Home দুর্গাপার্বণ হুগলির জোলকুলের ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপুজোর এ বার ২১৯ বছর

হুগলির জোলকুলের ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাপুজোর এ বার ২১৯ বছর

0

অভিজিৎ ভট্টাচার্য

২১৯ বছর আগে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল হুগলির জোলকুলের ভট্টাচার্য পরিবারে। সেই সময় গ্রামে কোনো পুজো ছিল না। কাছের পুজো বলতে ছিল ভাসতারার সিংহবাড়ির দুর্গাপুজো। ভাসতারার সিংহরা ছিলেন বাংলার বারো ভুঁইয়ার অন্যতম। সে যা-ই হোক, জোলকুলের জমিদার হরিদাস ভট্টাচার্যকে তাঁর মা উজ্জ্বলাময়ী দেবী অনুরোধ করেন মা দুর্গাকে বাড়িতে আনার জন্য। মায়ের অনুরোধ রাখতেই ভট্টাচার্যবাড়িতে  দুর্গাপুজোর সূচনা করেন জমিদারমশাই। আজও উজ্জ্বলাময়ী দেবীর নামেই পুজোর সংকল্প হয়।

ভট্টাচার্যবাড়ির দুর্গাপুজোর দুটো বৈশিষ্ট্য – এক, চালচিত্রের সাবেকি দুর্গাপ্রতিমা এবং দুই, মহাষ্টমী তিথির শেষ লগ্নে সন্ধিপুজোয় মাকে এক মণ চালের নৈবেদ্য নিবেদন করা।

বছরদুয়েক আগেও এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার অমিতাভ ভট্টাচার্য। তাঁর কথাতেই এই ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো সুসম্পন্ন হত। আজ তিনি নেই, তবে তাঁর কথা স্মরণ করেই নির্বিঘ্নে সুসম্পন্ন হয় ভট্টাচার্যবাড়ির পুজো। তিনি বলতেন, মূলত নিষ্ঠা আর ভক্তিই ভট্টাচার্যবাড়ির পুজোর মূল সম্বল। তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন এই পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের যে যেখানেই থাকুন না কেন, পুজোর সময় সবাই জোলকুলে জড়ো হন। পুজোয় সবাই যোগ দেন।

প্রতিমা তৈরি হয় ভট্টাচার্যবাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে। রথের দিন হয় কাঠামোপুজো। ষষ্ঠীর দিন বোধনঘর থেকে ভট্টাচার্য পরিবারের পুরোহিতমশাই পূত অগ্নি নিয়ে গিয়ে চণ্ডীমণ্ডপে মায়ের পুজোর সূচনা করেন। সপ্তমীর সকালে হয় নবপত্রিকা স্নান এবং দেবীর চক্ষুদান। এই পরিবারের পুজোয় কুমারীপুজোর চল আছে। নবমীর দিন কুমারীপুজো হয়।

এই পরিবারের পুজোয় কোনো বলি হয় না। পুজোর চার দিন দেবীকে ভোগের সঙ্গে নিবেদন করা হয় শুক্তো, মোচার ঘণ্ট, আমসত্ত্বের চাটনি, কপির তরকারি, পোস্ত, এঁচোড় এবং দশ রকমের ভাজা। দশমীর সকালে হয় হোম। সন্ধ্যার পর বাড়ির মহিলাদের বরণের পর পরিবারের দিঘিতে প্রতিমা বিসর্জন হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই পরিবারের বিষয়জমির কিছু অংশ দেবত্র করা আছে। সেই টাকা এবং ট্রাস্টের টাকায় পুজো হয়। মায়ের পুজোর ব্যাপারে পরিবারের সকল সদস্যই একমত থাকেন।

কলকাতা থেকে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনে গুড়াপ স্টেশনে নেমে বাসে করে ভাসতারার কমলাসাগরের পাড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে টোটো বা রিকশায় জোলকুলের ভট্টাচার্যবাড়ি। কলকাতা থেকে সময় লাগে মোটামুটি দেড় ঘণ্টা। গাড়িতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গিয়ে যেখান থেকে গুড়াপের রাস্তা বেরিয়েছে সেখানেই ডান দিকে ঘুরতে হবে। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৬৬ কিমি।

আরও পড়ুন

স্বদেশির গন্ধমাখা উত্তরপাড়া চ্যাটার্জিবাড়ির ৩০২ বছরের দুর্গাদালান

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version