মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: ২ (জেসন কামিংস, লালেংমাউইয়া রালতে) (৩)
জামশেদপুর এফসি: ০ (২)
কলকাতা: ২৪ বছর বয়সি মিজো মিডফিল্ডার লালেঙমাউইয়া রালতে ভারতীয় ফুটবলে আপুইয়া নামে সুপরিচিত। শেষ মুহূর্তে সেই আপুইয়ার গোলে জামশেদপুর এফসি-র উপর মধুর প্রতিশোধ নিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং পৌঁছে গেল আইএসএল-এর ফাইনালে।
জামশেদপুর এফসি ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল ম্যাচের প্রথম লেগে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল। ফাইনালে যেতে হলে অন্তত দু’ গোলের ব্যবধানে জয় প্রয়োজন ছিল টানা দু’বারের শিল্ডজয়ীদের। সোমবার তা-ই হল। দ্বিতীয় লেগে নিজেদের ঘরের ২-০ গোলে জামশেদপুরকে হারিয়ে সামগ্রিক ফলে (৩-২) এগিয়ে থেকে ফাইনালে চলে গেল মোহনবাগান।

জয়ের পরে মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের উল্লাস।
ফাইনালে মোহনবাগান মুখোমুখি হবে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি-র। বেঙ্গালুরু এফসি সেমিফাইনাল ম্যাচের প্রথম লেগে এফসি গোয়াকে ২-০ গোলে পরাজিত করে। দ্বিতীয় লেগে গোয়া ২-১ গোলে বেঙ্গালুরুকে হারালেও সামগ্রিক ফলে (৩-২) এগিয়ে থেকে বেঙ্গালুরু পৌঁছে গিয়েছে ফাইনালে। আগামী শনিবার সল্ট লেকের বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।
গত বার আইএসএল-এ শিল্ড জেতার পরেও নক আউট ফাইনালে জয় অধরা থেকে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনীর। মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে তারা হেরে গিয়েছিল। সোমবারের জয় সবুজ-মেরুন বাহিনীকে আবার ফাইনালে তুলল। আইএসএলের ইতিহাসে মোহনবাগান এ বার জোড়া খেতাব জিততে পারে কি না এখন সেটাই দেখার।
জয়ের পরে গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস।
৫০ মিনিটে প্রথম গোল
সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত ম্যাচে মোহনবাগান শুরু থেকেই প্রবল চাপে রেখে দিয়েছিল প্রতিপক্ষকে। কিন্তু গোলের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৫০ মিনিট পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত ৫০ মিনিটের মাথায় গোল এল পেনাল্টি থেকে।
প্রতিপক্ষকে গোলের সুযোগ করে দিলেন জামশেদপুর এফসি-র বঙ্গতারকা প্রণয় হালদার। মোহনবাগানের কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল হাতে লাগিয়ে ফেলেন প্রণয়। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে কোনো দ্বিধা করেননি। আর সেই পেনাল্টি থেকে বেঙ্গালুরুর জালে বল জড়াতে কোনো ভুলচুক করেননি জেসন কামিংস। মোহনবাগান এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের জয়ের সাক্ষী থাকলেন লখনউ সুপার জায়ান্টস-এর অধিনায়ক ঋষভ পন্থ। পাশে সঞ্জীব গোয়েনকা।
অতিরিক্ত সময়ের ৪ মিনিটে জয়সূচক গোল
এর পর সমানে সমানে খেলা চলতে থাকে দুই দলের মধ্যে। বরং তুলনায় মোহনবাগানের আক্রমণের ঝাঁঝ কিছুটা যেন কমে যায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর কোনো গোল করতে পারেনি সবুজ-মেরুন।
অতিরিক্ত সময় পাওয়া যায় পাঁচ মিনিট। এটাই ছিল মোহনবাগানের গোল করার শেষ সুযোগ। অতিরিক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে অসাধারণ এক গোল করে দলকে বহু আকাঙ্খিত জয় এনে দেন লালেঙমাউইয়া রালতে তথা আপুইয়া। বেঙ্গালুরুর বক্সের সামনে আপুইয়াকে গোলের শট প্রায় সাজিয়ে দিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ থাপা। গোলের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে অসাধারণ মাপা শটে হাওয়ায় গতিপথ বদলে প্রতিপক্ষের বারের ঠিক নীচ দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিলেন আপুইয়া। উল্লাসের বিস্ফোরণ হল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। এ দিনের ম্যাচ মোহনবাগান জিতে গেল ২-০ গোলে। সেমিফাইনালের সামগ্রিক ফল ৩-২।
চার বার ফাইনালে মোহনবাগান
এই নিয়ে চার বার আইএসএল নক আউটের ফাইনালে উঠল মোহনবাগান। ২০২০-২১-এর ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ২-১ গোলে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল মোহনবাগান। ২০২২-২৩-এ ম্যাচ ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর পেনাল্টি শুট আউটে বেঙ্গালুরুকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সবুজ-মেরুন। পরের বছর আবার মুম্বইয়ের কাছে হার ৩-১ গোলে। এ বার আবার বেঙ্গালুরুর মুখোমুখি মোহনবাগান।
ছবি: সঞ্জয় হাজরা