আবারও এক বার এক্সিট পোল পুরোপুরি ভুয়ো প্রমাণিত হল পশ্চিমবঙ্গে। ভোট শেষ হওয়ার পর নিছক ‘বিনোদন’ ছাড়া আর কোনো তকমাই দেওয়া গেল না এ ধরনের ‘অবৈজ্ঞানিক’ পদ্ধতিকে।
২০২১ বিধানসভা ভোটে যেখানে প্রায় সবক’টা এক্সিট পোল বিজেপি-কেই রাজ্যের ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছিল, সেখানে মানুষের রায়ে রেকর্ড আসন জিতে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল তৃণমূলের। আর এ বারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এ বারের লোকসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূলকে যত কম আসন দেওয়া যায়, তার থেকেও কম আসন দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল সংবাদ মাধ্যমগুলো। কিন্তু বাস্তব ফলাফলের সঙ্গে তার কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া গেল না। স্বাভাবিক ভাবেই গত ১ জুন সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হতেই একের পর এক টিভি চ্যানেল এক্সিট পোলকে সামনে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে আলোচনা, বিশ্লেষণ চালিয়ে গেল তা এক কথায় ‘বিনোদন’ ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
একাংশের সমীক্ষকদের দাবি, তাঁরা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন। ভোটারদের সামনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন করে তাঁদের মনের ভাব বোঝার চেষ্টা করেন। এর পাশাপাশি এলাকায় এলাকায় ঘুরে ভোটের হাওয়া বোঝার চেষ্টা করেন। ফলাফল অনুমানের জন্য বেশ কিছু কার্যকরী কৌশল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক নয়। গণতন্ত্রের পক্ষে সুখকরও নয় এই পদ্ধতি। কে কাকে ভোট দিচ্ছেন, সেটা জানার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় এ ধরনের পদ্ধতি। সার্বিক ভাবে কোনো এলাকার রাজনৈতিক মনোভাব আর ভোটের বাক্সে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা কোনো ভোটারের মনোভাব বুঝে ফেলে অলিখিত ভাবে ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়ার মধ্যে কোনো ইতিবাচকতা যে থাকে না, সেটাই প্রমাণিত হয়ে চলেছে একের পর এক এক্সিট পোলের ব্যর্থতায়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সমীক্ষক সংস্থার বুথফেরত সমীক্ষা এ রাজ্যে তৃণমূলের সম্ভাব্য আসন সংখ্যাকে ২০-র নীচে নামিয়ে এনেছিল। কেউ কেউ অতিউৎসাহী হয়ে ১৩ থেকে ১৭টি পর্যন্ত দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। এখন, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলকে দেওয়া সেই সম্ভাব্য সংখ্যায় পৌঁছাতে পারছে না বিজেপি! যেখানে এ রাজ্যে তাদের বৃহত্তম দল হয়ে ওঠার ভবিষ্যদ্বাণী ভাসিয়ে দিয়েছিলেন ভোটবোদ্ধারা।
সাধারণ নির্বাচনের জন্য তৈরি হওয়া এই এক্সিট পোলের ফলাফল নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন তুলে দেয়। হ্যাঁ, ভোটবোদ্ধারা এক্সিট পোলের ফলাফল ঘোষণার সময় একাধিক ডিসক্লেমার জুড়ে দেন। প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল যে হুবহু মিলবে না সেকথাও বলা হয়। ঠিক যেমনটা এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেলে কোনো সিরিয়ালের ক্ষেত্রে ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই’ গোছের ডিসক্লেমার দেওয়া থাকে।
বুথফেরত সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তা জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল এই বিষয়টি। সমীক্ষক সংস্থাগুলিরও উচিত নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে নতুন কিছু ভাবনা, পরিকল্পনার। অন্য দিকে, একাধিক অতিথিকে সঙ্গী করে আসর জমানোর মধ্যে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য থাকে না, তা কোনো সংবাদ মাধ্যমই কি বুক বাজিয়ে বলতে পারবে?