Home খেলাধুলো ক্রিকেট ট্র্যাজিক নায়কের তকমা ঝেড়ে ফেলে প্রকৃত নায়ক হয়ে উঠলেন মহম্মদ সিরাজ

ট্র্যাজিক নায়কের তকমা ঝেড়ে ফেলে প্রকৃত নায়ক হয়ে উঠলেন মহম্মদ সিরাজ

Mohammed Siraj
মহম্মদ সিরাজ, ছবি-বিসিসিআই এক্স

শ্রয়ণ সেন

“সকালে ঘুম থেকে উঠে বিলিভের ইমেজ ডাউনলোড করে ওয়ালপেপারে লিখেছিলাম। নিজেকে বলেছিলাম, আমি ক্যাচ ছেড়েছি, আমিই ম্যাচ জেতাব।”

পুরস্কার বিতরণী সভায় আবেগপ্রবণ গলায় যিনি এই কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন, তাঁর নাম মহম্মদ সিরাজ। নিশ্চিত করে বলতে পারি, ওভাল টেস্টের ফলটা যদি ঠিক উলটো হত, তা হলে এতক্ষণে তাঁকে নিয়ে কাঁটাছেড়া শুরু হয়ে যেত। মোক্ষম সময়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফস্কানোর ঘটনাটাকেই সামনে নিয়ে আসা হত। পিছনে চলে যেত, এই সিরিজে তাঁর সামগ্রিক অবদান।

আর পাঁচ জন ক্রিকেটারের থেকে তিনি অন্য রকম। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো শুধু উদযাপনই নয়, সিরাজ লড়াইও করেন বুক চিতিয়ে। মুহূর্তের মধ্যে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগে জাতীয় সংগীত চলাকালীন আবেগ ধরে রাখতে না পেরে যাঁর চোখ ফুটে জল বেরিয়ে এসেছিল, তিনি যে অন্য রকম তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

টি২০-তে অভিষেকের সাড়ে তিন বছর পর টেস্ট অভিষেক এবং সেই সিরিজের শেষ টেস্টে এক্কেবারে দলের পেস আক্রমণের নেতা হয়ে ওঠা সিরাজের উত্থান যেমন স্বপ্নের মতো, তেমনই তিনি প্রচারের আলোর বাইরে থেকেও গিয়েছেন কাব্যে উপেক্ষিতের মতো। একদিকে যখন প্রচারের যাবতীয় লাইমলাইট নিজের দিকে টেনে নিচ্ছেন জসপ্রীত বুমরাহ, তখন সব কিছুর আড়ালে থেকে শুধু নিজের কাজেই মনোনিবেশ করে গিয়েছেন সিরাজ।

বুমরাহ এই সিরিজে দুটো টেস্টে বিশ্রাম নিয়েছেন। কিন্তু সিরাজের বিশ্রাম নেওয়ার কোনো বালাই নেই। ভাবতে অবাক লাগবে যে এই সিরিজে এক হাজারের ওপরে বেশি বল করেছেন তিনি। দু’বার পাঁচ উইকেট-সহ মোট ২৩টা উইকেট নিয়ে এই সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও তিনি।

অথচ, সব সিরাজকে এত দিন পর্যন্ত এই সিরিজে মনে রাখা হচ্ছিল তৃতীয় টেস্টে লর্ডসে দুর্ভাগ্যবশত আউটটার জন্য। আর আজ যদি ভারত হেরে যেত তা হলে হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ফস্কানোটাই সিরাজের গায়ে একটা চিরস্থায়ী তকমা লাগিয়ে দিত। কিন্তু বার বার তিনি ট্র্যাজিক নায়ক থাকবেন? বার বার কাব্যে উপেক্ষিত থেকে যাবেন, সে তো হতে পারে না।

আজ তাই অন্য রকম হওয়ারই ছিল। হাতে চার উইকেট, করতে হবে ৩৫ রান, এ তো ইংল্যান্ডের কাছে সোজা। যদিও আগের দিন তিন উইকেটে তিনশো থেকে খেলা যে ভাবে ভারতের দিকে ঘুরেছে, তাতে ভারতের ক্ষীণ একটা আশাও দেখা যাচ্ছিল।

ওই ক্ষীণ আশাটাই জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠল সিরাজের জন্য। অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন, যিনি প্রকৃত অর্থেই দেশের জন্য বুক চিতিয়ে লড়েন, সেই সিরাজই আজ দেখিয়ে দিলেন। পরিসংখ্যান বলছে, শেষের চারটে উইকেটের তিনটেই তাঁর। কিন্তু পরিসংখ্যান যেটা বলছে না, তা হল স্নায়ুর ওপরে অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ রেখে কী ভাবে তিনি শেষের উইকেটটা নিলেন, যেখানে বিপক্ষের ব্যাটসম্যান একটা ছয় মেরে দিলেই ম্যাচ ইংল্যান্ডের পকেটে চলে যেত।

হ্যাঁ, এই ম্যাচ এতটাই টানটান হয়েছে যে একটা মাত্র ছয়ের ফারাক ছিল দুই দলের জয়ের মধ্যে। ঠিক এতেই বোঝা যায় মহম্মদ সিরাজের অবদানের গুরুত্ব।

ইনিংসে পাঁচ উইকেট, গোটা ম্যাচে নয় উইকেট, ম্যাচের সেরার পুরস্কার এবং ভারতের জয়ের মূল কারিগর। এভাবে ট্র্যাজিক নায়কের তকমা ঝেড়ে প্রকৃত নায়ক হয়ে যাওয়া, এ ভাবে বার বার হেরে যেতে যেতে একদিন জিতে যাওয়ার নামই মহম্মদ সিরাজ।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version