কুয়েতে অগ্নিকাণ্ডে ৪৫ জন ভারতীয় মৃত্যু হয়েছে। একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ভারতীয় শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছেন। উপসাগরীয় দেশগুলিতে এ ধরনের দুর্ঘটনার পর প্রায়শই শ্রমিকদের দুরবস্থার খবর সামনে আসে।
কেন ভারতীয় শ্রমিকরা উপসাগরীয় দেশগুলিতে যায়?
ভারত ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (GCC) দেশগুলির মধ্যে পুরনো সম্পর্ক রয়েছে। GCC-তে রয়েছে ছয়টি দেশ: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান, বাহরাইন, কাতার এবং কুয়েত। এই দেশগুলিতে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় কর্মসংস্থানের জন্য যান।
অভিবাসনের সংখ্যা
২০২২ সালে প্রায় ৯০ লক্ষ ভারতীয় GCC দেশগুলিতে বসবাস করছিলেন। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে সর্বোচ্চ ৩৫ লক্ষের বেশি ভারতীয় বসবাস করেন। সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লক্ষ, কুয়েতে ৯ লক্ষ, কাতারে ৮ লক্ষ, ওমানে সাড়ে ছয় লক্ষ এবং বাহরাইনে তিন লক্ষ ভারতীয় রয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসন
ভারত ছাড়াও, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের নাগরিকরাও এই দেশগুলিতে কাজের সন্ধানে যান। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, GCC দেশগুলিতে প্রায় ১৭ মিলিয়ন দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিক বসবাস করছেন।
কাজের ধরণ
অধিকাংশ ভারতীয় শ্রমিক ব্লু কলার কাজের জন্য উপসাগরীয় দেশগুলিতে যান। ব্লু কলার কাজ মানে শারীরিক শ্রমের কাজ। উদাহরণস্বরূপ, নির্মাণ সাইটে বা কারখানায় কাজ করা। কেরালার মানুষ ব্লু কলার কাজের জন্য বেশি যান, তবে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান এবং তামিলনাড়ু থেকে নির্মাণ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে।
কাফালা পদ্ধতি
GCC দেশগুলিতে অভিবাসী শ্রমিকদের কাফালা পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হয়। এতে শ্রমিকের ভিসা, যাতায়াত, বাসস্থান ও খাবারের খরচ নিয়োগকর্তা বহন করেন। কিন্তু এই পদ্ধতির কারণে শ্রমিকরা শোষিত হন। তাঁরা পাসপোর্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়োগকর্তার দখলে রাখে এবং প্রায়ই দেশে ফিরতে বা চাকরি পরিবর্তন করতে পারে না।
আরও পড়ুন। লোকসভার স্পিকার পদ নিয়ে টিডিপির বিশেষ শর্ত চাপ বাড়াল বিজেপির, এখন কী করবেন নীতীশ কুমার
আর্থিক কারণ
GCC দেশগুলির মুদ্রা ভারতীয় টাকার তুলনায় শক্তিশালী। যেমন, কুয়েতি দিনারের মূল্য প্রায় ২৭২ টাকা। এই কারণে শ্রমিকরা উপসাগরীয় দেশগুলিতে কাজ করতে আগ্রহী।
সম্পর্ক ও বাণিজ্য
ভারত ও GCC দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক গভীর। ২০২১ সালে GCC দেশগুলি থেকে ভারতে ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয়েছিল। ২০২২ সালে এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
ইতিহাস
ব্রিটিশ শাসনকাল থেকেই ভারত থেকে উপসাগরীয় দেশগুলিতে অভিবাসন হয়েছে। ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ শাসিত এডেনে প্রায় ১০,০০০ ভারতীয় ছিল। তেল আবিস্কারের পর উপসাগরীয় দেশগুলিতে কাজের জন্য অভিবাসনের সংখ্যা বেড়ে যায়।
বিদেশে চাকরি পেয়ে ভালো জীবনযাপনের স্বপ্নে অনেক ভারতীয় শ্রমিক উপসাগরীয় দেশগুলিতে পাড়ি জমায়। তবে কাজের শর্ত এবং জীবনযাত্রা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সরকারের উচিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করা। বিদেশে কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য বেশকিছু সুবিধা ও আইনি সহায়তার ব্যবস্থা থাকলেও অনেকে সে ব্যাপারে অজ্ঞ। ফলে বাড়ে বিপদ।