কলকাতা,: অষ্টম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস) অভূতপূর্ব সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা করেন, শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারই ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এছাড়াও, রাজ্য সরকারের সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ২১২টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘আমি জানি সকলেই একটা কথা জানার অপেক্ষায় রয়েছেন। তা হল, কত কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এল। আজ শুধু এক দিনেই ৪.৪৪ লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছে, যা অভূতপূর্ব।’’
বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুকেশ অম্বানি, সঞ্জীব গোয়েনকা, সজ্জন জিন্দল এবং সঞ্জীব পুরীর মতো শিল্পগুরুদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ঘোষণা শোনা গিয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেন, বুধবারের ঘোষণাগুলো আনুষ্ঠানিকতা ছিল, কিন্তু বৃহস্পতিবারের বিনিয়োগ প্রস্তাবই প্রকৃত হিসাবে ধরা হয়েছে। তিনি আরও জানান, মুকেশ অম্বানি এবং সজ্জন জিন্দল ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে জানিয়েছেন যে তাঁদের গোষ্ঠী বাংলায় আরও বিনিয়োগ করবে। মমতা বলেন, ‘‘মুকেশজি বাংলায় এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন।’’
এমএসএমই ক্ষেত্রে জোরালো আলোচনা
বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিজিবিএসের শেষ দিনের প্রথমার্ধে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) বিষয়ক আলোচনা হবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুটি ধাপে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে (বি-টু-বি) আলোচনা হয়, যেখানে শিল্পপতিরা পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দ্বিতীয় ধাপে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সরকারের (বি-টু-জি) আলোচনা হয়, যেখানে শিল্পপতিরা সরকারের কাছে তাদের সমস্যা ও চাহিদা তুলে ধরেন।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় এমএসএমই ক্ষেত্রের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘‘বাংলায় এমএসএমই সেক্টরে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ কর্মরত। এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে।’’ তিনি আরও বলেন, এই ক্ষেত্রটি রাজ্যের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এবং এর উন্নয়নের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিরোধীদের জবাব
বুধবার বিজিবিএসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছিল যে, আগের বাণিজ্য সম্মেলনগুলিতে বিনিয়োগের অনেক ঘোষণা হলেও বাস্তবে তার খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী সেই সমালোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘সকলেই মানছেন বাংলা বদলে গিয়েছে। প্রতি বছর বিজিবিএসের কলেবর বাড়ছে। এখন শুধু দেশের শিল্পপতিরাই নন, ২০টি দেশ আমাদের সহযোগী হয়েছে।’’
পরবর্তী পদক্ষেপ
এই বিজিবিএসের সমাপ্তি অনুষ্ঠান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পরবর্তী বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে আরও একটি বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্মেলনে বিনিয়োগ প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে বিধানসভা নির্বাচনে যাওয়ার অবকাশ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শিল্প মহলের প্রতিক্রিয়া
শিল্পপতিরা বৃহস্পতিবারের আলোচনার নির্যাস তুলে ধরে বলেন যে, এমএসএমই ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগ, প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সরকারি সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। তারা সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং বাজারজাতকরণে সহায়তার জন্য আবেদন জানান।
বিজিবিএসের এই সাফল্য বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিল্প মহল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন।