মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শনিবার ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের উপর বিমান হামলা চালিয়েছে, যাতে ২৪ জন নিহত হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের (পেন্টাগন) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি ছিল “আমেরিকান স্বার্থ রক্ষা এবং শত্রুদের প্রতিহত করার” জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সামরিক অভিযান।
মার্কিন সেনার সেন্ট্রাল কমান্ড (US CENTCOM) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলার কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। একটিতে যুদ্ধবিমানকে বিমানবাহী রণতরী থেকে উড়তে দেখা গেছে, অন্যটিতে ইয়েমেনের একটি ভবন ধ্বংস হতে দেখা যায়। CENTCOM জানিয়েছে, “১৫ মার্চ আমরা ইয়েমেনে হুথি লক্ষ্যবস্তুর উপর একাধিক নির্ভুল হামলা চালিয়েছি, যা আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা এবং মুক্ত বাণিজ্য পথ নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য ছিল।”
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ইরানকে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প Truth Social-এ পোস্ট করে জানিয়েছেন, “আমি আজ মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইয়েমেনে হুথি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। তারা মার্কিন এবং অন্যান্য দেশের জাহাজ, বিমান এবং ড্রোনের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “হুথি সন্ত্রাসীদের প্রতি ইরানের সমর্থন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে! আমেরিকার জনগণ বা আন্তর্জাতিক শিপিং লেনগুলিকে হুমকি দেবেন না। যদি দেন, তবে আমেরিকা কঠোর ব্যবস্থা নেবে!”
তিনি দাবি করেন, এই হামলা মূলত লোহিত সাগরে হুথিদের দ্বারা বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে বাধা দেওয়ার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ। একইসঙ্গে তিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের “নিষ্ক্রিয়তার” সমালোচনা করেন।
পাল্টা প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি হুথিদের
হুথি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, এই হামলার বদলা তারা নেবে। আল-মাসিরাহ টিভিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে হুথি নেতৃত্ব জানিয়েছে, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। আমরা প্রতিটি আক্রমণের সমুচিত জবাব দেব।”
ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছে। হুথি-সমর্থিত সংবাদমাধ্যম ‘আনসারুল্লাহ’ এই হামলাকে “মার্কিন- ব্রিটিশ আগ্রাসন” এবং “ট্রাম্প প্রশাসনের অপরাধমূলক নৃশংসতা” বলে আখ্যা দিয়েছে।
লোহিত সাগরে উত্তেজনা বৃদ্ধি
হুথিরা গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেছিল যে, যতক্ষণ না ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজায় সাহায্য পাঠানো বন্ধ করা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা লোহিত সাগরে শিপিং ব্যাহত করার অভিযান অব্যাহত রাখবে।
এর আগে, এই মাসের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের “বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসাবে পুনরায় তালিকাভুক্ত করেছে। আমেরিকা দাবি করেছে, ২০২৩ সাল থেকে তারা ১৭৪ বার মার্কিন যুদ্ধজাহাজ এবং ১৪৫ বার বাণিজ্যিক জাহাজের উপর হামলা চালিয়েছে।
মার্কিন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। আন্তর্জাতিক মহল এখন নজর রাখছে, এই হামলার পাল্টা কী প্রতিক্রিয়া জানাবে হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং ইরান।