রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংঘর্ষে অবসান আনার লক্ষ্যে ৩০ দিনের সীমিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার একটি ফোনালাপে এই চুক্তির বিষয়ে দুই নেতা একমত হন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
এই যুদ্ধবিরতি মূলত ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও অবকাঠামোকে রক্ষা করাকে কেন্দ্র করে গৃহীত হয়েছে। হোয়াইট হাউস একে যুদ্ধ সমাপ্তির প্রথম ধাপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে,
“উভয় নেতা এই বিষয়ে একমত যে, এই সংঘাতের স্থায়ী সমাপ্তি প্রয়োজন। রাশিয়া ও ইউক্রেন যে রক্ত ও সম্পদ ব্যয় করছে, তা নিজেদের জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত।”
যুদ্ধবিরতির আলোচনার পথ খুলল
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে এই যুদ্ধবিরতির নির্দিষ্ট শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা দ্রুত শুরু হবে। তবে ইউক্রেনের এই পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতির প্রতি কী মনোভাব, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সৌদি আরবে সাম্প্রতিক বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ব্ল্যাক সি অঞ্চলে সামরিক কার্যক্রম, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও যুদ্ধবন্দি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত একটি সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
ক্রেমলিনের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের নৌবাহিনীর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন পুতিন এবং আলোচনা করে বিস্তারিত চুক্তির রূপরেখা তৈরিতে সম্মতি দিয়েছেন।
যুদ্ধবন্দি বিনিময় ও মার্কিন ভূমিকায় প্রশ্ন
ক্রেমলিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ১৭৫ জন যুদ্ধবন্দির বিনিময় হতে চলেছে। পাশাপাশি, রাশিয়া আরও ২৩ জন গুরুতর আহত ইউক্রেনীয় সৈন্যকে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে।
তবে পুতিন ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন, ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করতে, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মহলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা
গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে সৌদি আরবে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির কাঠামো মেনে নেন। তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এখনও পুতিনের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সন্দিহান, কারণ রুশ বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কো সফর করে পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে, মার্কো রুবিও সৌদি আরবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের রাজি করানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার ফলে নতুন কূটনৈতিক দিগন্ত খুললেও, পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর কিছু দেশ চান, পুতিনের আগ্রাসনের জন্য রাশিয়াকে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হোক।
এই সাময়িক যুদ্ধবিরতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির সূচনা নাকি এটি কেবল কৌশলগত বিরতি, তা আগামী দিনেই স্পষ্ট হবে।