কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১৫ জনের মতো। সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে থাকার আশ্বাসের পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর মমতা বলেন, ‘‘আমরা মর্মাহত। দু’জন মারা গিয়েছেন। পাঁচ-ছ’জন এখনও আটকে। এক জনের পা আটকে। তবে তিনি বেঁচে আছেন। উদ্ধারকারীদের ভিতরে ঢুকতে সময় লেগেছে। এখন সকলে ঢুকে গিয়েছেন। শোকস্তব্ধ পরিবারের কাছে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। যাঁরা বেআইনি কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। পরিবারের পাশে সরকার দাঁড়াবে। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তৈরি করে দিতে বলব।’’
প্রমোটারদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রোমোটাররা বাড়ি তৈরির আগে নিশ্চয় ভাববেন, আশপাশে যে সব গরিব মানুষগুলো আছেন, তাঁদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। শুধু ৬ তলা বাড়ি তৈরি করে দিলাম, সেটা বড় কথা নয়। বাড়ি যাতে মজবুত হয় এবং তা আইনি স্বীকৃতি কি না, তাও দেখা দরকার।”
একই সঙ্গে এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি শুনলাম, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই বহুতলটি তৈরি করা হয়নি। এখন রমজান মাস চলছে। সকলে উপোস করে থাকেন। তা-ও সারা রাত এলাকার মানুষ উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর, দমকল, পুলিশ, কাউন্সিলররা সারা রাত ধরে কাজ করেছেন।’’
কয়েক দিন আগেই বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে চোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিকিৎসকেরা তাঁকে বাড়িতে থাকারই পরামর্শ দিয়েছেন। তবে গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই তিনি এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়, পুলিশ কমিশনার বিনীত গয়াল-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
ইতিমধ্যে কলকাতার মেয়র তথা এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে, যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবার পিছু ৫ লাখ টাকা, আহতদের পরিবার পিছু ১ লাখ টাকা দেওয়া হবে। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা দু’জনেই মহিলা। মৃতাদের নাম সাম বেগম ও হাসিনা খাতুন।”
স্থানীয়রা জানান, যে সময় ঘটনাটি ঘটেছে, সেই সময় এলাকায় প্রায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎই ভয়াবহ শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাঁদের। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সকলে। দেখতে পান ধুলোয় ভরে গিয়েছে চারিদিক। ধ্বংসস্তূপের আকারে পড়ে থাকতে দেখা যায় নির্মীয়মান বহুতলটিকে।