ইজরায়েলি সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে, গাজায় একটি জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী অভিযানে তারা হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করেছে। ৬১ বছর বয়সী সিনওয়ার ছিলেন হামাসের প্রধান নেতা এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই অভিযানে সিনওয়ারকে হত্যা করা তাদের জন্য একটি বড় সাফল্য এবং হামাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আঘাতগুলির মধ্যে একটি।
ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “দীর্ঘ এক বছর ধরে অনুসন্ধানের চালানোর পর, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪-এ ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) দক্ষিণ কমান্ডের সেনারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ এলাকায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করেছে।” সেনাবাহিনীর আরও জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই অঞ্চলে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করার ফলে সিনওয়ারের চলাচলে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ হয়েছে।
সিনওয়ার-সহ তিনজন সন্ত্রাসীকে সেনাবাহিনীর ৮২৮তম ব্রিগেডের সদস্যরা শনাক্ত করে। সংঘর্ষের সময় তারা সবাই নিহত হয়। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময় সিনওয়ার পালানোর চেষ্টা করেন এবং একটি ড্রোন দিয়ে তার অবস্থান নিশ্চিত করার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ড্রোনের ফুটেজে দেখা যায়, আহত অবস্থায় সিনওয়ার একটি বাড়ির ভিতরে লুকানোর চেষ্টা করেন এবং শেষ মুহূর্তে ড্রোনটির দিকে একটি কাঠির মতো কিছু ছুঁড়ে মারেন।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, “আমাদের সেনারা তিনজন সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করে যারা একটা বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে ঢুকে পালানোর চেষ্টা করছিল। সংঘর্ষের সময় সিনওয়ার তার সহযোদ্ধাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং একটি ভবনের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। তার হাতে মারাত্মক আঘাত লাগে, এবং ড্রোনের সাহায্যে তার অবস্থান নিশ্চিত করার পর আমরা তাকে হত্যা করি।”
অভিযানের সময় ইয়াহিয়া সিনওয়ারের কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রায় ৪০ হাজার শেকেল পাওয়া যায়। হাগারি আরও বলেন, “তার সাথে কোনও পণবন্দি ছিল না। অভিযানের পরপরই এলাকাটি সুরক্ষিত করা হয় এবং আমরা নিশ্চিত করি যে সেখানে অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল না।”
ইজরায়েলি সরকার সিনওয়ারের মৃত্যুকে হামাসের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা হিসেবে দেখছে। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এই সাফল্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “ইয়াহিয়া সিনওয়ার ছিল ইজরায়েলের উপর গত বছরের বর্বরোচিত হামলার অন্যতম প্রধান আয়োজক। তার মৃত্যু আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অদম্য সাহসিকতার প্রমাণ।”

হামাসের প্রতিক্রিয়া
হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সিনওয়ারের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতার মৃত্যু হামাসের নেতৃত্বে বিশাল ফাঁক তৈরি করবে। তিনি গত বছরের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর হামলা চালিয়ে সংগঠনের সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন। তার নেতৃত্বে ইজরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলায় ১,২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়, যার বেশিরভাগই ছিল সাধারণ নাগরিক। সেই হামলার পর থেকেই ইজরায়েলি বাহিনী সিনওয়ারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
গাজায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
ইজরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানে গাজার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ইজরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক। রাষ্ট্রসংঘও এই পরিসংখ্যানের সত্যতা নিশ্চিত করেছে এবং যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
ইজরায়েলি বাহিনী ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং অন্যান্য হামাস নেতাদের উপর লক্ষ্য স্থির করলেও, গাজার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তবে ইজরায়েলি পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য তাদের অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করছে।
#YahyaSinwar's video of fighting Israeli military before his death out | Last moments on IDF cam
— The Times Of India (@timesofindia) October 18, 2024
Watch pic.twitter.com/giRTqGDlV6