কলকাতা: রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে শুক্রবার রিট পিটিশন দায়ের করল রাজ্য সরকার। তাদের অভিযোগ, রাজ্যের উন্নতির লক্ষ্যে বিধানসভায় পাশ হাওয়া আটটি বিল রাজ্যপাল আটকে রেখেছেন, যা সংবিধানের বিধান লঙ্ঘন এবং সুশাসনের জন্য প্রতিকূল।
শুক্রবার রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করে বিষয়টি দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ সেই আর্জি গ্রহণ করেছে।
গত মাস খানেক ধরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপালের সংঘাত চলছে। বিশেষত তৃণমূলের দুই বিধায়কের শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে। রাজভবনে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন তোলার পর থেকে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছে। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপাল মমতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। এ বার রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেল রাজ্যপালের বিরুদ্ধে।
সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের তরফে রিট পিটিশন দায়ের করেন আইনজীবী আস্থা শর্মা। তিনি আদালতকে জানান, রাজ্যপাল ওই বিলগুলি আটকে রেখে সংবিধানের ২০০ নম্বর বিধি ভঙ্গ করছেন, যা যেকোনও গণতন্ত্রে সুশাসনের বিরোধী এবং রাজ্যের জনকল্যাণের পরিপন্থী।
আটকে থাকা বিলগুলি:
১. পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধনী) বিল, ১৩ জুন ২০২২
২. পশ্চিমবঙ্গ পশু এবং মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন (সংশোধনী) বিল, ১৫ জুন ২০২২
৩. পশ্চিমবঙ্গ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন (সংশোধনী) বিল, ১৪ জুন ২০২২
৪. পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল, ১৭ জুন ২০২২
৫. পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধনী) বিল, ২১ জুন ২০২২
৬. পশ্চিমবঙ্গ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন (সংশোধনী) বিল, ২৩ জুন ২০২২
৭. পশ্চিমবঙ্গ নগর পরিকল্পনা এবং নগরোন্নয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন (সংশোধনী) বিল, ২৮ জুলাই ২০২৩
৮. পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইন (সংশোধনী) বিল, ৪ আগস্ট ২০২৩
প্রথম ছ’টি বিল পাশ হয়েছিল জগদীপ ধনখড় বাংলার রাজ্যপাল থাকাকালীন, আর শেষ দু’টি বিল পাশ করা হয়েছিল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সময়ে। রাজ্যপালের কাছে আটকে থাকা এই আটটি বিল রাজভবনে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ নবান্নের।
রাজ্য সরকারের আইনজীবী আস্থা শর্মা সুপ্রিম কোর্টে জানান, পূর্ববর্তী মামলাগুলির উদাহরণ টেনে এনে রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, যেমন তেলেঙ্গানা ও পাঞ্জাবের রাজ্যপালদের বিল অবিলম্বে ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছিল। তামিলনাড়ু ও কেরলের রাজ্যপালদের বিরুদ্ধেও সমালোচনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার আশা করছে, সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত এই বিষয়ে শুনানি করে রাজ্যপালের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং আটকে থাকা বিলগুলি রাজ্যপালের অনুমোদন পাবে।