Home দুর্গাপার্বণ লীলা মজুমদারের গল্পের জগৎ মণ্ডপে, কাশী বোস লেনের এবছরের থিম ‘পাকদণ্ডী’

লীলা মজুমদারের গল্পের জগৎ মণ্ডপে, কাশী বোস লেনের এবছরের থিম ‘পাকদণ্ডী’

0

দুগ্গামায়ের আসার খবরে আনন্দে মেতে উঠেছে আট থেকে আশির মন। প্রতি বছর নিত্য নতুন থিমে চমক লাগায় উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন। এবছর কাশী বোস লেনের পুজো জুড়ে থাকবেন বাঙালির প্রিয় সাহিত্যিক লীলা মজুমদার। তাঁর সহজ-সরল জগত, গপ্পের চরিত্ররাই উঁকি দেবে মণ্ডপে। কাশী বোস লেনের এ’বছরের থিম হল ‘পাকদণ্ডী।’ শিল্পী অনির্বাণ দাস আছেন সৃজনের দায়িত্বে।

শিল্পী অনির্বাণের কথায়, ‘বাঙালির প্রিয় ঋতু শরৎকাল। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়াতে দেখলেই প্রত্যেক বাঙালির মন আনন্দে মেতে ওঠে। শরৎ এলেই ছাদের আলসের ধারে শুয়ে থাকা হুলোবেড়ালের মতো আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায় মন। তারপর ছুট ছুট ছুট! এক লাফে ঝলমলে রোদ্দুর মেখে আকাশে ডানা মেলতে চায়। কখনো টয়ট্রেনে চেপে ‘টংলিং’ করতে করতে পাড়ি দিতে চায় দূর পাহাড়ে। কিংবা ‘নাকু-গামা’র মতো এরোপ্লেনে চেপে পৌঁছে যায় নেফার জঙ্গলে। যেখানে পদে পদে বিপদ, অ্যাডভেঞ্চার।

পুজো মানে উৎসব। উৎসব মানে আনন্দ, হই-হুল্লোড়, কাতারে কাতারে মানুষের মেলা। আর মেলা মানেই পাঁপড়ভাজা, জিলিপি, নাগরদোলা, রঙবেরঙের বেলুন, দুমফটাশ বন্দুক, প্যাঁপো ভেঁপু, আইসক্রিম, ম্যাজিক― হরেকরকম মজা! মেলার মাঠে চলে পুতুল নাচ। সেসব পুতুলরা যখন কথা বলে, হেঁটে বেড়ায়, ‘অ্যাক্টো’ করে―তখন কি আর পড়ায় মন বসে? পুজোর নতুন জামা-জুতো নিয়েই সবাই মশগুল। কারো কারো হাতে নতুন রঙচঙে ‘পুজোবার্ষিকী’। পাতায় পাতায় চমৎকার সব ছবি আর গল্প। রেলগাড়ির ভোঁ জানান দেয়, মা চললেন বাপের বাড়ি। কোলে তাঁর খোকা গণেশ। লক্ষ্মী-সরস্বতী, অসুর আর সিঙ্গিমামার হাতে বাক্স-প্যাঁটরা। দস্যি কার্তিকের মন বসে না ‘পুজোবার্ষিকীতে’। জানলা দিয়ে হাত বাড়ায় সে। ছোট্ট মুঠোয় ধরতে চায় রোদ্দুর।

Kashi Bose Lane

দুই দিদির শাসনকে সে আমলই দেয় না। কু-ঝিকঝিক গাড়ি ছাড়তেই তাঁর প্রকাণ্ড বর্মীবাক্সের ডালা খোলেন মা দুগ্গা। সবার হাতে ধরিয়ে দেন মুঠো মুঠো মৌরি, মিষ্টিমশলা, মুড়িলজেন্স, লাঠি ল্যাবেঞ্চুষ। খুদে গণশা একখানা ল্যাবেঞ্চুষ পেয়ে মহাখুশি। খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে। এ এক অনাবিল আনন্দময় দৃশ্য। আনন্দময়ী মা আসছেন যে।

এই বিশ্বজোড়া আকচা-আকচি, ঝগড়াঝাঁটি, রাগ-দুঃখের মধ্যেই আছে আনন্দের, হাসি-মজা-খেলার এক স্বপ্নজগৎ। আর আনন্দময়ী, লীলাময়ী মায়ের পুজোর দুনিয়া ভরে রয়েছেন আর এক লীলা। লীলা মজুমদার। যাঁর জীবনের পাকদন্ডী বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা আবিষ্কার করি এক সহজ সত্যির পথ। যার দুপাশে একরাশ খুশির চিরসবুজ গালিচা পাতা রয়েছে। সে পথে হাত ধরাধরি করে হাঁটে স্বপ্ন আর সত্যি। যে পথ ধরে খলবল করে চলেছে লখনা গাঁয়ের ছেলেপিলের দল। তারা জানে, লীলাবুড়ির গপ্পের টানে বড়লামার বেলুন ভাসতে ভাসতে গিয়ে ঠেকবে বাতাসবাড়ি। তারপর দুনিয়ায় আর খিদে থাকবে না, কষ্ট থাকবে না, ঝগড়া থাকবে না। কেউ কাউকে বকবে না। চোখ রাঙাবে না। অঙ্ক কষতে বলবে না। সাতের নামতা ধরবে না। শুধু থাকবে হাসি, খেলা, গান। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে নাচবে, গাইবে, ভাগ করে নেবে খাবার-দাবার।’

দুর্গাপুজোর আরও খরব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version