Home খেলাধুলো এশিয়া কাপ হকি: কোরিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত, খুলে গেল বিশ্বকাপের দরজা

এশিয়া কাপ হকি: কোরিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত, খুলে গেল বিশ্বকাপের দরজা

এশিয়া কাপ হকি চ্যাম্পিয়ন ভারত।

ভারত: ৪ (সুখজিৎ সিংহ, দিলপ্রীত সিংহ ২, অমিত রোহিদাস) কোরিয়া: ১ (সন দাইন)

রাজগীর (বিহার): আট বছর পর হকির এশিয়া কাপ জিতল ভারত। গত বারের বিজয়ী দক্ষিণ কোরিয়াকে ফাইনালে ৪-১ গোলে দুরমুশ করে ট্রফি জিতে নিল তারা। ফাইনালের খেলায় দুটি গোল করলেন দিলপ্রীত সিংহ। বাকি দু’টি গোল সুখজিৎ সিংহ এবং অমিত রোহিদাসের। এই জয়ের ফলে পরের বছর হকি বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্রও পেয়ে গেল ভারত।  

এই নিয়ে চার বার এশিয়া কাপ জিতল ভারত। পাকিস্তানকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ভারত প্রথম বার এশিয়া কাপ জিতেছিল ২০০৩ সালে। পরের এশিয়া কাপে আবার চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। সালটা ছিল ২০০৭। সে বার কোরিয়াকে ৭-২ গোলে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল। এর পর দুটি এশিয়া কাপে ভারত ট্রফি জিততে পারেনি। তৃতীয় ট্রফি আসে ২০১৩ সালে। মালয়েশিয়াকে ২-১ হারিয়েছিল ভারত। তার পর একটি এশিয়া কাপ হাতছাড়া হওয়ার পর আবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ফিরল ভারত।   

asia cup india wins 3 08.09

ম্যাচের একটি মুহূর্ত।

রবিবার রাজগীর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলায় প্রতি কোয়ার্টারে একটি করে গোল করে ভারত। প্রথম কোয়ার্টারে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সুখজিৎ সিংহ। এর পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কোয়ার্টারে গোল করেন দিলপ্রীত সিংহ। এবং শেষ কোয়ার্টারে চূড়ান্ত গোল করেন অমিত রোহিদাস। ওই কোয়ার্টারে ১টি গোল শোধ করে কোরিয়া। গোলদাতা সন দাইন।

প্রথম কোয়ার্টারের খেলা শুরু হতে না হতেই গোল করে বসে ভারত। তখন ম্যাচের মাত্র ৩১ সেকেন্ড কেটেছে। ম্যাচ শুরু হতেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারত। কোরিয়া তখন তাদের রক্ষণ নিয়েই ব্যস্ত। হঠাৎ কোরিয়ার বৃত্তের মধ্যে বল পেয়ে যান সুখজিৎ। রিভার্স হিটে গোল করেন তিনি। ভারত এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। এর পর ভারতের আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ে। ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগও পায়, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। ইতিমধ্যে পেনাল্টি স্ট্রোকও নষ্ট করে।

ম্যাচ জয়ের পরে।

প্রথম কোয়ার্টারে আগ্রাসী খেলার পর দ্বিতীয় কোয়ার্টারে খেলা বেশ বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। কোরিয়া রক্ষণকে আরও জোরদার করে। সেই রক্ষণ ভেঙে ভারতের ঢোকা মুশকিল হয়ে ওঠে। ঠিক যখন মনে হচ্ছিল দ্বিতীয় কোয়ার্টারে গোল হবে না, তখনই ব্যবধান বাড়ায় ভারত। একটি লম্বা বল পেয়ে দিলপ্রীত সিংহের দিকে দেন সঞ্জয়। বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ফাঁকফোকরের মাঝখান দিয়ে গোল করে ব্যবধান বাড়ান দিলপ্রীত। ভারত এগিয়ে যায় ২-০ গোলে।

তৃতীয় কোয়ার্টারে আবার আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে ভারত। পাঁচ মিনিটের মধ্যে কোরিয়ার বৃত্তের মধ্যে থেকে শট নেন অভিষেক। কিন্তু তা বাঁচান কোরিয়ার গোলকিপার। ফিরতি বল পান দিলপ্রীত। তিনি তা থেকে গোলও করেন। কিন্তু তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর একটি পেনাল্টি কর্নারও নষ্ট করে ভারত। এর পর তৃতীয় গোল আসে। অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংহ বৃত্তের মধ্যে থাকা রাজিন্দরকে পাস দেন। রাজিন্দর পাস দেন দিলপ্রীতকে। দিলপ্রীত গোল করতে ভুলচুক করেননি। ভারত এগিয়ে যায় ৩-০ গোলে।

ট্রফি তুলে ধরেছেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংহ।

চতুর্থ তথা শেষ কোয়ার্টারে দুটি গোল হয়। কোয়ার্টারের খেলা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে চতুর্থ গোল করে ভারত। পেনাল্টি কর্নার পেয়েছিল ভারত। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে ভারত কাজ হাসিল করে। পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করায় সিদ্ধহস্ত হরমনপ্রীত যখন শট মারার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন, তখন কোরীয়রা তাঁর দিকেই দৌড়চ্ছিলেন। কিন্তু তাঁরা পরক্ষণেই বুঝতে পারেন বল পাশের ‘ব্যাটারি’তে থাকা অমিত রোহিদাসের কাছে। কোরীয়রা কিছু করার আগেই অমিতের শট কোরিয়ার গোলে ঢুকে যায়।

পরের মিনিটে একটি গোল শোধ করে কোরিয়া। পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করেন সন দাইন। ভারত ৪-১ গোলে জিতে যায়। রানার্স হয়ে এবারের এশিয়া কাপে তাদের যাত্রা শেষ করে কোরিয়া।

পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানের লড়াইয়ে জাপান হারাল বাংলাদেশকে।

তিনে মালয়েশিয়া, চারে চিন, পাঁচে জাপান, ছয়ে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপের খেলা শুরু হয় ২৯ আগস্ট। শেষ হল রবিবার ৭ সেপ্টেম্বর। ফাইনাল রাউন্ডের প্রতিযোগিতায় ৮টি দল যোগ্যতা অর্জন করেছিল। খেলা হয় বিহার স্পোর্টস ইউনিভার্সিটির রাজগীর স্টেডিয়ামে। রবিবার রাজগীর স্টেডিয়ামে ৩টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছিল জাপান এবং বাংলাদেশ। জাপান এই ম্যাচে ফার্স্ট কোয়ার্টারে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল।  দ্বিতীয় কোয়ার্টার গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হওয়ার পর তৃতীয় কোয়ার্টারে ৪-০ গোলে এগিয়ে যায় জাপান এবং শেষ কোয়ার্টারে ২টি গোল করে এবং ১টি গোল খেয়ে শেষ পর্যন্ত ৬-১ গোলে বাংলাদেশকে পরাজিত করে এই প্রতিযোগিতার পঞ্চম স্থান দখল করে জাপান। বাংলাদেশ পায় ষষ্ঠ স্থান।

এর পর তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থান দখলের জন্য মাঠে যায় মালয়েশিয়া এবং চিন। সেই ম্যাচে চিনকে ৪-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থান পায় মালয়েশিয়া। উল্লেখ্য, শনিবার সপ্তম এবং অষ্টম স্থানের লড়াইয়ে কাজাখস্তান ৬-৪ গোলে হারায় চিনা তাইপেইকে।

ছবি: সঞ্জয় হাজরা

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version