বসিরহাট: প্রয়াত হলেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে নিজের বসিরহাটের বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যকৃতের ক্যানসারে ভুগছিলেন।
হাজি নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং সাফল্যের। ২০০৯ সালে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্ব এবং জনসংযোগ দক্ষতা তাঁকে বসিরহাটে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে। একজন সক্রিয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হাজি নুরুল ইসলাম মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে, সেইবার তিনি পরাজিত হন। এর পর থেকে তিনি কিছুটা সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক জীবন এখানেই থেমে থাকেনি।
২০১৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। সেই সময় হাড়োয়ার তৎকালীন বিধায়ক জুলফিকার আলিকে প্রার্থী না করে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নুরুল ইসলামকে প্রার্থী করেন। এটি রাজনৈতিক মহলে চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। ২০১১ সালে মাত্র ১২০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়া হাড়োয়ার আসনটি নুরুল ইসলাম ২০১৬ সালে ৪৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয় করেন।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পরিবর্তন করে। সেই নির্বাচনে বসিরহাট থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হন অভিনেত্রী নুসরত জাহান, যিনি নির্বাচনে বিজয়ীও হন। তবে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই পুনরায় হাজি নুরুল ইসলাম বসিরহাট থেকে প্রার্থী হন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা এবং জনসংযোগের ক্ষমতা তাঁকে বসিরহাটে এক জনপ্রিয় নেতায় পরিণত করেছিল।
হাজি নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসে এবং তাঁর সমর্থকদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই রাজনৈতিক নেতার প্রয়াণে বসিরহাটসহ সমগ্র তৃণমূল কংগ্রেস শোকস্তব্ধ।