Home শরীরস্বাস্থ্য কৈশোর ডায়াবেটিস: শিশুদের অ-সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ইউনিসেফের উদ্যোগ রাজ্যে

কৈশোর ডায়াবেটিস: শিশুদের অ-সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ইউনিসেফের উদ্যোগ রাজ্যে

0

কলকাতা: শিশুদের মধ্যে অ-সংক্রামক রোগ (NCD) বিশেষত টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও যত্ন নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং আইপিজিএমইআর ও এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে রাজ্যের গ্রামীণ পর্যায়ে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করা হচ্ছে।

টাইপ ১ ডায়াবেটিস, যা সাধারণত শিশুকালেই ধরা পড়ে, মূলত প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। ফলে আক্রান্ত শিশুকে দিনে একাধিকবার ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়।

রাজ্যের উদ্যোগে ইউনিসেফের সহযোগিতা

জুলাই ও আগস্ট মাসে ইউনিসেফের কর্মকর্তারা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের শিশুদের ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন এবং আরও বড় পরিসরে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফের প্রধান ডা. মনজুর হোসেন এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে শিশুদের অ-সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের একটি মডেল তৈরি করছি। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ, আইপিজিএমইআর এবং এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের এই সহযোগিতার লক্ষ্য হল প্রত্যেক শিশুর জন্য সমানভাবে চিকিৎসা ও যত্ন নিশ্চিত করা।”

প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা সম্প্রসারণ

ইউনিসেফের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মীদের (চিকিৎসক, নার্স, এএনএম, আশা কর্মী, এবং কমিউনিটি হেলথ অফিসার) প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও অন্যান্য এনসিডি শনাক্ত করে তাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য রেফার করা সম্ভব হবে।

এই মুহূর্তে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান এবং এসএসকেএম হাসপাতালে এনসিডি ক্লিনিক চালু রয়েছে। সেখানে বছরে প্রায় ৬০০ শিশু চিকিৎসা পায়। আরও ১০টি জেলা হাসপাতালে এই ক্লিনিক চালু করার অনুমোদন মিলেছে এবং ভবিষ্যতে তা রাজ্যের সমস্ত জেলায় সম্প্রসারিত হবে।

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা

আইপিজিএমইআর/এসএসকেএম হাসপাতালের প্রফেসর ডা. সুজয় ঘোষ বলেন, “শিশুদের ডায়াবেটিস নির্ণয় এবং চিকিৎসায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ ধরা পড়ছে না। অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ওজন কমে যাওয়া এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ দেখে দ্রুত রেফার করা হলে অনেক শিশুর জীবন রক্ষা পাবে।”

ভারতের ইয়াং ডায়াবেটিক রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি এক লাখ শিশুর মধ্যে পাঁচজন টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যখন সমস্ত ক্লিনিক চালু হবে এবং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে, তখন আরও রোগী চিহ্নিত এবং চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এল স্বস্তিচরণ এবং ইউনিসেফ ইন্ডিয়া অফিসের স্বাস্থ্য প্রধান ডা. বিবেক বিরেন্দ্র সিংহ পশ্চিমবঙ্গের এই মডেলের প্রশংসা করে বলেন, “এই উদ্যোগ দেশের অন্য রাজ্যগুলোতেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ শিশুদের অ-সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় পশ্চিমবঙ্গকে পথিকৃৎ করে তুলেছে, যা সারা দেশে শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে একটি নতুন দিশা দেখাবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version