Home রাজ্য জলপাইগুড়ি বৃষ্টি ও ভুটান থেকে আসা জলে প্লাবিত ডুয়ার্সের ৩০টি চাবাগান, বড় ক্ষতির...

বৃষ্টি ও ভুটান থেকে আসা জলে প্লাবিত ডুয়ার্সের ৩০টি চাবাগান, বড় ক্ষতির আশঙ্কা

water in tea garden

ডুয়ার্সের চা-বেল্টে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে টানা ভারী বর্ষণে। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে জলপাইগুড়ির বানারহাট, নাগরাকাটা এবং আলিপুরদুয়ারের কালচিনির বিস্তীর্ণ এলাকা বিপর্যস্ত। ১২ ঘণ্টায় বানারহাট ও নাগরাকাটায় ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, যা এ মরসুমের সর্বোচ্চ। কালচিনিতেও প্রবল বৃষ্টি হয়েছে, তবে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।

ভূটানে অতি ভারী বর্ষণের ফলে সেখানকার পাহাড়ি জল নেমে এসেছে ডুয়ার্সের সমতলে, যার জেরে অন্তত ৩০টি চা-বাগান প্লাবিত। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাগানগুলির মধ্যে রয়েছে মেচপাড়া, রিয়াবাড়ি, নাগরাকাটা, মরাঘাট, লক্ষ্মীপাড়া, সুভাষিনী ও সাতালি। বন্যার জলে ভেসে গেছে ছোট বড় বহু রাস্তা, ভেঙে পড়েছে একাধিক কালভার্ট।

নাগরাকাটা চা-বাগানে কুর্তি নদীর উপর পায়ে চলা সেতুটি সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। পাশাপাশি হিলা ও একটি এসএসবি ক্যাম্প সংযোগকারী মূল সেতুটিও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
“এই সেতুটি যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে,” জানিয়েছেন টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স-তেরাই শাখার সম্পাদক সুমিত ঘোষ। তিনি আরও বলেন, “যদি সেটি ভেঙে যায়, অন্তত ৮,০০০ মানুষ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন যতক্ষণ না নতুন সেতু তৈরি হয়।”

আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে থামছে না বৃষ্টি! সোমবারও ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা, আলিপুরদুয়ারে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস

চা-বাগানগুলির ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান রাজকুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, “যেসব বাগান সম্পূর্ণভাবে জলের তলায় গেছে, সেগুলিতে চা গাছগুলিকে অন্তত এক সপ্তাহ পর্যাপ্ত রোদে রাখতে হবে জলের স্তর কমে যাওয়ার পর। কিন্তু আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ‘অতি ভারী থেকে অতিশয় ভারী বৃষ্টি’র পূর্বাভাস রয়েছে। তাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “জল যত বেশি সময় থাকে, তত বেশি সিল্ট জমে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। ভূটানের জল ডোলোমাইটে সমৃদ্ধ, যা মাটিকে অনুর্বর করে দেয়। আগের এক বন্যায় কালচিনির মেচপাড়া চা-বাগানের বহু একর জমি ডোলোমাইট সিল্টেশনের কারণে চাষের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল।”

কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (CISTA) প্রেসিডেন্ট বিজয় গোপাল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “শনিবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে ডুয়ার্স ও তেরাই অঞ্চলের বড় ও ছোট প্রায় সব চা-বাগান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলপাইগুড়ির বানারহাট, নাগরাকাটা, মাল, ময়নাগুড়ি ও সদর ব্লকের অধিকাংশ বাগানই জলের তলায়। শ্রমিকদের বাড়িঘর ভেসে গেছে, চা-বাগানের ‘লাইন’ গুলিতে জল ঢুকে পড়েছে। ফলে রবিবার অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারেননি। যদি আজ রাতেও বৃষ্টি হয়, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”

তেরাই ইন্ডিয়ান প্ল্যান্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মহেন্দ্র পি. বংশল জানিয়েছেন, “তেরাই ও ডুয়ার্সের বহু চা-বাগান শনিবার রাত থেকেই প্লাবিত। শুধুমাত্র তেরাই অঞ্চলে ৪৫টি চা-বাগান এই দুর্যোগে প্রভাবিত হয়েছে।”

প্রশাসন জানিয়েছে, বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে টিম পাঠানো হয়েছে। ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, চা-বাগানের ভেতরের রাস্তা, ছোট সেতু ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ডুয়ার্সের উপর দিয়ে আরও ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আতঙ্ক বাড়ছে বাগান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version