Home খবর বাংলাদেশ পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘বিতর্কিত মানচিত্র’ উপহার দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অস্বস্তি সৃষ্টি করলেন...

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘বিতর্কিত মানচিত্র’ উপহার দিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অস্বস্তি সৃষ্টি করলেন মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানি জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি বই উপহার দিয়েছেন, যার প্রচ্ছদে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

পাকিস্তানি জেনারেলকে উপহার মুহাম্মদ ইউনূসের। ছবি ইউনূসের 'X' থেকে নেওয়া।

ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস আবার কূটনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। এবার তিনি পাকিস্তানি সেনার ‘জয়েন্ট চিফ্‌স অফ স্টাফ কমিটি’র চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এক বৈঠকে এমন একটি বই উপহার দিয়েছেন, যার প্রচ্ছদে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

রবিবার ২৬ অক্টোবর ইউনুস তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে পাকিস্তানি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাতের কিছু ছবি প্রকাশ করেন। সেই ছবিগুলোর একটিতে দেখা যায়, তিনি মির্জাকে ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শিরোনামের একটি বই উপহার দিচ্ছেন। বইটির প্রচ্ছদে দেখা যায়, বাংলাদেশের মানচিত্রকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ভারতের অসমসহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বইটির প্রচ্ছদে একটি নকশা রয়েছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানচিত্রের অনেকটা মিল রয়েছে। নকশার ভিতরে সবুজ এবং লাল রঙের (বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দু’টি রঙ) কারুকার্য করা রয়েছে। নকশার মাঝে একটি লাল রঙের গোল কারুকার্য করা, বাকি অংশটি সবুজ রঙা। ওই নকশাটিতে যে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে বোঝানো হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়। ওই নকশাকে বাংলাদেশের মানচিত্র বলে ধরে নিলে দেখা যায়, উত্তরপূর্ব ভারতের অনেকটা অংশকে  বাংলাদেশের ভিতরে টেনে দেখানো হচ্ছে।

এই ‘বিতর্কিত’ নকশা নিয়েই নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে সমাজমাধ্যমে। এই ছবি প্রকাশের পরপরই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশ্লেষক ও সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, ইউনুস ভারতের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য ও পদক্ষেপের মাধ্যমে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত ঢাকা বা নয়াদিল্লির তরফে সরকারি ভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উষ্ণতা

জেনারেল মির্জার এই সফর এমন এক সময় ঘটেছে যখন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক পেরিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ছে। ২০২৪-এর আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ক্ষমতায় আসেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর শাসনামলে চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পদক্ষেপ করছে বাংলাদেশ।

ভারতের উত্তর-পূর্ব নিয়ে ইউনূসের মনোভাব

এটি প্রথম নয়। গত কয়েক মাসে ইউনূস একাধিকবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে কেন্দ্র করে মন্তব্য করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিলে চিন সফরে গিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের সাতটি পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সমুদ্রবন্দরের দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমরাই এই অঞ্চলের ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’। তাই চিনের উচিত এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানো।”

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এই মন্তব্যের পর ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এখন ‘বিমস্টেক’-এর (BIMSTEC) মূল সংযোগ কেন্দ্র, এবং এটি ভারতের কৌশলগত অগ্রাধিকারের অংশ।

ইউনুসের মন্তব্যের জেরে ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রানজিট সুবিধার একটি অংশ বাতিল করে, যার আওতায় বাংলাদেশের পণ্য ভারত হয়ে নেপাল, ভুটান ও মায়ানমারে যেত।

পরবর্তী কালে মে মাসে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা আরও বাড়ান ইউনুসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, “ভারত যদি পাকিস্তানে হামলা চালায়, তবে বাংলাদেশ ও চিন একত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দখল করতে পারে।”

এর আগেও ইউনুসের আরেক সহযোগী নাহিদুল ইসলাম সামাজিক মাধ্যমে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ নামে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও অসমের অংশকে বাংলাদেশ ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সেই পোস্টটি মুছে ফেলা হয়।

বিশ্লেষকদের মত

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর সহযোগীদের  এমন ধারাবাহিক মন্তব্য ও কাণ্ডকারখানা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটাচ্ছে। অনেকের মতে, এটি কেবল রাজনৈতিক ত্রুটি নয়, বরং চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর এক কৌশলগত প্রচেষ্টা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version