লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেলেনি বিজেপির। এনডিএ শরিকদের উপর নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। এর পর মন্ত্রক বণ্টন নিয়ে শরিক দলগুলির মন্তব্য বিতর্কের ঝড় তুলেছে। এরই মধ্যে আগামী ২৬ জুন লোকসভার স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এখন প্রশ্ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে এবার লোকসভার স্পিকার পদ কে পাবেন। কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এনডিএ-র বড় দল টিডিপি এবং জেডিইউ এবং কিংমেকার হিসাবে পরিচিত দলগুলি বিজেপির কাছে এই পদটি দাবি করেছে। অন্যদিকে বিজেপি এই পদটি কাউকে দিতে রাজি নয়।
জানা গিয়েছে, আগামী ২৪ জুন থেকে সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। আট দিন ধরে চলবে এই অধিবেশন। এই অধিবেশনের তৃতীয় দিন, ২৬ জুন লোকসভার স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের আগে, বিরোধীরা বারবার জোর দিচ্ছে যে এনডিএ-র শরিকদের হাতে লোকসভার স্পিকার পদ থাকা উচিত।
তবে, এই ইস্যুতে নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিজেপি যে সিদ্ধান্তই নেবে, দল তা সমর্থন করবে। একই সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি বলেছে, জোটের সব দলের সম্মতি নিয়েই প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে।
শনিবার জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগী বলেন, জেডিইউ এবং টিডিপি এনডিএ-র শরিক এবং তারা বিজেপির মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করবে। কেসি ত্যাগী সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, ‘জেডিইউ (জনতা দল ইউনাইটেড) এবং টিডিপি (তেলুগু দেশম পার্টি) দৃঢ়ভাবে এনডিএ-তে রয়েছে। আমরা স্পিকার পদে বিজেপি মনোনীত ব্যক্তিকে সমর্থন করব।”
অন্য দিকে, টিডিপির তরফ থেকে বিশেষ শর্তের কথাও বলা হয়েছে। দলের জাতীয় মুখপাত্র পট্টাভী রাম কোমারেড্ডি বলেন, “শুধুমাত্র ঐকমত্যের ভিত্তিতেই স্পিকার পদে কাউকে মনোনীত করা হবে। এ বিষয়ে এনডিএ শরিকরা একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবে কে হবেন আমাদের স্পিকার প্রার্থী। ঐকমত্য পোষণ করার পরেই প্রার্থীকে মাঠে নামানো হবে এবং টিডিপি-সহ সমস্ত শরিক দল সেই প্রার্থীকে সমর্থন করবে।”
এ দিকে রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, “শুধু টিডিপি এবং জেডিইউ নয়, সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে লোকসভার স্পিকার পদের নির্বাচন দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি বিজেপির কোনো অগণতান্ত্রিক কাজ করার ইচ্ছা না থাকে, তবে তাদের উচিত স্পিকার পদটি কোনো শরিক দলকে দেওয়া। জোটের নীতি তেমনটাই বলে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারে টিডিপি এবং শিবসেনার স্পিকার এবং ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইউপিএ সরকারে সিপিএম- এর স্পিকার ছিলেন। শরিক দলের স্পিকাররা যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে লোকসভা পরিচালনা করেছিলেন।”
আসলে ভারতীয় রাজনীতিতে স্পিকার (লোকসভা অধ্য়ক্ষ) পদটি রাজনৈতিক ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে অন্য একটি কারণে। গত কয়েক বছরে, শাসক দলগুলির মধ্যে বিদ্রোহের অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যে কারণে দলগুলির মধ্যে বিভাজন দেখা গেছে এবং অনেক জায়গায় রাজ্য সরকার পর্যন্ত পড়ে গেছে।
এই ধরনের ক্ষেত্রে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রযোজ্য হয় এবং এই আইনটি হাউসের স্পিকারকে একটি শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার অধিকার দেয়। আইন অনুযায়ী, দলত্যাগের কারণে সদস্যদের অযোগ্য ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হাউসের স্পিকারের রয়েছে। এ কারণে প্রথম থেকেই এই পদে নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর নজর রয়েছে। আগলে রাখার কারণ রয়েছে বিজেপি-রও।
