ভারতের ফার্মা শিল্প সম্ভাব্য মার্কিন ‘প্রতিশোধমূলক শুল্কে’র কারণে বড় কোনো ধাক্কা খাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কম খরচের জেনেরিক ওষুধ সরবরাহে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় এই শিল্পের ওপর শুল্কের প্রভাব সীমিত থাকবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত জেনেরিক ওষুধের ৪৫ শতাংশই ভারত সরবরাহ করে, যা দেশটির সাশ্রয়ী চিকিৎসা পরিষেবার একটি বড় অংশ। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনতে ফার্মাসিউটিক্যালস, অটোমোবাইল এবং সেমিকন্ডাক্টর আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এই ঘোষণার পর ফার্মা স্টক কিছুটা চাপের মুখে পড়লেও শিল্প বিশেষজ্ঞরা তেমন বড় প্রভাব দেখছেন না।
টিওআই-এর একটি বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানি বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের, যার বেশিরভাগই অত্যাবশ্যকীয় জেনেরিক ওষুধ। বিশ্লেষকদের মতে, এই ওষুধের চাহিদা স্থিতিশীল এবং শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম।

‘প্রস্তাবিত শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলছে’
ইন্ডিয়ান ফার্মা অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল সুদর্শন জৈন বলেন, “ভারতীয় ফার্মা শিল্প যুক্তরাষ্ট্রে সাশ্রয়ী ও গুণগতমানের ওষুধ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৪৭ শতাংশ জেনেরিক ওষুধ ভারত থেকেই আসে। প্রতিশোধমূলক শুল্কের বিষয়টি এখন আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে আশা করা যায়।”
পিডব্লিউসি ইন্ডিয়ার গ্লোবাল হেলথ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাডভাইজরি লিডার সুজয় শেঠি জানান, “শুল্কের প্রভাব উদ্ভাবনী ওষুধ নির্মাতাদের ওপর বেশি পড়তে পারে, কিন্তু জেনেরিক ওষুধের ওপর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম হবে। কিছু খরচ ভোক্তা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের ওপর স্থানান্তরিত হবে, কিছু অংশ বিক্রেতাদের শোষণ করতে হবে। চূড়ান্ত প্রভাব নির্ভর করবে আলোচনার ফলাফলের ওপর।”
আইসিআরএ-র বিশ্লেষক দীপক জোটওয়ানি বলেন, “ভারত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দেশটির ৪৫-৫০ শতাংশ জেনেরিক ওষুধের চাহিদা ভারত থেকেই পূরণ হয়। তাই সামগ্রিকভাবে ভারতীয় ফার্মা শিল্পের ওপর বড় কোনো ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা কম।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বাড়ায় সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ সরবরাহে ভারতকে এড়ানো কঠিন হবে। ফলে আলোচনার মাধ্যমে এমন কোনো সমাধান আসতে পারে, যা উভয় দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করবে।