 

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version