ভারত: ২৮৩-১ (সঞ্জু স্যামসন ১০৯ নট আউট, তিলক বর্মা ১২০ নট আউট, লুথো সিমাপলা ১-৫৮)
সাউথ আফ্রিকা: ১৪৮ (১৮.২ ওভার) (ট্রিস্টান স্টাবস ৪৩, ডেভিড মিলার ৩৬, অর্শদীপ সিং ৩-২০, অক্ষর পটেল ২-৬)
জোহানেসবার্গ: এত সহজেও ব্যাট করা যায়। প্রতিপক্ষ সাউথ আফ্রিকা যেন দিশাহীন। ব্যাটিংয়ে তাদের নাচিয়ে দিয়ে এবং পরে বোলিংয়ে তাদের ল্যাজেগোবরে করে ৩-১ ব্যবধানে চার ম্যাচের টি২০ সিরিজ দখল করে নিল ভারত।
শুক্রবার দ্য জোহানেসবার্গে ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে আয়োজিত চতুর্থ তথা শেষ টি২০ ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় ভারত। নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে তারা করে ২৮৩ রান। দু’ জুনের সেঞ্চুরি, দু’ জুনেই নট আউট – সঞ্জু স্যামসন (১০৯) আর তিলক বর্মা ১২০। তিলক পর পর দুটি টি২০ ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন। এ দিন করলেন ৪৭ বলে ১২০ রান, ১০টি ছয় আর ৯টি চার সহযোগে। এই তিলকই হলেন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ এবং ‘প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ’।
আর সঞ্জু যে ক্রিকেটের এক বিস্ময়কর চরিত্র তা আবার প্রমাণ করে দিলেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ১১১ রান করে সঞ্জু চলে আসেন সাউথ আফ্রিকা ট্যুরে। এখানে প্রথম ম্যাচে আবার সেঞ্চুরি। ৫০ বলে ১০৭ রান। ধন্য ধন্য করে উঠল সবাই। তার পর টানা দুটি ম্যাচে শূন্য। শুরু হয়ে গেল ট্রোলিং। এ বার আবার জবাব দিয়ে দিলেন সঞ্জু ৫৬ বলে ১০৯ রান (৯টা ছয়, ৬টা চার) করে।

জয়ের পরে। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
রেকর্ডের বন্যা
রেকর্ডের বন্যা বয়ে গেল। সাউথ আফ্রিকায় টি২০ ম্যাচে সর্বোচ্চ স্কোর করল ভারত। আর আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে ভারতের এটা দ্বিতীয় সর্বাধিক স্কোর। তাদের সর্বাধিক স্কোর ২৯৭, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, এক মাস তিন দিন আগে। প্রথম ‘ফুল মেম্বার টিম’ এবং তৃতীয় আন্তর্জাতিক দল হিসাবে টি২০-এর এক ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করল ভারত। আর ভারতই একমাত্র দেশ যারা একটি টি২০ সিরিজে চারটি সেঞ্চুরি করল।
আরও রেকর্ড। দ্বিতীয় উইকেটে সঞ্জু আর তিলক করলেন ২১০ রান। টি২০ ম্যাচে ভারতের পক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বাধিক রানের জুটি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল সঞ্জু আর দীপক হুডার দখলে, ১৭৬ রান। তবে শুধু দ্বিতীয় উইকেটেই নয়, টি২০ ম্যাচে যে কোনো উইকেটের জুটিতেই ভারতের পক্ষে সর্বাধিক রান এল সঞ্জু ও তিলকের ব্যাট থেকে। এর আগে এই সর্বাধিক রান এসেছিল রিঙ্কু সিং ও রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে, ১৯০ রান।
শনিবারের দুই নায়কের সঙ্গে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব (মাঝে)। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
শুধু রান, রান, আর রান
কী ভাবে বর্ণনা করা যায় ভারতের এই ব্যাটিংকে। ‘ঝড়’ তো সামান্য কথা। একে সুপার সাইক্লোন বলা যায়। মাত্র ৫.৫ ওভারে এল ৭৩ রান। অভিষেক শর্মা আউট হয়ে গেলেন ১৮ বলে ৩৬ রান করে। তার পর সঞ্জুর সঙ্গী হলেন তিলক। ১০ ওভারে এল ১২৯। ২০০ রান এল আর মাত্র ৪ ওভারে। শেষ ৬ ওভারে এল বাকি ৮৪ রান।
১৪৮-এই গুঁড়িয়ে গেল প্রোটিয়ারা
জয়ের জন্য দরকার ২৮৫ রান। ভারতের খেলা দেখে ভিরমি খেয়ে গেল সাউথ আফ্রিকা। লড়াই করার মানসিকতাই তাদের ছিল না। গুঁড়িয়ে গেল মাত্র ১৪৮ রানে। দু’ অঙ্কের রান এল চার জনের ব্যাট থেকে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু’ জন – ২৯ বলে ৪৩ রান করলেন ট্রিস্টান স্টাবস এবং ২৭ বলে ৩৬ রান করলেন ডেভিড মিলার।
দলের ১ রানেই ২টি উইকেট পড়ে যায়। তার পর দলের ১০ রানে আরও ২টো উইকেটে। প্যাভিলিয়নে চলে গিয়েছেন রিজা হেনড্রিক্স (০ রান), রিয়ান রিকলটন (১ রান), আইডেন মার্করাম (৮ রান) এবং হাইনরিখ ক্লাসেন (০ রান)। এর পর পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন ট্রিস্টান স্টাবস এবং ডেভিড মিলার। পঞ্চম উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ৮৬ রান। দলের ৯৬ রানে চলে যান ওই দুই ব্যাটার। এর পর বাকি ৪২ রানে দলের ৪ উইকেট পড়ে যায়। ভারতের সবাই উইকেটগুলো ভাগ করে নেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্শদীপ সিং (২০ রানে ৩ উইকেট), অক্ষর পটেল (৬ রানে ২ উইকেট) এবং বরুণ চক্রবর্তী (৪২ রানে ২ উইকেট)। তবে খালি হাতে ফিরলেন না হার্দিক পাণ্ড্য, রমনদীপ সিং এবং রবি বিশ্নোয়।