Home শিল্প-বাণিজ্য মধ্যবিত্তের টাকা নয়ছয়ের ফন্দি? আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যুতে বিস্ফোরক দাবি প্রবীণ আইনজীবীর

মধ্যবিত্তের টাকা নয়ছয়ের ফন্দি? আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যুতে বিস্ফোরক দাবি প্রবীণ আইনজীবীর

0

মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং শেয়ারে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। তার পরে আদানি গ্রুপের সমস্ত কোম্পানির বাজার মূলধনে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বন্ড। জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যদের কমিটি গঠন করেছে সর্বোচ্চ আদালত। এরই মধ্যে বিস্ফোরক দাবি পেশ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী হরিশ সালভে।

মধ্যবিত্তকে দুর্ভোগে ফেলে টাকা উপার্জন

হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর শুধু আদানি গোষ্ঠী নয়, পুরো শেয়ার বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। কোটি কোটি টাকা খোয়াতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে রাজনীতিও। তবে উল্টো দিকে, বেশ কিছু ব্যবসায়ী শর্ট সেলিং করেও লাভবান হয়েছিলেন। এই যুক্তিকে সামনে রেখে প্রবীণ আইনজীবী হরিশ সালভে এনডিটিভি-র কাছে বলেন, শর্ট সেলার হিন্ডেনবার্গও ধোয়া তুলসীপাতা নয়। বিষয়টির সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। আর সেটা হল মধ্যবিত্তকে আতঙ্কিত করে তুলে টাকা উপার্জন।

তাঁর কথায়, “এটার একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। হিন্ডেনবার্গ এমন কোনো নির্ভেজাল সংস্থা নয়, যারা অন্যায়কে প্রকাশ করেছে। তারা সময় বুঝেই রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। শর্ট সেলিংয়ের জন্যই এটা করা হয়েছিল”।

তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, “এটা আমার পরামর্শ, আমি এটা প্রকাশ্যে বলেছি এবং আমি বারবার বলছি, সুপ্রিম কোর্টের কমিটিকে অবশ্যই তাদের সকলকে খুঁজে বের করতে হবে যারা শেয়ার শর্ট করে মধ্যবিত্তের বিনিয়োগ করা কোটি কোটি টাকা হস্তগত করেছে”।

নিজের বক্তব্যকে মান্যতা দিতে সালভে বলেন, “এটাকে বাজারের ম্যানিপুলেশন হিসাবে বিবেচনা করে তাদের অবিলম্বে তাড়ানো হোক। শেয়ার কেনাবেচা থেকে তাদের নিষিদ্ধ করা হোক। আমাদের শেয়ার বাজারে অবশ্যই একটি নজির সৃষ্টি করতে হবে। এ ধরনের যে কোনো রিপোর্ট থাকলে, সেটাকে অবশ্যই সেবি-তে যেতে হবে, গুরুতর আর্থিক জালিয়াতির তদন্তকারী সংস্থার অফিসে যেতে হবে। কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক রয়েছে, তারা তদন্ত করবে”।

ভারত এই খেলায় নতুন!

বলে রাখা ভালো, বিষয়টি নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হতেই কোম্পানি আইনের “ধারা ২০৬”-এর অধীনে ব্যবস্থা নিয়েছিল কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক। এর আওতায় আদানিদের বছরের পর বছর জমা দেওয়া ব্যালেন্স শিট, লেজার ইত্যাদির মতো অন্যান্য ব্যবসায়িক লেনদেনের নথিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর জেনারেলের নেতৃত্বে এই তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে নজর রাখছে মন্ত্রক।

সালভে আরও বলেন, এ ভাবে কোনো সংস্থাকে পরিকল্পিত ভাবে লক্ষ্যবস্তু করলে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি (SEBI) হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। বাজারের অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন, এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। যাঁরা মধ্যবিত্তের বিনিয়োগ শুষে নিচ্ছে, তাঁরাই এর নেপথ্যে রয়েছে।

প্রবীণ আইনজীবীর দাবি, “ভারত এই খেলায় নতুন। আমরা আমাদের পুঁজিবাজার বৃদ্ধি করছি। মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভাবছেন, যে সংস্থায় বিনিয়োগ করছেন, আগামীকাল যদি সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে অন্য একটা হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট আসে। ফলে আমাদের অবশ্যই কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে মধ্যবিত্ত শেয়ারহোল্ডারদের এই দুর্ভাগ্য থেকে টেনে তোলা যায়”।

সুপ্রিম কোর্টের কমিটি

গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা কারচুপির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেখা দেয় চরম সংকট। প্রভাব পড়ে সংস্থার শেয়ারে। গত ২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত রিপোর্টে আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে শেয়ার ‘স্টক ম্যানিপুলেশন’ এবং ‘অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতির’ অভিযোগ তুলেছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। তারা জানিয়েছিল, বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর ঘাড়ে। তাছাড়া তাদের শেয়ারের ভ্যালুয়েশনও মাত্রাতিরিক্ত। ফলে যে কোনো সময়ে ভেঙে পড়তে পারে তাসের ঘর। মার্কিন সংস্থার ভয়ানক রিপোর্টের পরেই টলে গিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার।

মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। আদানি গোষ্ঠী প্রকৃতপক্ষে সেবি-র নিয়মের ১৯ নম্বর ধারার কোনো ভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না এবং শেয়ারের দামে কোনো ভাবে কারচুপি হয়েছে কি না, সেই সমস্ত বিষয়ে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএম সাপ্রে। তদন্ত পরিচালনাকারী কমিটিতে প্রাক্তন বিচারপতি ওপি ভাট এবং জেপি দেবদত্তও থাকবেন। আদালত সোমশেখরন সুন্দরেসান, প্রবীণ ব্যাঙ্কার কেভি কামাথ এবং ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকানিকে কমিটিতে নিযুক্ত করেছে।

এই তদন্তের অগ্রগতি সম্বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক গঠিত কমিটিকে অবগত রাখতে হবে সেবি-কে। এই গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের তরফে সেবি-কে দু’মাস সময় দেওয়া হয়েছে। দু’মাসের মধ্যে আদানির বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে সেবি-কে। আদালতের নির্দেশের পর সেবি জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে তদন্ত শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: মাত্র এক মাস! ধনী তালিকায় তৃতীয় থেকে ৩৮তম স্থানে নেমে এলেন গৌতম আদানি

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version