উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সাগর : এ বছর গঙ্গাসাগর মেলায় সর্বকালীন রেকর্ড হল। প্রায় এক কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম সোমবার বিকাল পর্যন্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
ঘন কুয়াশার মধ্যে, গঙ্গাসাগর মেলায় আসা লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী সোমবার ভোরে সাগরদ্বীপে ডুব দিয়ে পুণ্য অর্জন করেন। এ দিন সূর্যের রশ্মি ওঠার আগেই ভক্তরা ভিড় জমাতে শুরু করেন কপিল মুনি মন্দিরে। বিশাল জনসমাগম সামাল দিতে সাগরদ্বীপের চারপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কপিল মুনি মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জয় দাসের মতে, পবিত্র স্নানের লগ্ন আসলে সোমবার দুপুর ১২টার পর পড়ে, কিন্তু তীর্থযাত্রীরা তা উপেক্ষা করে ১৪ জানুয়ারি সকাল থেকে পবিত্র স্নানে অংশ নিতে শুরু করে।
মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এ বারের মেলায় সর্বকালীন রেকর্ড হয়েছে। প্রায় এক কোটি ভক্ত এই মেলায় অংশ নিয়েছে সোমবার বিকাল পর্যন্ত। বিভিন্ন রাস্তায় লক্ষাধিক ভক্ত সাগরমুখী। তবু কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় মেলা ঘোষণা করতে পারল না।
এ বার গঙ্গাসাগর মেলায় দশ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বিপুল সংখ্যক নারী পুলিশ। অনেক ভক্ত অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে সাত জন গুরুতর অসুস্থ তীর্থযাত্রীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলায় তীর্থযাত্রীদের বিপুল মালপত্রও হারিয়ে গেছে। চুরি ও পকেটমারের ঘটনাও আগের মতোই।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, গঙ্গাসাগর মেলা থেকে সোমবার পর্যন্ত ৭৫২ জনকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন পর্যন্ত ৩৪১টি পকেটমারির ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, এ বছরে মেলার বাজেট ২৫০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একাধিক বিভাগ যৌথভাবে এই মেলায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই বিভাগগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিদ্যুৎ, পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি, রাস্তা, সেচ এবং পরিবহণ বিভাগ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একাধিক মন্ত্রী শনিবার সন্ধ্যা থেকে সাগরে হাজির রয়েছেন মেলা পর্যবেক্ষণ করতে। তাঁদের মধ্যে বিশিষ্টরা হলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎ আবাসন ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায়, সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, দমকল দফতরের মন্ত্রী সুজিত বসু এবং রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা।
মেলায় পুণ্যার্থীদের জন্য ৩৮টি নৌযান ও একশো লঞ্চ চলছে।গঙ্গা সাগর মেলার পুরো এলাকা জলজ হওয়ায় এবার পুণ্যার্থীদের সাগর দ্বীপে আনার জন্য ৩৮টি জাহাজ ও একশো’ লঞ্চ চলাচল করছে। পুরো সাগর এলাকায় রয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। এবার কুয়াশা দূর করতে অ্যান্টি ফগ লাইটের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো মেলা এলাকায় ৪৩টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
ভারত সেবাশ্রম সংঘ, বজরং পরিষদ-সহ বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। সিভিল ডিফেন্স কর্মীদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলায় ৪০০ জন সিভিল ডিফেন্স ফোর্সের কর্মীরা রয়েছেন। একটি মেগা কন্ট্রোল রুম ও একটি পুলিশ কন্টোল রুম আছে, যেখান থেকে গঙ্গাসাগর মেলা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বেলায় গঙ্গাসাগরের তটে স্বচ্ছ অভিযানে অংশ নেবেন একাধিক মন্ত্রী। আর বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করবেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা।