অবশেষে তিন বছর তিন মাস ১৯ দিন পর বাড়ি ফিরলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। দুপুর ২টো ২০ মিনিটে, হুইলচেয়ারে চেপে হাসপাতালের গেট পেরোতেই অনুগামীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ফেটে পড়ে।
চত্বরজুড়ে একটাই স্লোগান— “পার্থদা জিন্দাবাদ!” সেই মুহূর্তে আবেগ সংবরণ করতে পারেননি প্রাক্তন মন্ত্রী। চোখে জল চলে আসে তাঁর।
হুইলচেয়ারে পার্থ, অনুগামীদের উচ্ছ্বাসে ভাসল হাসপাতাল চত্বর
নীলের ওপর সাদা ফুলছাপ পাঞ্জাবি, মুখে নীল রঙের মাস্ক— এই পোশাকেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন পার্থ। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল তাঁর গাড়ি। চালকের পাশের আসনে বসে তিনি নাকতলার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।
তাঁর গাড়ির পেছনে বাইক মিছিল করে ছুটতে থাকেন অনুগামীরা।
ভিতরে বসে হাতজোড় করে নমস্কার জানান পার্থ। চারদিকে উল্লাসধ্বনি, মোবাইলের আলোয় ধরা পড়ে তাঁর মুখে আবেগের ছাপ। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি, শুধু ঘাড় নেড়ে জানান— উত্তর দিতে চান না।
বাড়ি ফেরা, চোখে জল, বরণ করে নিল পরিবার
নাকতলায় পৌঁছেই পার্থকে বরণ করে নেন আত্মীয়রা। ভাইয়ের স্ত্রী, ভাই এবং কন্যা ছিলেন উপস্থিত। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন পর বাড়িতে ফিরে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সান্ত্বনা দেন ভাইয়ের মেয়ে।
বাড়িতে প্রবেশের পর তিনি মামা, প্রয়াত গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করেন। বাড়ির সামনেও অনুগামীদের ভিড় — “পার্থদা জিন্দাবাদ” স্লোগানে মুখরিত হয় নাকতলার গলি। অনুগামীরা জানতে চান, কবে আবার তিনি বেহালা এলাকায় ফিরবেন।
তিন বছর তিন মাস ১৯ দিন পর জেলমুক্তি
২০২২ সালের ২৩ জুলাই, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তারপর থেকেই ছিলেন প্রেসিডেন্সি জেলে, পরে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে।
সুপ্রিম কোর্ট কয়েক মাস আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, সিবিআইয়ের মামলার বিচারপর্ব শুরু হলেই পার্থ, এসএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ-এর শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করা যাবে।
১৪ নভেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার নির্দেশও দিয়েছিল আদালত। সেই মতো সোমবার অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়, এবং তার পরেই আদালত পার্থর জেলমুক্তির নির্দেশ দেয়। আলিপুর আদালতের নির্দেশিকা পৌঁছোয় প্রেসিডেন্সি জেলে, সেখান থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয় মুক্তির কাগজ।
ঘরে ফিরে বিবৃতি
জেলমুক্তির পর প্রথমবার মুখ খুললেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে তিনি জানান,“আইনের প্রতি আমি সবসময় আস্থাশীল ছিলাম। প্রাথমিক পর্যায়ে সেই সত্যের জয় হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনেও সত্যের জয় হবেই।”
তিন বছর তিন মাস ১৯ দিনের বন্দিদশার পর মুক্তি পেয়ে পার্থ এবার সরাসরি তাঁর রাজনৈতিক কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমের মানুষের কথাও উল্লেখ করেছেন। বিবৃতিতে তিনি লেখেন, “আমি বেহালা পশ্চিমের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। যাঁরা আমাকে সৎ মানুষ ভেবে পর পর পাঁচবার জিতিয়েছেন, আমি তাঁদের কাছেই বিচার চাইব।”
আইনজীবীর বক্তব্য ও চিকিৎসকের পরামর্শ
পার্থের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী জানান, “আমার মক্কেল এখন মুক্ত। চিকিৎসকেরা তাঁকে কিছুদিন বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আইনগত পদক্ষেপ সময়মতো নেওয়া হবে।”
এদিকে, পার্থর ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নাকতলায় তাঁর বাড়িতে ভিড় জমায় বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের অনুগামীরা। তবে ভিড়ের চাপ এড়াতে আপাতত কাউকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
এক নজরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুক্তি সংক্রান্ত টাইমলাইন:
| তারিখ | ঘটনা |
| ২৩ জুলাই ২০২২ | নিয়োগ মামলায় গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায় |
| মার্চ ২০২৫ | সুপ্রিম কোর্ট শর্তাধীন জামিনের নির্দেশ দেয় |
| ১১ নভেম্বর ২০২৫ | অষ্টম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন |
| ১০ নভেম্বর ২০২৫ | আলিপুর সিবিআই আদালতের মুক্তির নির্দেশ |
| ১১ নভেম্বর ২০২৫ | হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়ে নাকতলায় বাড়ি ফেরেন |
