ঢাকা: তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সঙ্গে নমনীয় নয়, এবার দৃঢ় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। রবিবার রংপুরে এক সভায় এমনই বার্তা দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “তিস্তার ন্যায্য ভাগ নিশ্চিত করতে ভারতকে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে বাংলাদেশ।”
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন জলসম্পদ সংক্রান্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আগেও তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হবে ঢাকা। রবিবার সজীবের বক্তৃতায় সেই ইঙ্গিতই আরও স্পষ্ট হলো। সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, “তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী, তাই কোনো দেশের একক অধিকার থাকতে পারে না।”
তিস্তা নিয়ে বিতর্কের ইতিহাস
শীতকালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তার জল প্রায় শুকিয়ে যায়, যার ফলে কৃষি ও সাধারণ জনজীবন চরমভাবে প্রভাবিত হয়। কিন্তু বর্ষায় ভারত থেকে অতিরিক্ত জল প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি করে। এই সমস্যা সমাধানে ২০১১ সালে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছিল।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। মমতার যুক্তি ছিল, তিস্তার জল ভাগ হলে উত্তরবঙ্গের কৃষি বিপর্যস্ত হবে। তিনি বিকল্প হিসেবে তোর্সা ও রঙ্গিত নদীর জল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেই প্রস্তাব নাকচ করে।
বর্তমান পরিস্থিতি
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যের অনুমতি ছাড়া কেন্দ্র জলবণ্টন চুক্তি করতে পারে না। তাই দিল্লি চাইলেও পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতা থাকলে তিস্তা চুক্তি কার্যকর করা কঠিন।
তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবার এমন অবস্থান নিতে চায়, যাতে ভারত চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ইস্যু নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।