Home খবর রাজ্য বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করলেও পুজোয় বৃষ্টির হাত থেকে নিস্তার নেই পশ্চিমবঙ্গের

বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করলেও পুজোয় বৃষ্টির হাত থেকে নিস্তার নেই পশ্চিমবঙ্গের

puja rain update

শ্রয়ণ সেন

রবিবার রাজস্থানের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়া শুরু করেছে। পূর্বাভাস বলছে আগামী ২-৩ দিনে পঞ্জাব ও গুজরাটের কিছু অংশ থেকেও বর্ষা পাত্তাড়ি গোটাতে পারে।

মজার ব্যাপার হল গত প্রায় বেশ কয়েক বছরের মধ্যে এবারই বর্ষা দেশের অধিকাংশ জায়গায় রুদ্রুরুপ দেখিয়েছে। আবার গত ১০ বছরের মধ্যে এটিই দ্রুততম বিদায়যাত্রার সূচনা বর্ষার।

উল্লেখ্য, কোভিডকালের আগে পর্যন্ত বর্ষার বিদায়যাত্রা শুরু করার দিন হিসেবে গণ্য করা হতো ১ সেপ্টেম্বরকে। কিন্তু বিগত অনেক বছর যাবৎ বর্ষা বিলম্ব হওয়ার জেরে আবহাওয়া দফতর, বর্ষার বিদায়যাত্রার সূচনার দিনটি ১৭ সেপ্টেম্বর করে দেয়।

কিন্তু এবার এত তাড়াতাড়ি বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করবে, বিশেষত বন্যা বিধ্বস্ত পঞ্জাবে আবহাওয়া এত তাড়াতাড়ি শুকনো হয়ে যাবে, সেটা আন্দাজ করা যায়নি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের এই সময়টায় পাকিস্তানের ওপরে একটি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। ওই বিপরীত ঘূর্ণাবর্তটি জলীয় বাষ্প ভরা ভেজা বাতাসকে সরিয়ে শুকনো বাতাস ঢোকাতে শুরু করে পশ্চিম ভারতে। এর ফলে আবহাওয়া শুকনো হয়ে, আকাশ পরিষ্কার হয় আর মৌসুমী বায়ু পেছনে হঠতে থাকে।

রাজস্থান থেকে শুরু করে বর্ষা বিদায় নেয় পঞ্জাব ও রাজস্থান থেকে। এর পর একে একে কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ থেকে বর্ষা পিছু হঠে। এই সব জায়গায় জলীয় বাষ্প সরে গিয়ে শুকনো আবহাওয়া দেখা যায়। সেই সঙ্গে উত্তুরে বাতাস।

এই উত্তুরে বাতাসের ফলে একাধারে দিনের বেলায় পারদ যেমন চড়তে থাকে তেমনই ভোরের বেলায় শীতের মৃদু গন্ধ পাওয়া যায়। অনেকক্ষেত্রে এই সময়ে রাজস্থানের কিছু জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে যেমন উঠে যায়, তেমনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নীচে নেমে যেতে থাকে।

দিনের বেলায় এই প্রবল গরম পড়ে বলে এই সময়টাকে অক্টোবর হিট (October Heat) বলা হয়। মোটামুটি অক্টোবরের প্রথম পনেরো দিন এই গরমের দাপট থাকে।

উত্তর ভারত থেকে যখন বর্ষা সরছে, তখন কিন্তু পূর্ব ভারতে বৃষ্টির দাপট খুব একটা কমে না। এর মূল কারণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপগুলি শুকনো হাওয়ার দাপটের কারণে মধ্য বা উত্তর ভারতের দিকে সরতে পারে না। তাই তাদের পুরো বৃষ্টির দাপটটাই পূর্ব ভারতের ওপরে এসে পড়ে।

সাধারণ ভাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়ার তারিখ ১৫ অক্টোবর। উত্তর ভারত থেকে বর্ষা পিছু সরতে সরতে মধ্য ভারত থেকে সরে যায়। ফলে পূর্ব ভারত থেকে তার বিদায় নিতে সময় লাগে।

অতীতে সেপ্টেম্বরের শেষে, অক্টোবরের শুরুতে বারবার মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভেসেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যা হোক বা ১৯৬৮ সালের জলপাইগুড়িতে বন্যা হোক, আমাদের রাজ্যের ইতিহাসে ভয়ংকর বন্যাগুলো এই সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতে হয়। তার মানে এই নয় যে এবার বন্যা হবে। এটা বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার বৃষ্টি হওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা, নতুন কিছু নয়।

এমনকি অক্টোবর পেরিয়ে নভেম্বরেও টুকটাক ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপের হাত ধরে ঝড়বৃষ্টি হয়।

এবার পুজোটাই পড়েছে বর্ষাতে। তাই বর্ষার আর কী দোষ! বৃষ্টি হবেই। কিছু করার নেই। তবে কতটা হবে, ভাসানো বৃষ্টি হবে কি না, সে তো এখন বলা যাবে না।

তবে এটা আন্দাজ করা যায় যে দেবীপক্ষ শেষ হওয়ার পরপরই বর্ষা বিদায় নিতে পারে এখান থেকে।

আরও পড়ুন: এবার পুজোটাই পড়েছে বর্ষাতে। তাই বর্ষার আর কী দোষ! বৃষ্টি হবেই। কিছু করার নেই।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version