বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি বুধবার রাতে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভের আগুন। খুলনা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও সরকারি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল বুলডোজার
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার রাত ১১টার দিকে ধানমন্ডিতে মুজিবের বাড়ির সামনে ক্রেন ও এক্সকাভেটর এনে ভাঙচুর শুরু হয়। রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে বাড়ির একটি বড় অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে এই বাড়িতেই নিহত হয়েছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। পরে শেখ হাসিনা বাড়িটিকে সংগ্রহশালায় পরিণত করেন।
বিক্ষোভকারীরা এদিন শেখ হাসিনার ঘোষিত ভাষণের আগে থেকেই ধানমন্ডি এলাকায় জড়ো হয়। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রথমে তাণ্ডব চালানো হয়, এরপর সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে গভীর রাতে বুলডোজার এনে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
সুধা সদনেও বিক্ষোভ, আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাত সাড়ে ১০টার পর ধানমন্ডি ৫/এ-তে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদনে আগুন লাগানো হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার বিভিন্ন কক্ষে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
ধানমন্ডির নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়েছেন , ১০-১২ জন যুবক এসে সুধা সদনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আশপাশের বাসিন্দারা জল ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।
বিক্ষোভ ছড়ালো খুলনা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লায়
ঢাকার বাইরে খুলনায় শেখ হাসিনার কাকার বাড়ি ‘শেখ বাড়ি’-তে বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়ায় প্রাক্তন সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে।
‘প্রথম আলো’-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার রাত ৯টার দিকে খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা শেখ বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। সিটি করপোরেশনের বুলডোজার এনে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
কুমিল্লার মুন্সেফবাড়ি এলাকায় রাত ১টার দিকে প্রাক্তন সাংসদ বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া, ভোলার গাজীপুর সড়কে ‘প্রিয় কুটির’ নামে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি ও হাসিনার প্রতিক্রিয়া
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, “আজ রাতে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।”
শেখ হাসিনা তাঁর ভার্চুয়াল ভাষণে বলেন, “পাকিস্তানি সেনারাও ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে লুটপাট করেছিল, কিন্তু ভাঙেনি। আজ এই বাড়িটিকে কেন এত ভয় পাচ্ছেন?”
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পর ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র আকার ধারণ করেছে।